এবার যাত্রা আমাদের আগামী চারদিনের বাসস্থান শ্রীনগর-মুখো। যাত্রার প্রাক্কালে রাস্তা-ধারের স্টল থেকে এখানকার বিখ্যাত পানীয় ‘কাওয়া’ পান করে নিলাম। কাওয়া হল সবুজ চা পাতা, এলাচ, জাফরান আর বিভিন্ন বাদামের গুঁড়োর মিশ্রণকে জলে ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করা। শীতের দেশে এই পানীয় শরীরে উত্তাপ দেয় বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।
শ্রীনগর
পহেল গাঁও থেকে শ্রীনগর মাত্র ৫৮ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথ হওয়ায় মাঝে মাঝেই থামতে হয় চা-জলখাবার বা বাথরুম ইত্যাদির জন্য। তাই বেশ সময় লেগে গেল। পথে পড়ল ৭১৯৮ ফুট উঁচু ২.৮৫ কিলোমিটার লম্বা জওহর টানেল। এই টানেলটি বানিহাল গিরিপথের নীচ দিয়ে তৈরি হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। পরের বছর ১৯৫৬ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে এই টানেল-পথে বছরের সব সময় মোটরগাড়ি যাতায়াত শুরু হল। রাস্তায় পাহাড়ের গায়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সন্ধ্যার ঠিক আগে শ্রীনগরের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেলাম। রাস্তার দুধারে বিশালকায় চিনার গাছগুলো দেখে রতন চেঁচিয়ে উঠল, “এ যে ক্যালিফোর্নিয়ার রেড-উড গাছের মতো মোটা দাদা।'
আমি হেসে বলি, ‘প্রায়! তবে ওখানের গাছগুলো আরও বেশি মোটা আর উঁচু। এক একটা বড়ো চিনার গাছের গোড়ার ব্যাস চার-পাঁচ ফুটের মতো আর লম্বায় ৭০-৮০ ফুট উঁচু। এদের স্থানীয় ভাষায় ‘বুয়েন' বলে। কাশ্মীরিরা চিনার বা ‘বুয়েন’কে গর্বের সঙ্গে ওদের সংস্কৃতির অংশ মনে করে। গাছগুলো বাঁচেও অনেক দিন। শালিমার বাগে একটি মোটা চিনার গাছ দেখলাম, বয়স নাকি ৩০০ বছরের উপর।
শ্রীনগর শহর জম্মু-কাশ্মীরের বৃহত্তম আর জনবহুল শহর। শঙ্করাচার্য পর্বত আর হরি পর্বতের মাঝখানে ডাল, উলর, আনছর, নিগেন, গঙ্গা-বাল ইত্যাদি হ্রদ বেষ্টিত ছবির মতো সুন্দর এই শ্রীনগর শহর সমুদ্রতল থেকে প্রায় দু'হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। এই শহরের যেখানেই যাওয়া যাক সেখানেই ঝিলম নদী, ডাল বা অন্য কোনও লেকের দর্শন পাওয়া যায়। পুরাকালে ঝিলম নদীর একটি সুন্দর নাম ছিল বিতস্তা, স্থানীয় ভাষায় এর নাম ভ্যায়ে-ত। পশ্চিম হিমালয়ের ‘ভেরি-নাগ” নামক হিমবাহ থেকে এর জন্ম আর পথে অসংখ্য ছোটো নদী-নালা মিলে একে পুষ্ট করেছে। শ্রীনগর ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ। মাত্র ২৯৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ।