পাহাড়ি সীমান্ত গ্রামে বেড়ানোর ইচ্ছে ছিল প্রবল। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল সিকিম পর্যটন দফতর। পশ্চিম সিকিমের ভারত-নেপাল সীমান্ত গ্রাম উত্তরে, সেখানেই রডোডেনড্রন টুরিজম ফেস্টিভ্যাল উপভোগ করতে ছুটলাম মহানন্দে। এনজেপি স্টেশন থেকে জাইলো গাড়ি করে আমাদের নিয়ে ছুটল চালক রাজকুমার।
জোরথাং ছাড়াতেই অনুভব করলাম পাহাড়ি রোমাঞ্চ। সর্পিল পাহাড়ি জঙ্গল-পথ শুরুর আগে মাশরুম বিক্রি হতে দেখে জিভে জল এসে গেল। গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ি ধাবায় ১০০ টাকার বিনিময়ে মাশরুম সহযোগে সারলাম মধ্যাহ্নভোজ।
ঠিক ছয় ঘন্টা জার্নি শেষে পৌঁছোলাম উত্তরে-র হি-গাঁও-এ। একেবারে মেঘে ঢাকা গ্রাম। ঠান্ডা জলীয় আবহ অনুভব করলাম। গাড়ি থামতেই আঞ্চলিক যন্ত্রসংগীতকে মাধ্যম করে অভ্যর্থনা জানানো হল আমাদের। সিকিম-সুন্দরীরা রডোডেনড্রন ফুলের ফোঁটা দিয়ে স্বাগত জানাল। পাহাড়ের ঢালে গড়ে তোলা এক গুম্ফা ধাঁচের রেস্তোরাঁয় চা-পানের পর, গোধুলিকে আলিঙ্গন করে আমরা উঠলাম ‘হেম ইয়াম্ব ইন’-এ।
রাতে পাহাড়ি মুরগির ঝোল আর হাতে গড়া রুটি খেতে খেতে, শুনলাম ওই হোটেলের মালিক সুহেনের কন্ঠে নেপালি গান।
পরের দিন ভোরবেলা প্রাতরাশ সেরে আমরা রওনা দিলাম ডেন্টামের উদ্দেশে। সেগুন, শাল, বুনো ফুল আর নাম না-জানা গাছ-গাছালি ভরা পাহাড়ি জঙ্গলের বুক চিরে এগিয়ে চলল আমাদের গাড়ি। হি-গাঁও থেকে ঘন্টাখানেকের পথ অতিক্রম করে যোগ দিলাম ডেন্টাম রডোডেনড্রন টুরিজম ফেস্টিভ্যাল-এ।
উৎসব চত্বরে তখন চলছে নাচ-গান আর খানাপিনা। শাক-সবজি, ফুল-ফল, ঘর সাজানোর জিনিস, ঘি-মধু, এমনকী রডোডেনড্রন ফুল দিয়ে তৈরি বিশেষ পানীয়ও বিক্রি করতে দেখা গেল উৎসব প্রাঙ্গণে। এসব কিছুক্ষণ উপভোগ করার পর, ঠিক সকাল ন’টা নাগাদ ডেন্টামের খানিক দূরে গাড়ি করে পৌঁছে, ওখান থেকে ট্রেক করে পৌঁছোলাম গুরাসেদাড়া। সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট ওপরে এই গুরাসেদাড়া অর্থাৎ রডোডেনড্রনের উপত্যকা। লাল রং-এর আসল রডোডেনড্রন ছাড়াও, মোট ঊনিশ রকম প্রজাতির রডোডেনড্রন ফুলের সান্নিধ্য পেলাম। স্থানীয় শিল্পীদের কন্ঠে নেপালি গান শুনতে শুনতে লেপচা মেয়েদের আতিথেয়তায় সারলাম মধ্যাহ্নভোজ।