ওর চেয়ে মূল্যবান উপহার আর জীবনে পাইনি বিশ্বাস করুন। অবশ্য আগাম আরও একটা মহামূল্যবান উপহার পেয়ে.....'
থেমে যান কাকলিদেবী।
‘থেমে গেলেন কেন? বন্ধু ভেবে না হয় বললেন-ই।' জানার জন্য উৎসুক হয়ে ওঠেন কাকলি।
আবার বলতে শুরু করলেন কাকলিদেবী। 'ছবিটা দেখে এতটাই আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম যে, আত্মহারা হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। তারপর সমস্ত পৃথিবী ভুলে শরীরী খেলায় মেতে উঠেছিলাম দুজনে।' কাকলির চোখে পড়ে, কথাগুলো বলতে বলতে কাকলিদেবী কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন। দু-চোখ জলে ভর্তি। কাকলিদেবীর হাতের উপর হাতটা রেখে খানিক বল জোগান কাকলি ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মালকিন।
ধাতস্থ হতে খানিক সময় লাগে কাকলিদেবীর। ঘরটিতে কেবল দুজন। কেবল দুজনের নিঃশ্বাস ও ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দ। নিস্তব্ধতা ভেঙে কাকলি-ই বলেন, ‘তারপর?’ শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নেন ঋতমের মা কাকলিদেবী।
তারপর আবার বলতে শুরু করেন, ‘সেদিন ওই ঘটনার পরে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করছিল মনের মধ্যে। তখন ও-ই সামলেছিল আমাকে। বুঝিয়েছিল আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি কাকলি। ভালোবাসা তো কোনও অপরাধ নয়। তাছাড়া আর কদিন বাদেই তো আমাদের বিয়ে। সেদিন ওঁর কথায় আমিও ভুলে গিয়েছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম ঠিকই তো বলছে, আর কয়েকদিনই বাকি আমাদের বিয়ের। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস দেখুন তার চারদিন পর থেকেই মানুষটার আর কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না। বাবা বহু চেষ্টা করেছেন কিন্তু...।'
‘ওনার অফিসে খোঁজ করেননি?”
“বাবাকে নিয়ে সেখানেও গিয়েছিলাম। তারাও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। সেই দিন থেকে নাকি আর অফিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি। ভেবেছিলাম ঠিক ফিরে আসবে। মনের মতো কিছুই ঘটল না। উলটে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বুঝতে পারলাম কনসিভ করেছি। প্রথমটা ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পেটের সন্তানকে নিজে হাতে খুন করব, না এটা আমি কোনওমতেই পারব না। নীহার ফিরে এসে যদি জবাব চায় কেন এমনটা করলাম। তখন কী জবাব দেব আমি। বাবার কথা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। বাবা বারবার বউদিকে দিয়ে প্রেসারাইজ করার চেষ্টা করছিলেন। সমাজে বাবার একটা নাম আছে, প্রতিপত্তি আছে। সেগুলো বাবা কোনওমতেই খোয়াতে রাজি নন। আর আমিও আমার সিদ্ধান্তে অনড়। সে যে কী ভীষণ রকম অশান্তি শরীরে মনে আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।' বলতে বলতে হঠাৎই হাঁফাতে শুরু করেন কাকলিদেবী। সামনেই কাচের গ্লাসে রাখা জল এগিয়ে দেন ম্যাডাম। ঢকঢক করে খানিকটা জল খাওয়ার পর খানিক স্বস্তি পান তিনি।