ঋতমের মায়ের কথা শুনে স্বগতোক্তি করলেন কাকলি। ইস্...স্...স্... সব আমার জন্য। মনে মনে ভাবতে থাকলেন কী অসম্ভব মনের জোর মহিলার। একজন মা তার বাচ্চার কথা ভেবে কী না করতে পারে! শরীরের সাথে নিরন্তর লড়ে যাওয়ার পরেও শুধুমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সব সইছেন।
“কিছু বললেন?”
“না না। আপনি বলুন। তারপর?'
‘তারপর আর কী! খাওয়ার সংস্থান-ই নেই তো বাড়ি ভাড়া কী দেব? বাড়ি ছেড়ে দিতে হল। থাকব কোথায়? খাব কী? আমার ঋতমের কী হবে, ছুটলাম দীনদয়ালবাবুর বাড়িতে। ওনার স্ত্রী মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন। কী করব, দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বড়ো রাস্তায় এসে পড়তেই একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল। ব্যস আর কিছু জানি না।
জ্ঞান ফিরতে দেখলাম হাসপাতালের বেড-এ শুয়ে আছি। মাথার সামনে জনাচারেক লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে গেরুয়া বস্ত্র পরে। বাচ্চাটার কথা মনে পড়তেই তাড়াহুড়ো করে উঠে বসতে যাচ্ছি তখন তারাই জানাল ও ঠিক আছে। ব্যস তখন থেকেই ওনাদের এই আশ্রমে। গুরুজি আমার ছেলেকে খুব ভালোবাসেন। উনি-ই বরাবর বলে এসেছেন, যিনি জীবন দিয়েছেন, তিনিই আহার জোগাবেন। আশ্রমে মহিলাদের সঙ্গে আমিও হস্তশিল্পের কাজ করি। ভালোই ছিলাম, অসুখটা না হলে।”
কাকলির হাতটা তখনও শক্ত করে চেপে ধরে রয়েছেন। কাকলিদেবী। হয়তো আপনত্ব খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু সবটা জানলে কী এভাবে আঁকড়ে ধরবেন?' শিউরে ওঠেন কাকলি। উঠে দাঁড়ান।
'কী হল?”
‘না কিছু না, কাল আমি আবার আসব।'
আশ্রমের লোকেদের সঙ্গে কিছু কথা বলে কাকলি বাড়ি ফিরে গেলেন।
সেদিন স্বামী নীহারেন্দু রায় ফিরলে খাবার টেবিলে, কথাটা বলেই বসলেন কাকলি।
‘তোমার ছেলে একেবারে হুবহু তোমার মতোই হয়েছে।'
‘আমার ছেলে? পাগল-টাগল হলে নাকি। রাত দুপুরে কী ঠাট্টাতামাশা নিয়ে পড়লে বলো তো?”
“আমি একটুও মজা করছি না। আজ ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল। ও যখন রুমে ঢুকল, একবার তো মনে হল তুমিই ঢুকছ। চমকে উঠেছিলাম। অবিকল তোমার মতো।'