বুকের ভেতর ভ্রমণের ইচ্ছেটা যেই হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, অথচ খুব বেশি ছুটি জমে নেই দেখে মন খারাপ হয়ে যায়— তখন ভরসা সপ্তাহান্তের ছুটিগুলো৷ তেমনই দু-তিনটে দিন হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন বাংলার গাঁ-ঘেঁসে থাকা ওড়িশা এবং ঝারখণ্ড এই দুটি রাজ্যে৷ অপূর্ব মালভূমির মনোরম পরিবেশ৷খারাপ লাগে না দিনদুয়েক কাটাতে৷এখানে রইল তেমনি কয়েকটা ডেস্টিনেশন৷
মাসাঞ্জোর : প্রকৃতি যারা ভালোবাসেন তাদের অবশ্য গন্তব্যই এই ছোট্ট অবকাশযাপনের ঠাঁই মাসাঞ্জোর। পাহাড় ও নদীকে আলিঙ্গন করার, এক বুক অক্সিজেন নেওয়ার, হাতের কাছে এমন মনোরম স্থান কমই আছে। নীরবতার মাঝে মনের মানুষকে নতুন করে আবিষ্কারের জন্য, এ এক নিরিবিলি জায়গা। পাহাড়-জঙ্গল আর তার দোসর মযূরাক্ষী নদী। ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের রেঞ্জ আর মাসাঞ্জোর জলাধার, সৌন্দর্যে একে অন্যের পরিপূরক। এই প্রকৃতিবাসরে কীভাবে দুটো দিন কেটে যাবে তা আপনি বুঝতেই পারবেন না।
মালভূমি আর অরণ্যে ঘেরা ঝাড়খন্ডের সৌন্দর্য অপার। আর যাতায়াতে তেমন ঝামেলা নেই বলে, বাংলার পর্যটকরা পাড়ি দেন এই প্রতিবেশী রাজ্যে। মাসাঞ্জোরের সূর্যাস্ত সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। আর যদি ভাগ্য সহায় হয়, দেখা যেতে পারে বন্য হরিণ, বুনো শুয়োর কিংবা দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির পাল। স্থানীয়দের বললে জমিয়ে দিতে পারে সাঁওতালি নাচের আসরও।
কীভাবে যাবেন : ট্রেনে বা বাসে সিউড়িতে নেমে পড়ুন। এখান থেকে মাসাঞ্জোরের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করে নিন সিউড়ি থেকে।
কোথায় থাকবেন : সেচ দফতরের বাংলা ছাড়াও, যুব আবাস আছে। কলকাতা যুব কল্যাণ দফতর থেকে বুকিং হয়, ফোন : ০৩৩-২২৪৮০৬২৬। মযূরাক্ষী রিসর্ট-এ থাকতে হলে অনলাইন বুক করতে হবে।
কেওনঝড় : কলকাতার ধর্মতলা থেকে কেওনঝড়ের বাস তো রয়েছেই। আপনি চাইলে বম্বে রোড ধরে গাড়ি নিয়ে সরাসরি পেঁছোতে পারবেন কেওনঝড়। মহানদীর উপর ব্রিজ। এপারে মযূরভঞ্জ জেলা শেষ। ওপারে কেওনঝড় শুরু। পাহাড়, জঙ্গল, নদীর শোভা এই নিয়ে কেওনঝড়।
মূল শহর ছেড়ে বম্বে রোড ধরে আরও ৫ কিলোমিটার এগোলে বাঁহাতে জঙ্গলের রাস্তায় বড়াঘাঘরা জলপ্রপাত। বর্ষায় জলে টইটম্বুর হয়ে থাকে বড়াঘাঘরা । পথনির্দেশ নেই। স্থানীয় মানুষের দিক চিহ্নই ভরসা। অরণ্য প্রকৃতির মাঝে ২০০ ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে জলধারা। আরও কিছু পথ গাড়ি নিয়ে এগোলে আরও এক ঝরনা নাম সানাঘাঘরা। এর পাশে সাজানো পার্ক। ছোটো পাহাড়ের বনবীথিকা ও পার্কের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নীচে নামলেই মূল জলরাশির দেখা পাবেন। লেকের জলে রয়েছে বোটিং-এর ব্যবস্থা।
