অভিকে গেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে মানস গাড়িতে উঠতে যাবে, গেট খুলে দৌড়ে এসে অভি মানসের হাত জড়িয়ে ধরে, ‘তুমি যেও না বাবা, প্লিজ এখানেই থেকে যাও… তোমাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না…।’
‘আসছে রবিবার তো আবার আসব অভি। প্রতিবারই তো আসি’, মানস অভির গালে আলতো টোকা দেয়।
‘না, তুমি অনেকদিন পর পর আসো। তোমার কথা খুব মনে হয় বাবা, বন্ধুরাও সব সময় তোমার কথা জিজ্ঞেস করে। তুমি আমার স্কুলেও কখনও আসো না। অন্য বন্ধুদের বাবারা তো সবাই আসে… তাহলে তুুমি কেন আস না বাবা?’
মানস ওর আট বছরের ছেলের অজস্র প্রশ্নের কী উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছিল না। যে প্রশ্নের উত্তরগুলো নিজেই ঠিকমতো জানে না মানস। ছেলেকে সেগুলোর উত্তর কীভাবে দেবে? মানস বুঝতে পারে না এইভাবে আর কতদিন ও ছেলের কাছে সব চেপে যেতে পারবে?
‘আমি আবার আসব অভি। তুমি তো খুব ভালো ছেলে সবকিছুই বোঝো। এরকম জেদ কোরো না। এখন লক্ষ্মী হয়ে উপরে যাও। আমি কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে গিয়ে রাখব। তখন আমরা খুব মজা করব।’
‘কিন্তু মজা কী করে হবে? মা তো ওখানে থাকবে না।’
‘অভি, এখন তুমি উপরে যাও। পরে আবার তোমার সঙ্গে কথা হবে। আমারও দেরি হয়ে যাচ্ছে। মানস গেট খুলে অভিকে লিফটে ঢুকিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসল। একই শহরে থাকলেও দুটো বাড়ির দূরত্ব অনেকটাই। তা-সত্ত্বেও প্রতি রবিবার মানস অভিকে নিয়ে কোথাও না কোথাও ঘুরতে বেরোয়।
মানস একটা বড়ো কোম্পনিতে বড়ো পদে রয়েছে ওর উপরে বড়ো দায়িত্ব ফলে কাজের ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরও করতে হয় ওকে। দশ বছর আগে মধুমিতার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়। বিয়েটা লাভ ম্যারেজই ছিল। একসঙ্গেই দুজনে এমবিএ পড়েছিল এবং প্রেমটা ওদের সেখান থেকেই। মিশুখে, সুন্দরী এবং ফ্যাশনেবল মধুমিতাকে দেখেই মানস ওর প্রেমে পড়ে। এমবিএ কমপ্লিট করার আগেই ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টে দুজনেই ভালো চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়েই দুজনে বাড়িতে পরস্পরের সম্পর্কে জানায়। দু’জনের বাড়ি থেকেই আনন্দের সঙ্গে বিয়েতে সম্মতি দিলে, কিছু দিনের মধ্যেই ওরা বিয়ে করে নেয়। দুজনেরই প্রথম পোস্টিং বেঙ্গালুরু। সুতরাং বিয়ের পর ওরা বেঙ্গালুরুতেই নতুন সংসার পাতে।
নতুন চাকরির ব্যস্ততা এবং নতুন বিয়ে, দিনগুলো যেন খুশির পাখায় ভর দিয়ে উড়তে থাকে। প্রথম বছরটা হইচই,আনন্দে কীভাবে কেটে যায় ওরা বুঝতেও পারে না। দ্বিতীয় বছরে না চাইতেও মধুমিতা সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে যেটার জন্য ওরা স্বামী-স্ত্রী মানসিক ভাবে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। বাড়ির লোকেদের কাছে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যেতে চাপে পড়ে ওরা পরিবার বাড়াতে রাজি হয়ে যায়।
