পর্ব ৩
বাড়ি ফিরেই তনু ওর মণিদাকে ফোন করে জব্বর খরটা দিল। মণি তো আত্মহারা! লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পা মচকে ফেলার জোগাড়। ভাবা যায় কড়কড়ে আড়াই লাখ জাস্ট আড়াই লাখ। খরচ খরচা বাদ দিয়ে আরামসে দেড় থেকে যাবে পকেটে। এত বড়ো দাঁও ওর জীবনে এই প্রথম।
—আরে মণিদা, কী হল শুনতে পাচ্ছ?
—হ্যাঁ হ্যাঁ বলো বলো....। হ্যাঁ নিশ্চয় নিয়ে আসবে সামনের রোববার। দেখবে ওদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। আর সঙ্গে করে ওরা যেন অবশ্যই নিজের নিজের লেখার স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে আসে। ওখান থেকেই ওরা কবিতা পাঠ করবে সাহিত্যবাসরে। আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে রাখো। দেখা হবে। বাই।
কোমর থেকে আলগা হয়ে ঝুলে পড়া লুঙ্গিটার, অবস্থা মণি এতক্ষণ খেয়াল করেনি। ভাগ্যিস ঘরে একলা ছিল। একহাত জিভ কেটে মণি যথাস্থানে বেশ শক্ত করে লুঙ্গিটাকে বেঁধে নিল। অনেক দিন চিকেন খাওয়া হয়নি। মণি বাজারের থলি হাতে, গায়ে কোনওরকমে একটা ফতুয়া গলিয়ে হাওয়াই চটি ফটফট করতে করতে দ্রুত বেরিয়ে গেল।
রাতে অনেক দিন পর ভরপেট মুখরোচক খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সিগারেটে লম্বা একটা টান— আহা কী আনন্দ! সামনের সুখের দিনগুলোর কথা ভেবে মশগুল হয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তাহলে ভগবান এতদিনে মুখ তুলে চেয়েছেন। এখন শুধুই সুদিন আর সুদিন। সামনে শুধু আলো আর আলো। ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’– যাকে বলে! তবে আনন্দের আতিশয্যে সেই রাতটি তার নির্ঘুম গেল। তা যাক। এরকম নির্ঘুম এই রাত তার একটা অমূল্য অর্জন বলেই সে ভেবে নিল।
সারাজীবন এইরকম নির্ঘুম কেটে গেলেও তার আপত্তি নেই এখন। কত হেনস্থা, কত কটূক্তি, যাচ্ছেতাই অপমান— কত কিছুই যে তাকে হজম করতে হয়েছে। তার স্বপ্ন এই ‘আসানসোলের দিনরাত্তির'-র প্রকাশনা নিয়মিত রাখতে গিয়ে, তা তার চাইতে আর বেশি কে জানে!