এর পরে বহু চেষ্টা করেও যখন রোহনকে রাজি করাতে পারলাম না, তখন ফিরে গেলাম আবার ওই আগের প্রেমিকের কাছে অর্থাৎ অভিজিৎ-এর কাছে। অভিজিৎ সব কথা শুনে বলল, তুমি কি ভেবেছ যে আমি তোমাকে বিয়ে করব? রোহন তোমাকে প্রত্যাখ্যান করাতে তুমি আমার কাছে এসেছ। তাই তোমার জন্য আমার রাস্তাও এখন বন্ধ। বুঝলাম আমি আমার নিজের পায়েই কুড়ুল মেরেছি।
আপনিই বলুন স্যার, এ ভুলের কি প্রায়শ্চিত্ত হয়? এখন আমার জীবনটা মনে হয় রুক্ষ আর শুষ্ক। তাই মাথা উঁচু করে বাঁচার রাস্তাগুলোও আর খুঁজে পাচ্ছি না। কার জন্য, কীসের জন্য বাঁচব বলুন তো? আমার বাবা, মা, ভাই, বোনেরা ঝাঁসিতে থাকে। ওদের কাছেও আজ আমি বড়ো ছোটো হয়ে গেছি জানেন। ওরাও হয়তো আর আমাকে বিশ্বাস করে না।
—আমি তোমার সব ঘটনাটাই শুনলাম। কিন্তু এতে ভেঙে পড়লে তো চলবে না। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তুমি যদি আমাকে সাহায্য করো তাহলে আমি তোমাকে আবার পথের সন্ধান দিতে পারি। নিজের কাকার মতো ভেবে যদি আমার কথা শোনো, আমাকে সাহায্য করো, তাহলে হয়তো আমি তোমাকে আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তবে তোমার সহযোগিতা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। আমার মনে পড়ে ছাত্র জীবনে আমরা বন্ধুরা মিলে কিছু ওয়াগন ব্রেকার-কে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছিলাম। সে কথা অন্যদিন তোমাকে শোনাব। আচ্ছা, তুমি বলো তো, এই অফিসে এমন কোনও ছেলে আছে যে-তোমার প্রতি দুর্বলতা দেখিয়েছে কোনওদিন?
—আছে, কিন্তু আমি তাকে কখনও পাত্তা দিইনি।
—ছেলেটি কি সবদিক থেকে ভালো নয়?
—না, ঠিক তা নয়। আসলে আমি তখন অন্যের সঙ্গে এনগেইজড তাই।
—কী নাম বল তো? এত কষ্টের মধ্যেও স্নেহার মুখে যেন একটু মুচকি হাসির ঝলক দেখা গেল।
স্নেহা উত্তর দিল— রঘু।
—ও, তোমাদের ডিপার্টমেন্টের রঘু! ও তো খুব ভালো ছেলে শুনেছি। পড়াশোনায় যেমন ভালো, ব্যবহারের দিকেও তেমন ভালো। ও আবার কখনও প্রপোজ করতে পারে এমনটা কেউ দেখে বলতে পারবে না। আচ্ছা স্নেহা, সত্যি কথা বলো তো— রঘুকে তোমার অপছন্দ নয় তো? যদি রঘু তোমায় বিয়ে করতে চায়, তবে তুমি রাজি কিনা শুধু এটুকু বললেই চলবে।
স্নেহা কোনও উত্তর দিল না। অবনীবাবু বুঝলেন স্নেহার মত আছে। নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ। স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে বললেন— তুমি আজ যাও। খুব শীঘ্রই হয়তো আমাদের আবার দেখা হবে। আর ভেঙে পোড়ো না বুঝলে! অবনী কখনও হারতে শেখেনি জানো। তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আমি নিশ্চিত।
স্নেহা বেরিয়ে গেলে অবনীবাবু হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন রাত হয়ে গেছে। তাই অফিসে থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন। পরের দিন অফিসে পৌঁছেই মি. তেওয়ারির কাছে গিয়ে তেওয়ারির লুকোনো ক্যামেরায় তোলা মি. সন্দীপ চাড্ডার আপত্তিজনক ছবিগুলো দেখে ফিরে এলেন নিজের কেবিনে। ডেকে পাঠালেন বিনয় রাজদান-কে। তাঁকে বললেন— মি. চাড্ডাকে টারমিনেট করার চিঠিটা বানিয়ে চেয়ারম্যানের থেকে সই করিয়ে ওকে আজই হিসেবপত্র দিয়ে বের করে দিন।
চেয়ারম্যান-কে বলা হয়ে গেছে। সিকিউরিটিকে বলবেন যেন ওকে চিঠি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মেন গেটের বাইরে ছেড়ে আসে আর ভেতরে যেন ঢুকতে না দেয়।
রাজদান— স্যার, মনে হয় টারমিনেটের দরকার হবে না। ব্যপারটা জেনে গেলে ও নিজেই সম্ভবত ‘রেজিগনেশন’ দিয়ে চলে যাবে।
অবনীবাবু— আপনি যাবার পথে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র রঘুকে একটু পাঠিয়ে দেবেন তো?
‘ওকে স্যার’ বলেই মি. রাজদান বেরিয়ে যান কেবিন থেকে।