মধুমিতাকে বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়তে হয় যেটার জন্য ও একেবারেই তৈরি ছিল না। মানস ওকে বোঝায় যে বাচ্চা একটু বড়ো হয়ে গেলেই ও আবার চাকরি জয়েন করতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা এবং বাড়ির দায়িত্ব এতটাই বেড়ে গেল যে, মধুমিতা চাকরি করতে যাওয়ার কথা চিন্তাতেই আনতে পারল না। এদিকে বাড়ির দায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসেরও কোম্পানিতে পদোন্নতি হতে থাকল। ফলে কর্মক্ষেত্রে কাজের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গেল।
দায়িত্ব বাড়তেই মানসের শুরু হল দেরি করে বাড়ি ফেরা। মধুমিতার ধৈর্য প্রথম থেকেই একটু কম ছিল। তার উপর চাকরি ছাড়তে হয়েছিল বলে মনে মনে মানসের উপর একটা রাগও তৈরি হয়েছিল। সুতরাং মানসের অত্যধিক ব্যস্ততা মধুমিতার সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল। অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে লাগল সে। কথায় কথায় মানসের সঙ্গে ঝগড়া, রাগারাগি –এটা ওদের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়াল। রোজই প্রায় মানস রাত করে বাড়ি ফিরত।
‘এই ভাবে আর কতদিন চলবে? আমি, অভি কি তোমার কেউ হই না? সংসারে এতটুকু সময় তুমি দাও না। আমাদের প্রতি তোমার কি কোনও দায়িত্ব নেই?’ মধুমিতার এই প্রশ্নের উত্তরে মানসও রাগ না দেখিয়ে চুপ থাকতে পারে না, ‘আমি কি দায়িত্ব পালন করছি না? তোমাদের জন্য এবার কি তাহলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব?’ ক্লান্তিতে মানস চেয়ারে বসে পড়ে। রেগে থাকাতে, ক্লান্ত মানসের চোখের অভিব্যক্তি মধুমিতার চোখ এড়িয়ে যায়। ঝাঁঝালো স্বরে বলে, ‘এমন কী চাকরি তুমি করো? কতদিন হয়ে গেলো অভির সঙ্গে খেলা তো দূরে থাক, ঠিকমতো কথাও বলোনি। রাত্রে যখন বাড়িতে আসো ও তখন ঘুমিয়ে থাকে। আর সকালে যখন ও স্কুলে যাচ্ছে তখন তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ট্যুর-এ যাও। ফিরে একদিন দুদিন শহরে থাকো আবার অন্য ট্যুর-এ বেরিয়ে যাও। নিজের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনও তুমি নরক বানিয়ে দিয়েছ।’
‘মধুমিতা, তুমিও তো প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতে…! সুতরাং প্রাইভেট কোম্পানির ব্যস্ততা তুমি ভালো মতোই বোঝো, তাহলে এরকম অবুঝের মতো কথা বলছ কেন? এমনি, এমনি তো এত উঁচু পদে পৌঁছোইনি… পরিশ্রম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি বলেই কোম্পানি আমাকে ওই পদে বসিয়েছে। তোমাদের টাকাপয়সা, আরামের কোনও অভাব আমি রাখিনি… এই সবই তো আমার প্ররিশ্রমেরই ফল।’
‘এই আরাম, টাকাপয়সা আমরা চাই না মানস। আমারা তোমাকে চাই। তোমাকে আমাদের সময় দিতে হবে।’ মধুমিতার গলা ভেঙে আসে, ‘বাড়িতে এসেও তুমি ফোনে ব্যস্ত থাকো।ঞ্জআমার সঙ্গে কথা বলারও তোমার সময় হয় না।’
‘অফিসের কাজের জন্যই তো ফোন আসে। তোমার জন্য কি সেগুলোও অ্যাটেন্ড করা বন্ধ করে দেব?’