কেওনঝড়ে একটা সপ্তাহান্তের ছুটি অনায়াসেই কাটানো যায়। মূল শহর থেকে ৩০ কিমি দূরে সীতাভঞ্জ। যাজপুরের পথে ২৩ কিমি দূরত্বে কাতারবেদা। এরপর ডানদিকে আরও ৭ কিমি এগোলেই সীতা নদীর ধারে অসাধারণ স্পট। প্রবাদ আছে লব-কুশের জন্মস্থান এটিই।
পরের দিন কেওনঝড় থেকে ঘুরে আসুন ৫০ কিমি দূরত্বে অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশে খণ্ডধর জলপ্রপাত। এখানে থাকার জন্য একটা সরকারি বাংলো আছে। বারসূয়া স্টেশনের কাছে টেনসা থেকেও এখানে আসা যায়।
কীভাবে যাবেন : ধর্মতলা থেকে বাসে আর হাইওয়ে দিয়ে সরাসরি গাড়িতে আসা যায়।
কোথায় থাকবেন : পি ডব্লিউডি বাংলো ছাড়াও রয়েছে সাধারণ মানের তিন-চারটি হোটেল।
দুবরাজপুর : অভিযান সিনেমার সেই অসম্ভব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ মনে পড়ে? সেই মালভূমি আর মামা-ভাগ্নে পাহাড়? জায়গাটার নাম দুবরাজপুর। পাহাড়ের শীর্ষে পাহাড়েশ্বরের মন্দির। মন্দিরের পূর্বদিকে একটি পাথরে সব সময় জল ভরে থাকে। এ এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। পাহাড়ের উপর থেকে নীচের প্রাকৃতিক দৃশ্য অপূর্ব। শীতকালের ছোট্ট ছুটিতে অনন্য এই স্থান।
দুবরাজপুরে মহাদেবের মন্দির আছে। অধিকাংশ মন্দিরেই রয়েছে পোড়ামাটির অপূর্ব অলংকরণ। এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন হেতমপুর রাজবাড়ি। হেতমপুর, দুবরাজপুর থেকে মাইল খানেক পথ। হেতম খাঁ-এর নামানুসারে জায়গাটির নামকরণ। এখানে হেতম খাঁ-এর দুর্গ রয়েছে। ঘুরে দেখতে পারেন। আর রয়েছে হেতমপুরের রাজবাড়ি। দেখার মতো এই অট্টালিকা। রাজাদের প্রতিষ্ঠা করা বেশ কয়েকটি মন্দিরও আছে প্রাসাদ চত্বরে।
এ অঞ্চলের জল খুব ভালো। একসময় বাঙালি তাই হাওয়া বদলের জন্য এসব জায়গায় বেড়াতে যেত। খনিজ পদার্থে ভরা জলে রয়েছে হজম প্রক্রিয়া সুচারু করার গুণ। একদিন ঘুরে নিন বক্রেশ্বর। সেখানে রয়েছে বাবাধামের উষ্ণপ্রস্রবণ।
কীভাবে যাবেন : দুবরাজপুর যেতে হলে ট্রেন বা বাসে সিউড়ি আসতে হবে। সিউড়ি থেকে দুবরাজপুরগামী বাস তো পাবেনই। চাইলে গাড়িভাড়াও করতে পারেন। ট্রেনে এলে অন্ডাল হয়ে দুবরাজপুর স্টেশনে নামতে হবে।
কোথায় থাকবেন : দুবরাজপুরে তেমন ভালো থাকার ব্যবস্থা নেই। সিউড়িতে থাকতে হবে, সরকারি বা বেসরকারি লজে।