এরপর আমাদের গন্তব্য কিছুটা দূরে নেতাজি চক হয়ে গঙ্গার তীরে প্রাচীন চণ্ডীমন্দির। গঙ্গা অবশ্য ওখান থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বিশাল চড়ায় খেতের সবুজ আর সরষে ফুলের বাসন্তী রঙের অদ্ভুত মনভোলানো শোভা। মন্দিরের প্রাঙ্গণ বেশ প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন। গুহার মধ্যে চণ্ডীমাতার অবস্থান। মূর্তি বলে কিছু নেই। একটি বিশাল রৌপ্যনির্মিত নয়ন। নয়নতারাটি মনে হল সোনার। চারিদিকে পাহাড়ের কোনও চিহ্ন নেই। কেবলমাত্র ওইখানেই একটি পাথরের ঢিবি এবং তার মধ্যে গুহা। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এইখানে মায়ের অবস্থান। উপরের তলায় কালী ও শিবমন্দির। স্থানটি বেশ নিরিবিলি, আমরা বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলাম।
পরের দিন সকাল আটটায় তৈরি হয়ে, হোটেল থেকে জামালপুরের পথে রওনা হলাম। তারপর ট্রেন ধরে সুলতানপুর স্টেশনে নামা হল। একটি চায়ের দোকানে চা খেয়ে, সেই দোকানেই আমাদের মালপত্র রেখে রিক্সা চড়ে যাওয়া হল গঙ্গার ধারে আজগৈবিনাথ শিবমন্দির দর্শন করতে। গঙ্গার মাঝে একটি টিলার উপরে আজগৈবিনাথ অর্থাৎ শিবের মন্দির। গঙ্গায় বিশাল চড়া পড়েছে, তাই হেঁটে চড়া পেরিয়ে মন্দির যাওয়া যায় আর বর্ষাকালে নৌকো করে যেতে হয়। বর্তমানে পুল তৈরি হয়েছে মন্দিরে যাওয়ার জন্য। গঙ্গার চড়ায় মাঘীপূর্ণিমার মেলা বসেছিল, সেই ভাঙা মেলার বেশ রেশ তখনও রয়ে গেছে। অনেকেই গঙ্গায় স্নান করছেন। মন্দিরের বিপরীতে একটি টিলার উপরে সুন্দর স্থাপত্যের একটি মসজিদ দেখলাম। তারপর আমরা চড়া পেরিয়েই মন্দিরে পৌঁছোলাম। লোহার সেতুতে যুক্ত রয়েছে পার্বতীমাতার মন্দির। তাছাড়া নানা দেবীর মন্দির রয়েছে সারা পাহাড় জুড়ে। পার্বতীদেবী দর্শন করে পাহাড়ের মাথায় উঠে আজগৈবিনাথের লিঙ্গ মূর্তি দর্শন করলাম। এরপর গৌরীমাতার মন্দির দর্শন করলাম। সারা পাহাড়টির গায়ে নানা মূর্তি খোদিত। অপূর্ব শিল্প কাজ। বড়ো বড়ো প্যানেলে (পাথরের) হরগৌরী নানা রূপে নানা ভঙ্গিমায় খোদিত রয়েছে। অসাধারণ সৃষ্টি, নজর কাড়া। তাছাড়া নৃসিংহদেব, নারায়ণ, ক্লান্ত শয়নে গর্ভবতী উমা প্রভৃতি অনন্য সাধারণ শিল্পকীর্তি। ফেরার সময় পুল হয়েই এলাম। দেখলাম গঙ্গার চড়ায় অপূর্ব বর্ণালী, আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ-হলুদের লহরা পেন্টিং।