মানসের রাগের পারদ চড়তে থাকে।
‘কতদিন হয়ে গেছে, তোমার অফিসের ব্যস্ততার জন্য, আমরা কোনও বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যেতে পারি না, কাউকে আমাদের এখানেও ডাকতে পারি না। কোথাও বাইরে যাই না ছুটির দিনে তুমি ক্লান্ত হয়ে থাকো।’
‘তাই বলে, আমি কি তোমাকে সোশ্যাল হতে বাধা দিয়েছি? তুমি নিজের মেলামেশা বাড়াও না, কে মানা করেছে? ব্যস্ত থাকলে আজেবাজে ব্যাপারগুলোয় মন দেবার সময় পাবে না’, এই বলে মানস চেয়ার থেকে উঠে পড়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ায়। আহত সিংহীর মতো মধুমিতা নিজের মধ্যেই গুমরাতে থাকে।
এই কথাকাটাকাটি, ঝগড়ার পরিবেশই ধীরে-ধীরে মধুমিতা আর মানসের দাম্পত্যে বড়ো একটা ফাটল ধরাতে শুরু করল। বরং টুর থাকলেই মানস, মধুমিতার অনুপস্থিতিতে বাড়ির ঘটনাক্রমকে লজিক্যালি দেখার এবং বোঝার চেষ্টা করত। মানস বুঝতে পারত, মধুমিতার তার প্রতি ক্ষোভ, নালিশ সম্পূর্ণ মিথ্যাও তো নয়। মনে মনে ঠিক করত, এবার বাড়ি ফিরে মধুমিতা আর অভিকে একটু বেশি সময় দেবে।
মানস শহরের বাইরে থাকলে মানসের অবস্থাটাও মধুমিতা বোঝার চেষ্টা করত। সত্যিই, লোকটা করবেটাই বা কী? কোম্পানির বড়ো পদ সামলাচ্ছে যখন, তখন সঙ্গে দায়িত্ব তো থাকবেই। সারাদিন কাজের পর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে মানস…। কোথায় ওর ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করবে, তা নয়, উলটে ঝগড়া করেই সময় নষ্ট করে সে।
অথচ এই একই মানুষ দুটো যখন সামনাসামনি হয় তখন মনের এই ভাবনাগুলো কোথায় হারিয়ে যায়। মানসের ব্যস্ততা স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কও প্রভাবিত ফেলতে শুরু করল। একে তো সময়ের অভাব, তার মধ্যে আবার ঝগড়া, কথাবন্ধ। মাস গড়িয়ে যেত, শারীরিক সম্পর্কটুকু রাখাও ওদের হয়ে উঠত না। দুজনেই মানসিক এবং শারীরিক ভাবে একাকিত্ব বোধ করতে শুরু করল।
এই সমস্যা শুধু মানস আর মধুমিতারই নয়, আজকের বহু দম্পতির এই একই সমস্যা। দুজনের চাকরির ব্যস্তস্তা সঙ্গে অফিস আর বাড়ির দূরত্ব এতটাই যে, রোজ যাতায়াত করার কষ্ট এবং ক্লান্তি দূর করতে করতেই ছুটি শেষ, সঙ্গে অন্যান্য জরুরি কাজগুলো তো আছেই। ফলে ছেলে বা মেয়ে কেউই এখন বিয়ের দায়িত্ব নিতে চাইছে না অথবা বিয়ের পর সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছে না। কারণ তারা জানে বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর নিজের স্বাধীনতা এবং চাকরি ছাড়তে হতে পারে।
ধীরে ধীরে মানস আর মধুমিতার মৌখিক ঝগড়া ঠান্ডা লড়াইয়ে পরিণত হল। দুজনের মধ্যে কথা প্রায় হতো না বললেই হয়। হঠাৎ-ই একদিন মধুমিতা জানাল ও একটা চাকরি পেয়ে গেছে এবং অফিসের পাশেই একটা ফ্ল্যাট ভাড়াও নিয়ে নিয়েছে। সেখানেই ও অভিকে সঙ্গে নিয়ে উঠে যাবে।
মানসের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মধুমিতার প্রস্তাবে। মধুমিতাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর বলতে ইচ্ছে করছিল একলা চাকরি করে অভিকে ও কী করে মানুষ করবে, আর যদি একান্তই চাকরি করতে হয় তাহলে এখানে থেকেও তো অনায়াসেই সেটা করা যায়। কিন্তু মানসের আত্মাভিমান ওর গলা টিপে ধরল। যেখানে মধুমিতাকে নিয়ে ও এত চিন্তা করছে, সেখানে মানসকে ছেড়ে চলে যাওয়ার ডিসিশন নিতে মধুমিতার তো এতটুকুও বাধল না। পরের দিনই অভিকে নিয়ে মধুমিতা ঘর ছাড়ল। দিনটা আজও মানস ভুলতে পারে না। দু’বছর প্রায় হতে চলল। ছয় বছরের অভি আজ আট বছরের হয়ে গেল। মানসের জীবন, চাকরি এবং এই দুটো বাড়ির দূরত্ব মাপতে মাপতেই বেশ কেটে যাচ্ছিল।
লাল বাতিতে গাড়ি ব্রেক কষতেই মানসের চিন্তা ভগ্ন হল। আর কত দিন এভাবে চালানো সম্ভব? মানস সব সময় চেষ্টা করত ওদের স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব যেন অভির উপর কোনওরকম প্রভাব না ফেলে। দুজনেরই ভালোবাসায় ও যেন বড়ো হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু চাইলেও এটা কিছুতেই সম্ভব হয়ে উঠছিল না।ঞ্জঅভির ব্যক্তিত্ব দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে এটা মানস খুব ভালো বুঝতে পারছিল। অভির জীবনে একটা শূন্যতাবোধ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
রাস্তার ভিড় অতিক্রম করে বাড়ি পৌঁছোতে মানসের অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। মনটা ভারাক্রান্ত লাগছিল। অভির অগুনতি প্রশ্নের কোনও উত্তর ওর কাছে ছিল না। মনে হল, অভি নিশ্চয়ই এই প্রশ্নগুলো ওর মা-কেও করে, মধুমিতার কাছে কি এই প্রশ্নগুলোর কোনও উত্তর আছে…? আর কতদিন এসব সহ্য করতে হবে?
