মনটা ভালো নেই দীপ্তির। ফোনটা বেজে চলেছে, কিন্তু তুলতে ইচ্ছে করছে না। তুললেই কথা বলতে হবে। কিন্তু যে ফোন করছে সে নাছোড়বান্দা। ছাড়বার পাত্র নয়। অগত্যা দীপ্তিকে ফোনটা ধরতেই হল, ‘হ্যালো!’
‘হাই, কে দীপ্তি?’
‘হ্যাঁ।’
‘বাবা! কী ব্যাপার তোর? দেড় বছর তোর সঙ্গে কোনও কন্ট্যাক্ট নেই। চিনতে পারছিস তো? আমি সূচি।’
‘হ্যাঁ-হ্যাঁ, গলাটা তোর একই আছে। কিন্তু এতদিন কোথায় ছিলি?’
দীপ্তি সাধারণ ভাবেই প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়, কিন্তু গলার স্বরে উৎসাহের অভাব লক্ষ্য করে সূচি।
‘কী হয়েছে রে তোর দীপ্তি? গলার স্বরটা কেমন যেন লাগছে। রাগ করিস না প্লিজ। আমারই দোষ, এতদিন তোকে কন্ট্যাক্ট করতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর, প্রতিটা মুহূর্তে তোর কথা আমার মনে হয়েছে। তোর জন্যই মলয়ের সঙ্গে আমার বিয়েটা হওয়া সম্ভব হয়েছিল।’
‘এখন তুই কোথা থেকে বলছিস?’
‘সবে পরশু দেশে ফিরেছি। জানিস-ই তো মলয়ের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম। ওর ওখানে কোম্পানির সঙ্গে দেড় বছরের কন্ট্র্যাক্ট ছিল। আমিও ওখানে একটা চাকরি খুঁজে জয়েন করে নিয়েছিলাম। তবে এত সব দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আমার মোবাইলটা শ্বশুরবাড়িতেই রয়ে গিয়েছিল। গতকাল শহরে পৌঁছেছি। আজ সকালে প্রথম তোকেই ফোন করলাম। এবার দেখবি একদিন তোর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছি। এখন বল তো, তোর বাড়ির সকলে কেমন আছে? কাকু-কাকিমা, সৌরভদা আর উজ্জ্বল?’
এক নিশ্বাসে সবকিছু বলে দেবার পর সুচি খেয়াল করে দীপ্তি যেন মুখে তালা দিয়ে রেখেছে। ওর কোনওরকম প্রতিক্রিয়া সুচি বুঝতে পারে না।
ধৈর্য হারায় সূচি, ‘কীরে কী হল তোর? তখন থেকে আমি একাই বকবক করে যাচ্ছি। তুই তো কিছুই বলছিস না... কী হয়েছে? সব ঠিক আছে তো?’ সূচির আওয়াজে ওর অধৈর্য ভাবটা স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
‘সবকিছু বদলে গেছে রে সুচি এই দেড় বছরে... বাবা আর নেই, মা বিছানায় পড়ে, প্যারালিসিস। দাদা সারাদিন মদ খেয়ে পড়ে থাকে। মদের নেশা ওকে গ্রাস করছে। বউদি ছোট্ট পারিজাতকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে...’