বিকেল সাড়ে চারটের সময় দমদম এয়ারপোর্ট থেকে উড়োজাহাজ ডানা মেলল আকাশে, গন্তব্য বাংলাদেশের Bangladesh ঢাকা বিমানবন্দর। চল্লিশ মিনিটের আকাশ যাত্রা। ৫টার মধ্যেই আকাশযান জিয়া বিমানবন্দরে অবতরণ করল। আইনি বেড়াজাল পেরিয়ে বুক করে রাখা গাড়িতে ওঠা হল। আমাদের দশজনের দল, সবই মহিলা। দলনেত্রী ‘ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল’ খ্যাত চিত্রা দেব।
ঢাকা শহরের আলোকসজ্জা দেখতে দেখতে হোটেলে পৌঁছে গেলাম। প্রথম দিন সকালে আমরা ওই গাড়িটাকে দশ দিনের জন্য বুক করে নিলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে সোনার গাঁও-এর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া গেল। পথে খুব জ্যাম, ধীরে ধীরে গাড়ি এগোচ্ছে।, পথে পড়ল ‘লাঙল বন্ধ’ সেতু, শীতালাক্ষী নদী, পথ সবুজ সুন্দর, দু’ধারে সবুজ গাছের গার্ড অব অনার। ড্রাইভার পথ ভুল করে আমাদের মেঘনার তীরে নিয়ে এল। তাতে অবশ্য আমাদের লাভই হল। ভয়ংকরী মেঘনার রূপের কথা শুধু বইতেই পড়েছি, এবার চাক্ষুষ করলাম।
ক্রমে পৌঁছোনো গেল সোনার গাঁও-এ। সোনার গাঁও অতীত বাংলার একাংশের রাজধানী ছিল। সোনার গাঁওয়ের বর্তমান দ্রষ্টব্য একটি বিশাল জমিদার বাড়ি। সেখানে এখন বাংলাদেশের লোকশিল্পের মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে। সোনার গাঁও-য়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হল ধবংসপ্রাপ্ত একাধিক অট্টালিকা। ওইসব প্রাসাদের অন্দরে সুন্দর নাচঘর, শিব মন্দির। ষোলো শতকের শেষার্ধে বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম, ঈশা খাঁর আমলে সোনার গাঁও সমৃদ্ধির শিখরে ওঠে। তখনকার বৈভবের স্মৃতির ভারই বহন করছে এইসব অট্টালিকাগুলি। মুঘল আমলে ঢাকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘সোনার গাঁও’-য়ের পতন ঘটে। ফেরার পথে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন দর্শন করে হোটেলে ফেরা হল।
পরদিন সকাল আটটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়া গেল বগুড়ার মহাস্থানগড়ের উদ্দেশ্যে। পথে পড়ল ‘সাভার’ মুক্তি যুদ্ধের শহিদস্তম্ভ। পথের দুপাশের দৃশ্য নজর কাড়া, গাছের সবুজ সারি, জলভরা খাল-বিলে সাদা আর গোলাপি শাপলার রংবাহার। শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। কোথাও সবুজ ধানের খেতে বাতাসের ঢেউ। তুরাগ নদীর ব্রিজ পার হয়ে, আরও বেশ কিছুক্ষণ পর সাভার-এ পৌঁছোলাম। শ্যামল ঘাসের কার্পেটে মোড়া নানা বর্ণের ফুলগাছের কেয়ারিতে ঘেরা অপূর্ব জায়গা, মাঝে বিশাল শহিদ স্মারক। শ্রদ্ধাবনতচিত্তে প্রণাম জানিয়ে আবার ছুটে চলা।