প্রমীলা মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে শুরু হল নজরুল মেলার উদ্বোধন। নজরুল আকাদেমি অতিথি আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি করেনি। বিকালে টিফিন, রাতে ডিমের ঝোল ভাত। আর সকালে কোলিয়ারি এলাকার ঘুগনি-মুড়ির একটা ভিন্ন স্বাদ আছে বই-কি!
চুরুলিয়া জুড়ে নজরুলের জন্মদিন থেকে শুরু উৎসব। বাঙালি জাতি সৌভাগ্যবান যে নজরুলের মতো উদার, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা ব্যক্তি ও লেখক আমাদের এই রাঢ় বাংলায় জন্মেছিলেন। সাতদিন ধরে চলে নজরুল মেলা। আইসক্রিম থেকে আয়না গ্রামীণ মেলায় যা যা থাকে আর কী। নাগরদোলা থেকে মনিহারি জিনিস, জিলিপি পাঁপড়ভাজা, চপ-তেলেভাজা, ঘুগনি সব কিছু।
নজরুল আকাদেমি লাগোয়া মুজাফ্ফর আহমেদ ভবনে আমাদের ঢালাও রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণের বিরতি। তারপর আর ঘুম আসেনি। রাতের ঘুম ভুলে রাতভর কবির পৌত্র সুবর্ণ কাজির সঙ্গে জমে গেল গল্প। তার গানে গল্পে দিন আর রাত যেন একাকার হয়ে গিয়েছে।
নজরুলের বংশধর সুবর্ণ কাজীর খোলামেলা আলোচনা। আপনভোলা এই মানুষটির সঙ্গে সারা রাত গল্পে-গানে কেটেছে। সারা রাতের সঙ্গ অনেক অজানাকে খুঁজে পেলাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে লালন ফকিরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুবর্ণ কাজী।
কবিতীর্থ চুরুলিয়া আজ সাম্প্রদাযিক সম্প্রীতির এক আদর্শ পীঠস্থান। ভালোবাসার নতুন তীর্থভূমি চুরুলিয়া। চুরুলিয়া গ্রাম তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। তবুও আমাদের সঙ্গে রাত জাগবে চুরুলিয়া। আড্ডা দিতে দিতে রাত পোহাল। আকাশ চিরে ভোরের আলো চোখেমুখে। ভোরের পাখির ডাক আর আজানের সুরে তখন ঘুম ভাঙছে চুরুলিয়ার। বেলা দশটা থেকে শুরু দুই বাংলার কবি সম্মেলন।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জেলার কবিদের কবিতা পাঠ। আমিও প্রমীলা মঞ্চে কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করলাম। আমাদের দেওয়া হল স্মারক সম্মান। এবার ফেরার পালা। চুরুলিয়া অজয়ঘাট থেকে আসানসোলগামী বাসে চড়ে ফিরলাম মন খারাপ-করা বিকালে।
এমন বিদ্রোহী কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থান সরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করতে পারে। এখানে রয়েছে নজরুল ইসলামের জন্মভিটা, নজরুল সংগ্রহশালা বা মিউজিয়াম ও ঐতিহাসিক নজরুল স্মৃতিসৌধ। নজরুল সংগ্রহশালায় কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রি রয়েছে। রয়েছে খাট, আলমারি, এইচএমভি কোম্পানির দেওয়া নজরুলের গ্রামোফোন, বিভিন্ন পদক ইত্যাদি। তার পাশেই প্রমীলা নজরুল পরিবারের সমাধিক্ষেত্রে ফুলবাগিচা ঘেরা দেয়ালের গায়ে গায়ে কবির বিভিন্ন ছবি আঁকা রয়েছে। স্মৃতিসৌধের সঙ্গে লাগানো হয়েছে প্রতীকী অগ্নিবীণা।