ছত্তিশগড়ের বস্তার দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের কাছে একটা ভীতির সঞ্চার করত। রাজনৈতিক ভাবে উপদ্রুত এলাকা হওয়ার কারণে পর্যটকরা এর রূপসুধা পান করার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থেকেছেন।
কিন্তু একটু সাহসী হয়ে যদি পা বাড়ান, বস্তার আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। এক অপূর্ব প্রাকৃতিক বিস্ময় আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে এই রূপের খনি বস্তারে। আদিবাসী সংস্কৃতি, অপূর্ব ডোকরা হস্তশিল্প, চোখ ধাঁধানো ঝরনা, অরণ্যের হাতছানি, গ্রামীণ জীবন, পুরোনো মন্দির কী নেই বস্তারে। সেই কারণেই ছত্তিশগড়কে বিস্ময়কর এক রাজ্যের আখ্যা দেওয়া যায়।
প্রায় ৪০টি আদিবাসী শ্রেণির বাস বস্তারে। বাইসন হর্ন মারিয়া, আভুজ মারিয়া, মুরিয়া, ভাতরা,
ধ্রুব, হালবা, দোরলা এবং গোন্ডা উপজাতিদের নিয়ে বস্তারের বিস্তার। এই উপজাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতি, দিনযাপন, উৎসব-অনুষ্ঠান, রন্ধনশৈলী সবই আপনার শহুরে চোখকে একেবারে নতুনের স্বাদ দেবে। এখানকার ভমিপূত্ররা আজও বহু বছরের পারম্পরিক জীবনশৈলীতেই অভ্যস্ত। আধুনিক জীবনের অভিশাপ স্পর্শ করেনি এই আদিবাসীদের। তাই তাদের আতিথেয়তা ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবে।
খুব কাছ থেকে ধ্রুব জনজাতির জীবনকে উপলব্ধি করতে আমরা গিয়েছিলাম বস্তারের একটি গ্রাম মাওলিপাড়ার-এ। তাদের পরম্পরা, সংস্কৃতি জেনে এবং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। জঙ্গল থেকে আহরিত মূল, সবজি দিয়ে তাদের সাধারণ ব্যঞ্জন মুগ্ধ করেছিল। মহুয়া এবং চাপুরা লাল পিঁপড়ের চাটনি এ অঞ্চলের মানুষের অত্যন্ত প্রিয়।
আজকাল আধুনিকারা হাতে নানা রকমের ট্যাটু আঁকেন। সেই ট্যাটু বা উল্কি কিন্তু এই আদিবাসী জীবনেরই অঙ্গ। বলতে পারেন এদের কালচারাল আইডেন্টিটি। শরীর জুড়ে উল্কি আঁকা একটি কনেকে দেখেছিলাম বস্তারে। শুনেছিলাম কনের শরীরে উল্কি না থাকলে চড়া পণ দিতে হয় বরপক্ষের কাছে। এরা বিশ্বাস করে উল্কির সৌন্দর্য গয়নার চেয়ে বেশি। বিয়েতে তাই ট্যাটু আঁকার একটি আলাদা অনুষ্ঠানই হয় এখানে।
আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল জগদলপুরে। সেখান থেকেই গাড়ি নিয়ে বস্তার ঘোরা যায়। আর জলপ্রপাত দর্শন এই ভ্রমণেরই অঙ্গ। চিত্রকূট জলপ্রপাতের বিস্ময়কর রূপ, যে না দেখেছে তাকে বোঝানো যাবে না, প্রকৃতি কীভাবে সাজিয়েছে বস্তারকে। এই প্রপাতকে তাই মিনি নাযে্গ্রা নামে উল্লখে করা হয়।