ভোর সাড়ে চারটেয় চাক্বিবাঁক স্টেশনে নেমে অটোয় চেপে পাঠানকোট বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছেছি পাঁচটা নাগাদ। এই সফরে আমাদের প্রথম গন্তব্য হিমাচল প্রদেশের চাম্বা। এইচপিএসটিসি-র চাম্বাগামী বাসের প্রথম যাত্রী আমরা।
যাত্রার শুরুতেই জানাই, ‘ধৌলাধার’ বা ‘লেসার হিমালয়’-এর বিস্তৃতি ডালহৌসি থেকে একদিকে বিপাশার তীরে কুলু পর্যন্ত, অন্যদিকে তা গাড়োয়ালের বদ্রিনাথ পর্যন্ত। এই পাহাড়ের গঠনে কালচে গ্রানাইট ও শ্লেট পাথরের আধিক্য। মাঝে মাঝে লাইমস্টোন ও স্যান্ডস্টোনও চোখে পড়ে। ধৌলাধার পর্বত শৃঙ্গগুলির উচ্চতা ৩৫০০ থেকে ৬০০০ মিটারের মধ্যে।
পাঠানকোট থেকে চাম্বার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। আমরা বসেছি জানলার পাশের সিট সমেত চারটি আসনে। প্রথম সকালে প্রকৃতি যেন ভারি নরম, ভারি সুন্দর! প্রকৃতির মায়াময় সৌন্দর্যকে দেখা ও উপলব্ধি করার এটাই তো সেরা সময়। পাঠানকোট ছোটো এক তহশিল। বাস থেকে দেখছি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবির, প্যারেড গ্রাউন্ড ইত্যাদি। মামুন্ মিলিটারি স্টেশন, সাই ইকবাল ইন্সটিটিউট পেরিয়ে বাস বাজার এলাকা ছাড়াতেই শুরু হ’ল সবুজের সমারোহ। রাস্তার দুইপাশে আম, বট আর ইউক্যালিপটাসই চোখে পড়ছে বেশি। বাস এসে পৌঁছোল দুনেরা-তে। চাম্বা থেকে দূরত্ব ৭৬ কিলোমিটার। এখানে ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতি। বাস থেকে নেমে পথের ধারের এক দোকান থেকে চা নিলাম। চুমুক দিতেই মনে হল চায়ের স্বাদটা কেমন যেন অন্যরকম! পরে জেনেছিলাম, হিমাচল প্রদেশের এই অঞ্চলে চায়ে পানমৌরি মেশানোর চল আছে।
বাস চলছে ধীর গতিতে। উচ্চতা বাড়তেই শুরু হল পাইন গাছের রাজত্ব। আধ ঘন্টা পরে পৌঁছোলাম নৈনীখণ্ডে। পথের পাশে চোখে পড়ল বেগুনি রঙের কৃষ্ণচূড়া, নাম গুলমোহর। মনে পড়ল, প্রথমবার এই ফুল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম গাড়োয়ালের গোপেশ্বর-চামোলীতে। বাস এসে থামল বানিক্ষেত-এ। এই সফরে প্রথমবার দেখলাম, দিগন্তে বরফঢাকা পর্বতশৃঙ্গ। ভালোলাগাটা বেড়ে গেল তখনই। বেলা ১০ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পৌঁছোলাম চাম্বা বাস স্ট্যান্ডে। তিন মিনিটের হাঁটাপথে চলে এলাম এইচপিডিসি-র ‘হোটেল ইরাবতী’-তে। চাম্বায় থাকার সেরা জায়গা। অগ্রিম বুকিং ছিল না, তবু সৌভাগ্যবশত দোতলায় পেয়ে গেলাম সুসজ্জিত একটি ঘর। ভাড়া একটু বেশি হলেও সঙ্গে পাওয়া গেল একটি কমপ্লিমেন্টারি বেড। ব্যালকনিতে চেয়ারে বসে চা-পান করার সময় দেখি সামনেই প্রশস্ত ‘চৌগান’ (চৌগান-কে অনেকে ‘শোগান’ উচ্চারণ করেন), চাম্বা শহরের প্রাণকেন্দ্র।