মানস এবং মধুমিতার পরিবারের সকলে দুজনকে বোঝাবার অনেক চেষ্টা করে যাতে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সরিয়ে দুজনে একসঙ্গে আবার জীবন শুরু করে। কিন্তু দুজনেই নিজের নিজের জেদে অটল, কেউ এক চুলও জেদ ছাড়তে রাজি নয়। বিরক্ত হয়েই মানসের মা-বাবা ছেলের কাছে প্রস্তাব রাখেন, ‘সঙ্গে যদি থাকতেই না চাস তাহলে ডিভোর্স নিয়ে নে। জীবন আবার নতুন করে শুরু করার চিন্তাভাবনা কর।’
মানসের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে যায়। সত্যিই কি জীবনের একটা অধ্যায় এত সহজে শেষ করে ফেলা যায়? নতুন শুরু করার কথা ভাবাই যায় না। আজ ও লাইফে ব্যস্ত কিন্তু কালও কি এতটাই ব্যস্ত থাকবে ও? আর অভি? ওর কী হবে? অভির করা প্রশ্নগুলো ওর মাথায় ভিড় করে আসে। কী করবে ও? অনেকবার মনে হয়েছে মধুমিতা যেমন নিজের ইচ্ছেয় ঘর ছেড়েছিল একদিন হঠাৎই আবার ফিরে আসবে কিন্তু অপেক্ষা করে করে দুই বছর কাটতে চলল। মধুমিতা নিজে থেকে কোনওদিন ওকে ডেকে পাঠাল না। আর এখন তো একা থাকারই অভ্যাস হয়ে গেছে।
অভি বাড়িতে ঢুকেই সোজা নিজের ঘরে চলে গেল। কিছু ভালো লাগছিল না ওর। এতটুকু বয়সেই মনটা ওর যেন ক্লান্তিতে ভেঙে আসছিল। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। কবে থেকে মা আর বাবা একসঙ্গে ওর সাথে থাকবে, এই অপেক্ষায় ও রয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই রবিবার আসে। বাবাও আসে আর এসেই ওকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে চলে যায়। পছন্দের খাবার খাওয়ায়, জিনিসপত্রও কিনে দেয়। কিছু প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞেস করে এবং সন্ধেবেলায় আবার মা-র কাছে পৌঁছে দিয়ে, অন্য বাড়ি চলে যায়। সোমবার হলেই মায়ের অফিস আর ওর স্কুল। এইভাবেই সপ্তাহ কেটে গিয়ে আবার রবিবার আসে। এটাই অভির সারা সপ্তাহের রুটিন। ওর কিচ্ছু ভালো লাগে না। বাবার সঙ্গে থাকলে মায়ের জন্য মন খারাপ লাগে আর সারাটা সপ্তাহ বাবাকে অভি মিস করে খুব। সব সময়ই মনে হয় কেন মা-বাবা একসঙ্গে থাকতে পারে না?
