কুম্ভলগড়রাজস্থান যাচ্ছেন? তাহলে সেই ছকে বাঁধা চেনা সফর কেন? ছক ভেঙে এবার ঘুরে আসুন কুম্ভলগড়। এক রোমাঞ্চকর সফরের সাক্ষী থাকবেন আপনি। মরুপ্রদেশের ডেস্টিনেশন মানেই ভেসে ওঠে, প্রান্তর জোড়া বালির রাশি আর ইতস্তত কাঁটাঝোপ। কিন্তু কুম্ভলগড় শুধু এটুকুই দেয় না। আপনার সফরে যোগ হবে আরও কিছু অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার টানেই আজ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পাড়ি জমাচ্ছেন কুম্ভলগড়ের উদ্দেশে।
উদয়পুর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান, সমুদ্রতল থেকে ১০৮৭ মিটারের উচ্চতায়। আরাবল্লি রেঞ্জের সবটুকু সুষমা আর রাজকীয় ঐতিহ্যের বুনিয়াদে গড়ে উঠেছে এই আস্ত শহর। দুর্গ, প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য, নিমেষে মনভালো করে দেওয়া ঝিল– সেই সঙ্গে রাজারাজড়াদের জীবনশৈলী ও ইতিহাসের উজ্জ্বল পটভূমি, এর ছত্রে ছত্রে গাঁথা। সব মরশুমেই এখানে পর্যটকদের যাতায়াত লেগে থাকে, তবে সবচেয়ে উপভোগ্য বোধহয় বর্ষাকাল ও শীত।
উদয়পুর থেকে প্রাইভেট গাড়ি বুক করে পাড়ি দিতে হয় কুম্ভলগড়। দেখার জায়গা প্রচুর। কুম্ভলগড় দুর্গটাই যথেষ্ট দর্শনীয়। রয়েছে হামির কি পাল, কুম্ভলগড় ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, হলদিঘাটি মিউজিয়াম –সবই ঘুরে দেখার মতো।
রাজস্থানের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত কুম্ভলগড় নামক এই কেল্লার প্রাকার, চিনের প্রাচীরের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসাবে পরিচিত। দেড়শো কিলোমিটার এর ব্যাপ্তি। এই অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, আবিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। মূলত আমেরিকান, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ও ইটালিয়নরা বেড়াতে আসেন কুম্ভলগড়ে।
বলা হয়, কুম্ভলগড়টি তৈরি করেছিলেন মেওয়ারের রাজা রণকুম্ভ। এই কেল্লা মেওয়ারের সংকটকালীন অবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এটি মহারানা প্রতাপের জন্মস্থানও। এই কেল্লাটির অন্য নাম ‘অজেয়গড়’ কারণ এটি জয় করা এক কথায় অসম্ভব ছিল। এর নির্মাণকার্য সম্পন্ন হতেই ১০ বছর সময় লেগেছিল।
কেল্লার প্রবেশদ্বার, প্রাচীর, জলাশয়, গুপ্তপথ, মহল, স্তম্ভ, সবই ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে আজও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। প্রায় ৩৬ কিমি বিস্তৃত এক প্রচীরের বেষ্টনিতে ঘেরা কেল্লা। এটিকে গ্রেট ওয়াল অফ ইন্ডিয়াও বলা হয়। ১৫ টাকা মূল্যে টিকিট কেটে ঢুকতে হয় কেল্লায়। ঢোকার সময় সকাল ৬টা থেকে। ২০১৩ সালে এটিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭-টা থেকে ৮-টা লাইট অ্যান্ড সাউন্ড উপভোগ করাটাও একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা। এর দ্বারা কুম্ভলগড়ের পুরো ইতিহাস জানা হয়ে যায়। কুম্ভলগড় বেড়াতে এলে, ৪৮ কিমি দূরত্বে হলদিঘাটি ও ৬৪ কিমি দূরে অবস্থিত রনকপুরের জৈন মন্দিরটি অবশ্যই দেখে আসবেন।