পিয়ানোটা নিয়ে বসে পড়ে রোজ অফিস ফেরত অবিনাশ। তথ্য-প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়র, চাকরি সূত্রে তার এখন হায়দরাবাদে পোস্টিং। সংসার নিয়ে মেতেছে দিব্যি। বাচ্চা মেয়ে মৌপিয়া বড়ো দুষ্টু হয়েছে। বয়সটাই দুষ্টুমির। অবিনাশের স্ত্রী, মনামিও হায়দরাবাদে এসে একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে। পাড়ার মধ্যেই ছোটোখাটো নার্সারি স্কুলে কর্মরতা। বাচ্চাটাকে দেখভালের জন্য ঘরে একজন মাসি রেখেছে।
মৌপিয়ার সারাদিন কাটে মাসির সঙ্গে। মাসি তদারকি করে ছোট্ট মেয়েটার। খেলনার পাহাড় ঘরময়। বাবা-মা সারাটা দিন বাইরে। তাই মাসির সঙ্গে পরিপাটি করে পুতুলের সংসার পেতেছে মৌপিয়া। খুব একটা কান্নাকাটি করে না সে এখন। সয়ে গিয়েছে সব। পুতুল, খেলনা, গাড়ি আরও কত আধুনিক রকমারি খেলনাপাতি। কোনওটি মা পুতুল, কোনওটি বাবা পুতুল। পুতুলের যত্নআত্তির শেষ নেই মৌপিয়ার।
এদিকে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে শ্রান্ত-ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয় অবিনাশ। অফিসে কাজের চাপ প্রচণ্ড। রাতেও তাকে নিয়ম করে অফিসের কিছু কাজ সারতে হয়। এমন রুটিনেই বাঁধা তার জীবন। মৌপিয়ার যত আবদার বাবার কাছে। মা স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরে সংসারের কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অবিনাশ কখন মৌপিয়ার খেলনার দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। মৌপিয়া নাড়িয়ে দিলে সম্বিৎ ফেরে অবিনাশের। চেনা রুটিনটা বেশ বদলে গিয়েছে এখন। মনামি তো সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ইদানীং কেমন যেন মনমরা অবিনাশ। মনে পড়ে যায় গাঁয়ে বিস্তৃত উঠোন, পথ-মাঠ-ঘাট, সব কিছু। গ্রামীণ জীবন আজও তাকে টানে। কোনও কিছু মনামির নজর এড়ায় না। আসলে এইভাবে কখনও ঘরবন্দি হতে হবে ভাবেনি অবিনাশ। সে ঘরবন্দি হওয়ার ছেলেও না।
দুনিয়াজুড়ে এখন চলছে লকডাউন। আমাদের দেশেও। হায়দরাবাদ শহরেও প্রথম দিকেই এমন ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু অফিস কাছারি খোলা ছিল। তবে এখন সর্বত্র বন্ধের চেহারা। তাই মৌপিয়ার সঙ্গেই সারাটা দিন কেটে যায় অবিনাশের। এতগুলো দিন এইভাবে বন্দিদশা আর ভালো লাগছে না অবিনাশের। কাজের মাসিও ইদানীং আসে না। সারাটা দিন তার অবসর। বিকালে ফ্ল্যাটের ছাদে ফ্যামিলি নিয়ে একটু সময় কাটায়। ব্যস, তারপর সেই ঘরবন্দি জীবনযন্ত্রণা!