মানসের সঙ্গে ঘুরে আসার পর এক ঝলক ছেলেকে দেখল মধুমিতা তারপর তার আর কোনও আওয়াজ না পেয়ে মধুমিতা রান্নাঘর থেকে ছেলের নাম ধরে হাঁক পাড়ল। না, কোনও শব্দ নেই! কী হল, চিন্তিত হল মধুমিতা। হাতটা মুছে নিয়ে অভির স্টাডিরুমে ঢুকল ও। ছেলেটা টেবিলে মাথা রেখে মুখটা ঢেকে রয়েছে। ঘরের আলোটা পর্যন্ত জ্বালায়নি।
ঘরের আলো জ্বালিয়ে মধুমিতা এসে অভির মাথায় হাত রাখল, ‘কী হল অভি? কেমন কাটল আজ সারাটা দিন?’
অভি উত্তর দিল না। টেবিল থেকে মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকাল না পর্যন্ত।
‘কী হল? মন খারাপ।’ ছেলের চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে মধুমিতা জিজ্ঞেস করল।
‘কিছু হয়নি’, বলে অভি মায়ের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিল।
‘চুপচাপ কেন বসে আছিস? কেউ কিছু বলেছে তোকে?’
‘না’, বলেই মধুমিতার হাত আঁকড়ে ধরে অভি, ‘মা, আমরা কেন বাবার সঙ্গে গিয়ে থাকতে পারি না? বলো না, কবে আমরা বাবার কাছে গিয়ে থাকব? চলো না আমরা বাবার কাছে গিয়ে থাকি।’
‘বাজে কথা শুনতে ভালো লাগে না অভি’, মধুমিতার কোমল কণ্ঠস্বর হঠাৎই রুক্ষ হয়ে ওঠে, ‘রাত হয়েছে, ডিনার খেয়ে শুয়ে পড়ো। কাল স্কুল রয়েছে।’
‘আমি খাব না। আগে তুমি আমার কথার উত্তর দাও,’ অভি জেদ করতে থাকে।
‘বললাম না, ফালতু কথা শোনার আমার সময় নেই। আমরা এখানেই থাকব, খেয়ে শুয়ে পড়ো’, হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় মধুমিতা।
অভি বসেই থাকে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই দুজনের কেউই জবাব দেয় না, বরং বকে ওকে থামিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা করে। অভি কী করবে বুঝে পায় না।
কাজ শেষ করে মধুমিতা শোওয়ার ঘরে ঢুকে দেখল, অভি খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর কচি মুখটা দেখে মধুমিতার মনে হল কোলে টেনে নিয়ে অজস্র চুম্বনে ভরে দেবে ওর ছোট্ট মুখটা। নিজেকে সংযত করল ও। ঘুম ভেঙে যাবে ছেলেটার। বড্ড প্রশ্ন করে আজকাল অভি। সেই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর ওর জানা নেই। অভির শৈশবটা সত্যিই হাজার সমস্যায় ভরা। মধুমিতা উদ্দেশ্যহীন ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাইছে, সিরিয়াসলি কখনও ও নিজেকে এবং অভিকে নিয়ে ভাবে না। জাস্ট এক একটা করে দিন কাটাচ্ছে? অভি ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে। ওর শিশুসুলভ প্রশ্নগুলোই জেদের বশে কবে কঠোর হয়ে উঠবে কে বলতে পারে? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মধুমিতা।
মানসের সঙ্গে জীবন কাটানো অসহনীয় হয়ে উঠেছিল ওর কাছে, কিন্তু ওকে ছেড়ে এসেও কি ভালো আছে ও? মধুমিতা মনে মনে ভাবে। ছেড়ে আসার সময় মনে হয়েছিল মানসকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার যাতে ওর জীবনে স্ত্রী-র গুরুত্ব ও উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু শেষপর্যন্ত চলে আসাটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াল। প্রথম প্রথম মধুমিতা মানসের আসার অপেক্ষা করে থেকেছে। ওর মনে হতো, মানস নিশ্চয়ই একদিন এসে ওর রাগ ভাঙিয়ে বাড়ি ফেরত নিয়ে যাবে। মধুমিতাও সব ভুলে গিয়ে মানসের সঙ্গে ফিরে যাবে। কিন্তু অপেক্ষা, অপেক্ষা হয়েই থেকে গেছে। মানসও আসেনি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আর মধুমিতাও ফিরে যেতে পারেনি মানসের কাছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্বও বাড়তে থেকেছে। নিজের নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুজনেই। মাঝেমধ্যে শুধু অভির প্রশ্নগুলো মধুমিতাকে বাস্তবের সম্মুখীন হতে বাধ্য করত।
