চুলের ব্যাবসা করবি?
প্রশ্ন শুনে বেটাকে আচ্ছা করে গাল পাড়ল তারাপদ। শ’কার, ব’কার, খ’কার, কিছুই বাদ গেল না। হয়তো মেরেই দিত। চুলের আবার ব্যাবসা কী? মশকরা করার জায়গা পায় না? আর পঙ্গু মানুষকে নিয়ে কেউ মশকরা করে? নেহাত পুরোনো বন্ধু তাই বেশি কিছু বলল না। বিড়ি ধরিয়ে রাস্তায় মন দিল।
বাসন্তী হাইওয়ে পিচঢালা, মসৃণ। পাশেই খাল। অবজ্ঞা, অবহেলা সয়েও একনিষ্ঠ। নিঃশব্দে বহন করে চলেছে কলকাতার নিকাশি। ওপারে ধাপা। আবর্জনার পাহাড়ে যেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া। সায়েন্সসিটি ব্রিজের নীচে পুবমুখী রাস্তাটাই বাসন্তী হাইওয়ে। সোজা চলে গিয়েছে বাসন্তী। সেখান থেকে মাতলা পেরিয়ে গোসাবা হয়ে সুন্দরবন, অথবা রাজারহাট-বসিরহাট-বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশ। মাঝে বানতলা, বামনঘাটা, ভোজেরহাট, ঘটকপুকুর, ভাঙ্গড়, মালঞ্চ। রাজনৈতিক মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে নিজগুণে। মারামারি, খুনোখুনি লেগেই আছে। অঞ্চলের বেশিরভাগটাই ভেড়ি। মিষ্টিতে যেমন পিঁপড়ে, মাছের ভেড়িতে তেমনি ক্রিমিনাল।
দুপুর সময়টা বড়োই গ্যাঁড়াকলের। নিষ্কর্মা মানুষকে উদোম করে দেয়। সকালটা কাটিয়ে দেওয়া যায় প্রাতঃকৃত্য, চুল-দাড়ি কাটা, স্নান, চায়ের দোকান, এটা-সেটা করে। খবরের কাগজ তো ত্রাতা মধুসূদন। ‘অনেক কাজ পড়ে আছে’ বা ‘যেতে হবে বহু দূর’ও মানানসই। কে আর সত্যান্বেষণ করছে! আঁধার তো খুবই সুবিধের। দিব্যি লোকচক্ষুর আড়াল হওয়া যায়। যা হোক দুটি পেটে ফেলে শুয়ে পড়লেই হল। ঘুম আসুক না আসুক, সুখনিদ্রার ভানে অসুবিধে নেই। ঘুম অবশ্য দুপুরেও দেওয়া যায়। তবে লাভ নেই। কর্মব্যস্ত ধরণীতে দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রা একান্তই দৃষ্টিকটু। নিষ্কর্মার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তা ছাড়া অত ঘুমও কি মানুষের আসে? কাঁহাতক ভালো লাগে মটকা মেরে শুয়ে থাকতে?
রোজ দুপুরে বানতলা বাজারে এসে বসতেই হয় তারাপদকে। গাছতলা, পুকুরপাড়, ভাঙা মন্দির, কোনওটাই তেমন জুতসই নয়। যেন আরও উদোম হওয়া। তার চেয়ে রাস্তার ধারই ভালো। গাড়িঘোড়া, মানুষজনের মাঝে দিব্যি মিশে থাকা যায়। চোখে লাগে না অতটা। ভরদুপুরে মানুষজন সামান্যই। গাড়িই ভরসা। গুনতি করে সময় মন্দ কাটে না। তবে মুশকিলও আছে। বেকার মানুষ পেলেই লোকের উপদেশ দেবার বাসনা উশখুশ করে। সেই কারণেই বটকেষ্টর, ‘চুলের ব্যাবসা করবি?’