এদিকে অসহিষ্ণু কুহেলি আবার জিজ্ঞেস করল, ‘তারপর’?
—তারপর আর কী? ভাবলাম একটা সন্তান হলে হয়তো আমার স্বামীর একটু সুবুদ্ধি আসবে। এই নিয়ে কথাও বললাম একদিন ওর সঙ্গে। কিন্তু ওর কাছে পরিবারের কোনও মূল্য নেই। সন্তান ও চায় না। একটা জিনিসই ও বোঝে, ভালোবাসে, পূজা করে— সেটা হল টাকা। এরপর আর সময় নষ্ট না করে একদিন রাতের অন্ধকারে, সবাই যখন পার্টিতে মদ আর মেয়ের নেশায় চুর, আমি পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে আসি। সেই থেকেই বাপের বাড়িতে আছি।
কুহেলি কী বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ছোটোবেলার রীতা আর আজকের রীতার মধ্যে কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছে না। কী করে সেই রীতা হারিয়ে গেল? কোথায় গেল? কার দোষে গেল ?
কুহেলির মনে পড়ে ছোটোবেলায় ওর মা সবসময় বলত, “টাকা পয়সাটাই সব নয়'। কিন্তু আজ রীতার মুখোমুখি বসে মনে হচ্ছে, “সত্যি কি তাই? আজ যদি রীতা কোনও বড়োলোক বাবা-মা'র একমাত্র মেয়ে হতো তাহলেও কি রীতার ভাগ্যটা এরকমই হতো? ওকে কি টাকার অভাবে পড়াশোনা শেষ না করেই একজন লম্পটকে বিয়ে করতে হতো? আর ওর স্বামীও কি সাহস পেত রীতার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করার ?'
—তাহলে এখন তুই কী করছিস? পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছিস? নাকি চাকরি করছিস?
—কোনওটাই করছি না রে। ভীষণ ভাবে একটা চাকরি খুঁজছি। বাড়িতে কাজের লোক ছাড়িয়ে আমার মা এখন আমাকে সেই জায়গায় নিয়োগ করেছে। আর পাড়ায় কয়েকটা টিউশনি করে মায়ের হাতে আমার খাবার খরচটা তুলে দিই। তা না হলে মা আমাকে আবার সেই স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেবে।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ দু'জনেরই মুখে কোনও কথা নেই। আবার নীরবতা ভাঙল রীতা। ‘আজকে একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে কলকাতা এসেছিলাম। প্রতি মাসেই তো এরকম কত ইন্টারভিউ দিচ্ছি। কিন্তু...।'
কুহেলি কী যেন ভাবল। ওর মনে পড়ল বেশ কয়েকদিন আগে ওদের অফিসেই একজন রিসেপশনিস্ট-এর প্রয়োজন ছিল। সুব্রতদা, ওদের ম্যানেজার, জিজ্ঞাসা করেছিল ওর চেনাজানা কেউ আছে কি না। কুহেলির জানাশোনা কেউ ছিল না, তাই কারও নাম বলতে পারেনি। কয়েকদিন আগে রীতার সঙ্গে দেখা হলে ও রীতার নামটাই বলে দিতে পারত। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আবার রীতাকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কী রকম চাকরির চেষ্টা করছিস?'