বহু গাছপালায় সজ্জিত, অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়ানো এই হোটেলের গঠন অনেকটাই বাংলো স্টাইলের। দুপুরের লাঞ্চ সেরে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘোড়ায় চড়ে ১২ পয়েন্ট দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। ঘোড়া পিছু ৯০০ টাকায়। চড়াই উতরাই পথে আমাদের ঘোড়া চারটি এগোতে লাগল।
প্রথমে, লুইসা পয়েন্ট থেকে পশ্চিমঘাটের অসাধারণ রূপ প্রত্যক্ষ করলাম। প্রায় ৪০ মিনিট ঘোড়সওয়ারির পর একটি জায়গায় থেমে সহিস আমাদের জানাল, একটু এগোলেই দেখতে পাব হনিমুন পয়েন্ট। পূর্বে সেখানে বিভিন্ন গাছ থেকে আদিবাসীরা হনি (মধু) সংগ্রহ করত। সময় পেরিয়ে হনি কালেকশন পয়েন্ট কীভাবে যেন ‘হনি মুন পয়েন্ট’-এ নামান্তরিত হয়!
এরপর সহিস জানাল, একটু এগোলেই পর পর দেখতে পাব পিসরনাথ মন্দির, লেক পয়েন্ট, কিং জর্জ পয়েন্ট, ইকো পয়েন্ট ইত্যাদি। লেক পয়েন্ট থেকে সুন্দর চারলোট লেকটি দেখে সেতু পেরিয়ে চললাম সান সেট পয়েন্টে সূর্যাস্ত দেখতে। জানিয়ে রাখি, মাথেরানে জল সরবরাহের প্রধান উৎস ওই শান্ত, সুন্দর লেকটি।
মাথেরান থেকে অপরূপ সূর্যাস্ত দেখা মনে থাকবে বহু দিন। সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ আমরা এসে পৌঁছোলাম সান সেট পয়েন্টে। ফটো তোলার জুতসই জায়গা বেছে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। পরবর্তী সাত মিনিটে লাল সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত গেল পাহাড়ের পিছনে। চরাচরে রঙের বন্যা থেকে গেল আরও কিছুক্ষণ। ক্যামেরায় তোলা থাকল অস্তমান দিবাকরের ছবিগুলো। সবারই মনে ভারি আনন্দ। ফিরে এসে আবার চড়ে বসলাম ঘোড়ার পিঠে।
সন্ধেবেলা, আলো কমে আসছে দ্রুত। ঘোড়ার লাগাম ধরে সাবধানে ফিরে চললাম। পথের ধারে সোলার লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে। দু'পাশের জঙ্গলকে আরও বেশি ঘন ও অন্ধকারময় মনে হচ্ছে। আধ ঘন্টার মধ্যে মাথেরানের মার্কেটে এসে পৌঁছোলাম। আমরা ঘোড়া থেকে না নেমে এগিয়ে চললাম হোটেলের পথে। আরও ১০-১২ মিনিট পরে এসে পৌঁছোলাম আমাদের হোটেলে। ঘোড়াওয়ালাদের টাকা মিটিয়ে দিলাম।
পরদিন সকালে মুখ-হাত ধুয়ে এসে বসেছি একটা চেয়ারে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে নবীন সূর্যের নরম আলো এসে পড়েছে লবিতে। হালকা, মধুর বাতাসে মন ভালোলাগায় অসাড় হয়ে পড়ছিল। পাখিদের কলরব প্রকৃতির মাঝে সুরেলা সংগীত হয়ে ফিরে আসছিল। হোটেলের পিছন দিক থেকে কিছুটা নীচে নেমে এবার প্রবেশ করলাম জঙ্গলে। প্রকৃতপক্ষে হোটেলের চারদিকেই জঙ্গল, কোথাও হালকা, কোথাও ঘন। জঙ্গলের উত্তর দিক বরাবর হাঁটতে লাগলাম পায়ে চলা সরু পথ ধরে।