সকলেই হতবাক। কেউ আগে থেকে মুখ খুলতে রাজি নয়। আজকের দিনে এমন কথা কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারে তা বাড়ির সদস্যরা কেউ ভাবতেই পারছিল না। অসম্ভব অবাস্তব ঠেকছিল কথাটা। ভাবলেশহীন হয়ে সবাই শিবনাথের দিকে এক দৃষ্টে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল। চোখে-মুখের অভিব্যক্তি দেখে প্রতীতি হচ্ছিল যেন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিষেধ। যদিও বা কেউ দিতে চায় তাহলে হয়তো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে আসবেন এই ধরিত্রীর বুকে বাধা দেওয়ার অছিলায়।
শিবনাথ ক্রমশই অধৈর্য হয়ে উঠছিল। সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে— তোমরা সকলে চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো।
—আজকে ওদের বাড়িতে কাজ। মা এগিয়ে এসে জবাবদিহি করেন।
—কাজ? কীসের কাজ? শিবনাথের মনে অপার কৌতূহল।
—চিঠিতে তোকে সবকিছু বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছিল। ছোটো বোন কৃষ্ণা বলে ওঠে, তুই পাসনি আমাদের লেখা সেই চিঠি?
—না, সম্প্রতি আমি তোমাদের একটিও চিঠি পাইনি। যেটা পেয়েছিলাম তা প্রায় বাইশ-পঁচিশ দিন আগের। তাতে বিশেষ কোনও সংবাদ ছিল না। গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে শিবনাথের স্পষ্ট জবাব।
—অতনু আর নেই আমাদের মধ্যে। ও মারা গিয়েছে। অগত্যা কৃষ্ণা বলতে বাধ্য হয় আজ ওর পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।
—অতনু মারা গিয়েছে? এইসব কি বলছিস তুই? শিবনাথের মনে ঘোর অবিশ্বাস।
কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্র মনে হয়েছিল যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। শিবনাথের বোধগম্য হচ্ছিল না। অবিশ্বাস্য লাগছিল। বোধহয় এর চেয়ে অবাক হওয়ার মতো দুঃসংবাদ সংসারে আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না। অতনুর মুখচ্ছবিটা জ্বলজ্বল করে তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনে হয় অন্ধকার কোনও প্রেক্ষাগৃহে বসে সে ছায়াছবি দেখছে। একমনে সে তখন অতনুর কথাই চিন্তা করতে থাকে। নিথর নিস্পন্দ জড়বৎ হয়ে শিবনাথ কেবলই ভাবতে থাকে কিছুক্ষণ আগের দেখা অতনুর কথা। অতনুর আসল পরিচয়টা কী তাহলে— সে ছায়া না কায়া? কিছুক্ষণ আগেও সে অতনুর মুখোমুখি বসে গল্প করে এসেছে। কথাচ্ছলে রাঁচির কত অজানা তথ্য সে জানতে পেরেছে। এগুলো কী সব অলীক? একে একে অতনুর মুখে বলা কথাগুলো স্মরণ করে সে রোমন্থন করতে থাকে। রহস্য তবু রহস্যই থেকে যায়। মৃত্যুর কূলকিনারা খুঁজে পায় না শিবনাথ।