জানলার পাশ দিয়ে আদিম শীত এসে পড়ছে। ট্রেনের সাইড-বার্থের খিড়কি দিয়ে অদম্য শীতল হাওয়া মুছে দিচ্ছে অনুভবের বের না হয়ে আসা চোখের জল। ট্রেন কোন আদিম লগ্ন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে তা মনে নেই। আর জেনেই বা কি হবে! সকাল আটটার পর থেকেই বুঝতে পেরেছিল, এ বছরকার মতো সব সম্ভাবনা শেষ। কী কষ্ট করে কারখানার কাজ শেষ করেও পড়াশুনা করেছে নিজে নিজে!

বাবা আগেই গেছেন, মাও যখন চলে গেলেন তখন এক্কেবারে শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল অনুভব। একমাত্র মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওর জ্যাঠা। অবিবাহিত মানুষ, ওড়িশার রৌরকেল্লায় একলা থাকেন মেদিনীপুরের বাড়িঘর ছেড়ে। সেই মানুষটাই অনুভবের পিঠ হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, "চল, এখানে আর থাকতে হবে না। আমার সাথে ওড়িশায় যাবি চ। কারখানায় কাজ জুটিয়ে দেব, মাইনেপত্তর মোটামুটি দেয়। হাতখরচাটা তো হবে। আমার অবস্থা তো জানিসই, দুজনের খরচা চালানোর মতো নয়।"

অনুভব সবে তখন গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কলকাতায় এসে কোচিং সেন্টারে পড়াশুনো করা তখন ওই অবস্থায় সম্ভবপর ছিল না। উপায় বলতে অনলাইন কোর্স। ও একটু ইতস্তত করছিল দেখে জ্যাঠা ভরসা দিয়েছিলেন, "আরে তোর পড়া তো ফোনে বসেও হবে। আর তোর তো ভোটার কার্ড, আধার- সব তো বাংলারই। আমার ওখানে বসেও তো তুই নেট ভরিয়ে পড়ে নিতে পারবি। কাজও করবি, দেখবি মনটাও ভাল্লাগবে। ফর্ম বেরোলে এখানে এসে পরীক্ষা দিয়ে যাস।"

ধীরে ধীরে একটা বছর যে কীভাবে কেটে গেলো বুঝতে পারেনি অনুভব। কিন্তু বিগত এক বছরের সব পরিশ্রম, ঘামজলে ভেজা দিনরাত, মিথ্যে করে দিল খড়গপুরের কাছে এই অবরোধ। আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না ওর। সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটে অবধি দাঁড়িয়ে এখানে ট্রেন। লোকজনও তুমুল অস্থির হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে অন্য লোকেদের সাথে ঠিক করে নিয়ে গাড়িভাড়া করে গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও অনুভব এটা পারবে না। কারণ, পকেটের কাছে ওর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ। স্টেশনের অ্যানাউন্সমেন্টে পাতা কানের পাশ দিয়ে আগন্তুক হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে বুকের মধ্যে এক অজানা উদ্বেগ।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...