এমনিতে ঘরটাতে একটা তক্তা ও আরেক পাশে একটা কম্পিউটার ছাড়া আর কিছু নেই। গৌতম তক্তাতে বসতে একটু ইতস্তত করল। ভদ্রলোক বলে উঠলেন ‘বসুন কোনও ব্যাপার না।' তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কলিগের সঙ্গে আগে কেউ দেখা করতে এসেছিল কি, জানেন কিছু?'
—কে আসবে? বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়া আর কেউ নেই। মায়েরও শুনেছি হাঁটুর অপারেশন হয়েছে।
—তাহলে আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন, ওনার বাড়ি থেকে আপনাকেই দেখাশোনা করবার দায়িত্ব দিয়েছে। আসলে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কাউকে জেলে দেখা করবার অনুমতি দেয় না। আপনি এই স্লিপটার একটা ফটো তুলে রেখে দেবেন। সব সময় তো আমি এখানে থাকব না। অন্য কেউ থাকলে এই স্লিপের ছবিটা দেখিয়ে বলতে পারবেন।' ভদ্রলোক একটা স্লিপ লিখতে লিখতেই কথাগুলো বলছিলেন। লেখা থামিয়ে গৌতমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওনার আধার বা ভোটার কার্ড কিছু আছে?'
—না, আমি তো খবর পেয়েই স্কুল থেকে সোজা চলে এলাম। ইনফ্যাক্ট আমি এখনও পর্যন্ত ওর বাড়িতে যাইনি। ভদ্রলোক আর কোনও কথা বাড়ালেন না। স্লিপটা গৌতমের হাতে দেবার সময় বললেন, ‘কী অদ্ভুত ব্যাপার বলুন, বাড়িতে কেউ নেই আর এদিকে...'
—কেউ নেই তা নয়, নিজের দাদা আছে, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের একটা অর্গানাইজেশনে কাজ করেন।
—তাহলে...
এবারের গ্রীষ্মের ছুটিটা কেমন যেন হঠাৎ করে পড়ে গেল। স্কুলের কিছু কাগজপত্রে সই করবার প্রয়োজন থাকায় হেডস্যার অরুণবাবু একদিন সকালে সবাইকে একটা জায়গায় ডেকে পাঠালেন। সেখানেই তাঁর মুখে গৌতম প্রথম সঞ্জীবের অ্যারেস্ট হবার ঘটনাটা শোনে। গৌতমের সঙ্গে উপস্থিত বাকি শিক্ষক বা শিক্ষিকারাও অবাক হয়ে যান। পুলিশ নাকি রাত দুটোর সময় সঞ্জীবের বাড়ির প্রাচীর ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকে তাকে অ্যারেস্ট করে।
সঞ্জীবের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাবার পর তার দাদা নিজের শালির সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। বিয়ের পরে জানতে পারে দাদার শালির মাথার কিছু গোলমাল আছে। দাদা ও বউদি সব কিছু জেনেও বিষয়টা লুকিয়ে যায়। বিয়ের পর জানাজানি হতেই অশান্তি আরম্ভ হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টা কোর্ট-কাছারি পর্যন্ত চলে যায়।