গতকালই মায়ের ফোন এসেছিল। সেই-ই একই কথা। মানসের কাছে ফিরে না গেলে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু তো একটা ভাবা দরকার। মধুমিতা খুব ভালো করেই জানে মা, ভবিষ্যৎ মানে কী বোঝাতে চাইছেন। মানসকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসা। কিন্তু এটা বলা এবং করার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এতই কি সোজা পুরো ব্যাপারটা? অভির কী হবে? ও আর মানস দুজনেই যদি আলাদা করে দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাবে তাহলে দুজনের কাছেই অভির প্রেজেন্সটা অবাঞ্ছিত হয়ে উঠবে না? চিন্তাটা আসাতেই মধুমিতা শিউরে উঠে অভিকে নিজের কোলের কাছে টেনে আনে।
মধুমিতা অভির ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। সত্যিই, ছোটো থেকেই ছেলেটার জীবনে সমস্যার শেষ নেই, মা-বাবার যৗথ ভালোবাসা ওর কপালে আজ পর্যন্ত জুটল না। এর উপর মধুমিতা নিজে আর ওর সমস্যা বাড়াতে একেবারে চায় না। অভির শরীরের ওম ধীরে ধীরে মধুমিতার চোখে তন্দ্রা এনে দিতে সাহায্য করে। আজ কেন জানি না মধুমিতার মনে হল ওর মনের ভিতর জমে থাকা বরফটা সামান্য হলেও গলতে শুরু করেছে। যেগুলো মেনে নিতে আগে কিছুতেই মন চাইত না আজ সেগুলো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে না। সমস্যাগুলো রয়েই গেছে মধুমিতার জীবনে তবুও ওর মনে হল, সমস্যাগুলোকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে ওর। ও নিজের মন-কে বোঝার চেষ্টা করে। ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে, নিজেই টের পায় না মধুমিতা।
সকালে অভি আবার স্বাভাবিক। কিছু কিছু জিনিস যে ওর জীবনে বদলাবার নয় সেটা ও ভালোমতোই এতদিনে বুঝে গিয়েছিল।
স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিল অভি। অভিকে স্কুলে পাঠিয়ে মধুমিতাও নিজের অফিস এসে পৌঁছোল। রোজকার মতোই একটা দিন, কিন্তু মনের ভিতর সন্তুষ্টি অনুভব করছিল মধুমিতা। সারাটা সপ্তাহ ব্যস্ততার মধ্যেই ওদের কেটে গেল। আবার এসে গেল রবিবারের পালা।
মানস যথারীতি মধুমিতার ফ্ল্যাটের নীচে দাঁড়িয়ে ফোন করে নিয়ম মতো অভিকে ডেকে পাঠাল। কিন্তু প্রতি রবিবরের মতো অভি একা নামল না, মধুমিতাও এল ওর সঙ্গে যেটাতে শুধু মানস-ই নয় অভিও খুবই অশ্চর্য হল।
মানস লক্ষ করল, মধুমিতার চেহারায় লাবণ্য যেন অনেকটাই আবার ফিরে এসেছে। কঠোরতাটা অনেক কম। একলা লড়াই চালাতে চালাতে সৌন্দর্য কিছুটা মলিন হয়ে পড়েছে। তিনজন সামনাসামনি হলেও কারও মুখে কোনও শব্দ জোগাল না। মনের মধ্যে নানা কথা ভিড় করে আসছিল কিন্তু বলার ভাষা জোগাতে পারল না কেউই।
‘অভি চলো’, মানসই প্রথম নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করল। মধুমিতার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মধুমিতা চোখ নামিয়ে নিল। মানসের মনে হল মধুমিতা কিছু বলতে চায় কিন্তু ওর দিক থেকে কোনও কথা না আসায় মানস অভির হাত ধরে গাড়িতে ওঠার উপক্রম করতেই পিছন থেকে মধুমিতার কণ্ঠস্বর কানে এল, ‘মানস’। মানসের মনে হল একটা যুগ পার করে মধুমিতার গলায় নিজের নামটা ও শুনল। ‘কাল অভির স্কুলে পেরেন্ট-টিচার মিটিং আছে। তুমি যদি একটু সময় বার করে আসতে পার অভির খুব ভালো লাগবে।’
