অমিয়র সুপুরুষ মুখে কে যেন এক দোয়াত কালি ঢেলে দিল। হাতের সিগারেটটা পুড়তে পুড়তে ছোটো হয়ে আঙুলে ছেঁকা লাগায়, সম্বিত ফিরে পেয়ে জানলার বাইরে ফেলে দিলেন ওটা। অনেকক্ষণ আর কোনও কথা বললেন না অমিয়। মনে হল যেন কোন সুদূর গ্রহে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁর এঞ্জেলকে।

—আইরিন, আমার স্ত্রী। বলতো তুমি এত বড়ো ডাক্তার। যমের মুখ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনো! আর তুমি নিজের মেয়েকে, তোমার এঞ্জেল-কে বাঁচাতে পারলে না? নিজের মেয়ের জন্য সামান্য সময় করতে পারলে না? সত্যি বৈদ্যনাথবাবু আমি পারিনি। সেদিন একটা বড়ো সার্জারি ছিল। একনাগাড়ে ১৪ ঘণ্টা আমরা দশজন ডাক্তার, নার্স লেগেছিলাম ওই রোগীকে বাঁচাতে। তাকে বাঁচিয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না আমার এঞ্জেলকে রক্ষা করতে। আমার কোলেই মাথা রেখে সে চলে গেল! আমিয়বাবু একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ করে গেলেন।

বৈদ্যনাথবাবু কোমল কণ্ঠে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলেন, 'তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারও কোনও কথা চলে না ভাই।'

অমিয় ফুঁসে উঠলেন। “কিন্তু তাঁর ইচ্ছা কী ছিল? আমায় একেবারে রিক্ত, শূন্য করে দিতে? আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চেয়ে রইলেন বৈদ্যনাথবাবু আরও কিছু সর্বনাশের খবরের জন্য।

—বৈদ্যনাথবাবু, আমাদের হিন্দু দর্শন বলেই খালাস— যার যাবার সময় হবে সে যাবেই। কিন্তু আমি যে সেই দর্শনে বিশ্বাসী নই। আমার শিক্ষা সেবা। আর রোগের সঙ্গে লড়াই করে রোগীকে বাঁচানোই আমার দীক্ষা। আমার শিক্ষা হার না মানার। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি হেরে গেলাম। আমি আমার স্ত্রী আইরিনের ক্যান্সারের জংধরা ফুসফুস কেটে বের করতে পারলাম কই? বললে বলতে আবেগে অমিয়র স্বর রুদ্ধ হয়ে গেল। চশমার আড়ালে জ্যোতির্ময় চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেল। মুখ দিয়ে আর কথা বের হল না।

সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে না পেয়ে বৈদ্যনাথবাবু এগিয়ে এসে তার পিঠে একটা হাত রাখলেন। অমিয় দু'হাতে ধরে চশমা নামিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে কাচ পরিষ্কার করে, একবার চোখমুখেও বুলিয়ে নিলেন। পরে খানিকটা সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন— সেদিনও একটা বড়ো অপারেশন ছিল— সকাল ৮ টায় শুরু করে রাত ৯টায় শেষ করেছিলাম। আইরিনের শরীরটা ভালো ছিল না। আমার জুনিয়র একজন ডাক্তারকে সমস্ত নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলাম আমার বাড়িতেই। অপারেশন শেষ করেই ছুটেছিলাম বাড়ি। পথেই টেলিফোন এল, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়াতে আইরিনকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। গাড়ি ঘুরিয়ে গেলাম নার্সিংহোমে। আইরিন তার বড়ো বড়ো নীলচে চোখ দিয়ে আমাকে দেখল। ঠোঁট নড়ল, কিন্তু কথা বলতে পারল না। আমি বারণ করলাম কথা বলতে। ওর কষ্ট হবে। আমি জানি ও কী বলতে চায়। সারারাত শ্বাসকষ্টে ঘুমাতে পারেনি ও। ভোররাতে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সে ঘুম আর ভাঙেনি! এবারে অমিয়নাথের স্বর কেঁপে কেঁপে একেবারে বন্ধ হয়ে গেল।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...