সাতডিহি গ্রাম থেকে নাইট শো সেরে ফিরছিল কমলা। ট্রেকারে গাদাগাদি যাত্রীর মধ্যে গা ঘেঁষাঘেষি করে কমলার পাশে বসে রসিক ধনঞ্জয় আর পেছনে সঙ্গতের বাজনদাররা। হারমোনিয়াম গলায় কানাই নেমে গেছে পথে। সেখান থেকে আদ্রা যাবে একটা যাত্রা দলের সাথে মহড়ায় বসতে। আদ্রার কাছেই এক গ্রামে তার বাড়ি। কমলার ঘর বলো, সংসার বলো, সবই রসিক ধনঞ্জয়ের দান। ঝুমুরের মরশুম ছাড়াও বাজনদাররা খেপ কাজের সুযোগ পায়। কিন্তু প্রধান শিল্পী ‘নাচনি’র নাচের বায়না না থাকলে, নাচ নিয়ে পড়ে থাকার উপায় নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধান ভানা,ধান-চাল সেদ্ধ করা, খড় কুচোনো, গরুর জাবনা তৈরি করা, উঠোন নিকোনো, ঘুঁটে দেওয়া– কাজের অভাব? ধনঞ্জয়ের বউ কমলাকে ডাকে ‘ঢেমনি’ বলে। খাবার দেয় ছুড়ে। তার নিড়ানো বা ভানা চাল অচ্ছুত নয়, বাগানের সবজি অচ্ছুত নয়, শুধু কমলা অস্পৃশ্য। হাড়ভাঙা খাটনির পর রাতে দু-চোখের পাতা এক হয়ে এলে, রসিক ধনার স্পর্শে জেগে উঠতে হয় প্রায় দিন। রক্ষিতা নাচনির দিনের বেলা ছায়া মাড়ানোও চলে না, কথা বলাও পাপ। কেবল অনুষ্ঠান থাকলে ছাড় থাকে। কিন্তু রাত্রিটা আর পাপের থাকে না। তখন রসিককে খুশি করাই তার একমাত্র কাজ। শরীর খারাপের ওজরটাও ধোপে টেকে না।

কমলার এবছরের মতো নাচের আসর শেষ। এখন ধান সেদ্ধ করার সময়। আরও হাজারটা কাজ। ধনার বউ অতসী ওকে দেখলে এক ঘটি জলও গড়িয়ে খায় না। ভুল হল। জল ছোঁয়া তো বারণ। হেঁসেলে ঢোকাও। কমলার কাজ উঠোন থেকে শুরু হয়ে সারা গাঁয়ে ছড়িয়ে আছে। অন্যের বাড়িও খেটে আসতে হয়। মজুরিটা ধনার সংসারের প্রাপ্য।

ট্রেকারে চাপাচাপি করে আসতে আসতে নিজের বারোমাস্যার কথাই ভাবছিল কমলা। এই যে ওর গায়ে গা লাগিয়ে যাত্রীরা বসে আছে, তারা বাড়ি ফিরেই স্নান করবে নিশ্চয়ই। গাড়িটা হঠাৎ জুরিডির হাটে থেমে গেল। সামনে রাস্তা আটকে অনেক লোক। তা হাটবারে ভিড় তো হবেই। কিন্তু এ তো জটলা বেধেছে। কিছু একটা হয়েছে। চড়নদাররা একে একে নামল। কমলাও। ওর ছোঁয়া বাঁচাতে জটলাটা একটু ফাঁক হয়ে গেল। হাটের প্রকাণ্ড অর্জুন গাছটার নীচে বসে আছে এক অশীতিপর বৃদ্ধা। সামনে ভিক্ষাপাত্র। নড়ার ক্ষমতা নেই। শরীর থরথর করে কাঁপছে। ‘ভিক্ষা দাও মাগো বাবারা’ নয়, মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসছিল ‘জল জল...।’

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...