মানসের ‘হ্যাঁ’ বলে দিতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু ও উত্তর দিল, ‘আমার সময় হবে না… কাল টুরে বেরিয়ে যাব আমি।’ উত্তর দিয়েই পালটা জবাবের জন্য প্রতীক্ষা না করে মানস ড্রাইভার সিটে উঠে বসল।
মধুমিতা নিজের জায়গায় পাথর হয়ে দাঁড়িয়েই রইল। মন চাইছিল মানসের নাম ধরে আর একবার ডাকার কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না। ততক্ষণে মানস গাড়ি স্টার্ট করে দিয়েছে। সম্পর্কের বরফ গলাবার চেষ্টা করাটা ব্যর্থ হয়ে গেল মধুমিতার। মানসের, মুখের উপর ‘না’ বলে দেওয়ার ভয়েই মধুমিতা সম্পর্কের এই বরফ গলাবার চেষ্টা করতেই বরাবর ভয় পেয়ে এসেছে। ক্লান্ত পায়ে মধুমিতা লিফটের দিকে পা বাড়ায়।
সন্ধেবেলায় অভি বাড়ি আসতে প্রত্যেকবারের মতো মধুমিতা এবারে ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করল না। অভিও সারাদিন কী করল– না করল কিছুই মধুমিতাকে বলল না, কারণ বলার মতো কিছুই ছিল না। পুরোটা দিন দুজনের মধ্যে কথা প্রায়ই হয়নি। নিজের নিজের চিন্তাতেই দুজনে বিভোর ছিল। অভি একবারও মানসকে স্কুলে পেরেন্টটিচার মিটিং-এ আসার জন্য বায়না করেনি।
অভিকে ছেড়ে বাড়িতে আসার পর মধুমিতার মুখটাই মানসের খালি মনে পড়ছিল। স্কুলের জন্য ‘না’ বলে দেওয়াতে মধুমিতার চোখে যে ব্যথার ঝলক মুহূর্তের মধ্যে দেখা দিয়ে মিলিয়ে গিয়েছিল, সেটা আর কেউ না হলেও মানসের চোখ এড়ায়নি। অভিও, একবার ওকে স্কুলে আসার জন্য বায়না করেনি। হয়তো অভিও ওর কাছ থেকে উত্তর আশা করাই ছেড়ে দিয়েছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই বাইরের পোশাক ছেড়ে মানস বিছানায় গা এলিয়ে দিল। খাওয়ার ইচ্ছে হল না কিছুতেই।
পরের দিন মধুমিতা অভিকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছে গেল। ক্লাসরুমের দিকে যেতে গিয়ে দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। করিডরে মানস ওদেরই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। অভি ছুট্টে গিয়ে মানসকে জড়িয়ে ধরল।
অভির আনন্দ দেখে মানস আর মধুমিতা দুজনেরই চোখে জল এসে গেল। মধুমিতা ওদের দুজনের কাছে আর একটু ঘন হয়ে সরে এল। ওর মুখও প্রসন্ন হাসিতে ভরে যায়। ‘থ্যাংকস, মানস… তোমাকে দেখে অভি প্রচণ্ড খুশি হয়েছে। আমরা ভাবতেই পারিনি তুমি…’
পেরেন্ট-টিচার মিটিং শেষ হতেই বাইরে এসে অভি বন্ধুদের সঙ্গে মানসের আলাপ করাতে শুরু করল। ওর আনন্দ দেখে মানসেরও মনে হল ও স্কুলে এসে ঠিক কাজই করেছে।ঞ্জঅভিকে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে ছেড়ে দিয়ে মানস স্কুলের বাইরে এসে দাঁড়াল। মধুমিতাও ওর পিছন পিছন স্কুলের বাইরে বেরিয়ে আসে।
মধুমিতাই প্রথম কথা শুরু করে, ‘এত খুশি হতে অভিকে আমি অনেক দিন দেখিনি মানস।’
‘হ্যাঁ, অভি এখনও বাচ্চা… সুতরাং ছোটো ছোটো জিনিসেই ও খুশি হয়ে ওঠে’, বলে আবার মানস চুপ হয়ে যায়। মধুমিতাও কথা খুঁজে পায় না। ‘ঠিক আছে… এবার আমি যাব। অভিকে বলে দিও আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিল… রবিবার ওকে নিতে আসব’, কথা শেষ করে মানস যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
‘মানস’, অনুশোচনায় মধুমিতার গলা বুজে আসে, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করব।’
‘হ্যাঁ, করো। কী জিজ্ঞেস করতে চাও?’
