২০১৬ সালের কথা। পল্লবী অফিসে এসেই নমিতাকে বলল, নমিতা, আমাদের কোম্পানির বানানো জিনিসগুলোর মার্কেট রিসার্চ করার জন্য আমেরিকার বাজারটা ঘুরে দেখা দরকার। আমি তো যাচ্ছিই, তোমাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে। কোম্পানির মার্কেটিং হেড পল্লবী বলল, সমস্যা হচ্ছে যে-শহরে আমরা যাব সেখানে আমি আমার পরিচিত ব্যক্তির কাছে গিয়ে উঠব, তোমার থাকার ব্যবস্থা আমি হোটেলে করিয়ে দেব। একলা থাকতে পারবে তো?
—তার প্রয়োজন হবে না ম্যাডাম।
শহরের লিস্ট-টার উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে নমিতা বলল, যেখানে যেখানে আমরা যাব সেখানে আমারও অনেক পরিচিত আছে। প্রায়শই তারা আমাকে ওখানে যেতে আমন্ত্রণ জানায়। আমি তাদের কাছেই থেকে যাব।
—তাহলে তো ভালোই হল। অবশ্য আজকাল প্রায় সকলেরই কেউ না কেউ পরিচিত আমেরিকাতে থাকেই, পল্লবী হাসল।
আমেরিকায় যাওয়াটা ব্যাবসার দিক থেকে খুবই লাভজনক হওয়ায় দুজনেই খুব আনন্দিত ছিল।
—আপনার কি মনে হয় না ম্যাডাম যে নিউইয়র্কে, আমাদের স্থায়ী অফিস থাকা দরকার? ফেরার পথে নমিতা প্লেনেই পল্লবীকে জিজ্ঞেস করল।
—হওয়া তো উচিত কিন্তু দেশের থেকে এখানে স্থায়ী সিনিয়র ম্যানেজার এবং স্টাফ পাঠানো খুবই খরচাসাপেক্ষ, পল্লবী উত্তর দিল।
—স্থায়ী স্টাফ পাঠাবার কী দরকার? কিছুদিনের জন্য একজন সিনিয়র ম্যানেজার এবং দু-তিনজন সহকর্মী পাঠিয়ে এখানকার লোকাল লোকেদেরকেই ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
—বাঃ ভালো বলেছ তো নমিতা, পল্লবী হাসল। এভাবে যদি চিন্তা করো, জীবনে অনেক উন্নতি করবে। আমেরিকা কেমন লাগল বললে নাতো?
—যা ভেবেছিলাম তার থেকেও ভালো। যাদের সঙ্গে ছিলাম তারা অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে। আপনার ম্যাডাম?
—ব্যাবসায় সাফল্য, সকলের সঙ্গে দেখা হওয়া, ঘোরাফেরা সবই ভালো ছিল কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে যদি জিজ্ঞেস করো তাহলে বলব কিছুই ঠিক যেন এনজয় করতে পারিনি। বাচ্চাদের কথা, ওদের বাবার কথা সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল। ওদের খুব মিস করেছি। পল্লবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
নমিতার বলতে ইচ্ছে করছিল যে, এই কটা দিন ওর জীবনের আসলে একটা স্বর্ণালি অধ্যায়। ভবিষ্যতের যে-চেহারাটা ও স্বপ্নেও কল্পনা করেনি, ওর রেনুদিদি সেই অজানা পাতাটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে ওর চোখের সামনে।