মানসের কণ্ঠস্বরে প্রশ্রয় অনুভব করে মধুমিতার ইচ্ছে হচ্ছিল দুই বছরের জমে থাকা চোখের জল বইয়ে দেয় মানসের কাঁধে মাথা রেখে। নিজেকে সংযত করল ও, ‘আচ্ছা মানস, এই দুই বছরে কখনও আমার অভাব বোধ করেছ? আমাদের ছাড়া তুমি জীবনে খুশি হতে পেরেছ? মধুমিতার স্বর খুব ক্লান্ত শোনাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কথাগুলো বলার জন্য ওর নিজের সঙ্গেই নিজেকে লড়তে হচ্ছে। অথচ বলে দেওয়ার পর ওর মনে হচ্ছিল বলাটা এতটাও কঠিন ছিল না। আগে কেন তাহলে কথাগুলো বলতে পারেনি ও? কথাগুলো বলে মধুমিতা, মানসের দিকে তাকাল, চেষ্টা করল ওর মুখের অভিব্যক্তিগুলো পড়ার।
‘আমার অভাব তুমি কখনও ফিল করেছ?’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মানস জিজ্ঞেস করল।
মধুমিতা উত্তর দিল না। উত্তর না পেয়ে মানস বলল, ‘ছাড়ো এসব কথা… এখন ও সব কথা বলে কী লাভ? অনেক দেরি করে ফেলেছি দুজনেই।’
‘এখন না হয় দেরি হয়ে গেছে, আগেও তো তুমি কখনও আমাকে একবারও ডাকোনি’, ভিজে স্বরে মধুমিতা বলে।
‘আমি তোমাকে ডাকিনি ঠিকই কিন্তু আমি তোমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতেও বলিনি। তুমি নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি ছেড়েছিলে, আবার নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি ফিরেও আসতে পারতে, মানস বলে।
‘একবার তো ডাকতে পারতে। আমি ঠিক ফিরে আসতাম’, চোখের পাতা ভিজে আসে মধুমিতার।
‘তখন তোমাকে ডাকলেও তুমি ফিরতে না। ফেরারই যদি হতো তাহলে তুমি বাড়ি ছেড়ে যেতেই কেন? বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় শুধু নিজের কথা না ভেবে একবারও যদি অভির কথা চিন্তা করতে, তাহলে কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারতে না। আমাদের দুজনের জেদের বলি হতে চলেছে অভি। ওর শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে বড়োদের ঝগড়ার মাঝে। আমরা ওকে কী দিতে পেরেছি? না নিজেরা আনন্দে আছি না সন্তানকে আনন্দে রাখতে পেরেছি’, বলে মানস নিজের চোখের জল লুকোতে গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট করে।
মুহূর্তে মধুমিতার মনে হয়, গিয়ে মানসের রাস্তা আটকে দাঁড়ায়, ওকে জড়িয়ে ধরে বলে যে ওর কাছে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু ভাবতে ভাবতেই মানস গাড়ি স্টার্ট করে ট্র্যাফিকের সঙ্গে মিশে যায়। নিজের মন ঠিক করে নেয় মধুমিতা। অনেক দেরি করে ফেলেছে ও আত্মসম্মান বজায় রাখার নাম করে। কিন্তু আর নয়, দোষ যখন নিজে করেছে, শুধরোতেও নিজেকেই হবে। অভিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে ও।
পরের দিন অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে মানস, নীচের কলিংবেলটা বেজে উঠল। এত সকাল সকাল কে এল ভাবতে ভাবতে দরজা খুলতে নামল ও। দরজা খুলতেই দেখল, মধুমিতা আর অভি দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।
‘তোমরা!’ নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না মানস।
‘ভেতরে আসতে বলবে না?’ মধুমিতা জিজ্ঞেস করে।
‘তুমি নিজের বাড়ি এসেছ মধুমিতা আমি তোমার রাস্তা আটকাবার কে?’ মানস দরজার পাশে সরে দাঁড়াল। মধুমিতা আর অভি ভিতরে ঢুকে এল। মানস দরজা বন্ধ করতে করতে নিজের মনেই একটা প্রতিজ্ঞা করল, এবার আর ও নিজের খুশিকে দরজা দিয়ে কখনও বাইরে বার হয়ে যেতে দেবে না।