শিশুর ১ বছর বয়স হলে তাকে একটু একটু করে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করুন৷ সমস্ত কিছু মুখে রাখার প্রাকৃতিক কৌতূহল, বাচ্চাকে নতুন খাবারে অভ্যস্থ করার সুযোগ দেয়৷ মা–কে সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে হবে৷

নতুন বাবা বা মা হিসাবে আপনার সন্তানের বড়ো হওয়ার সাথে সাথে, খাবারের মধ্যে কী কী থাকা দরকার, তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে নিন৷ প্রয়োজনে আপনার পেডিয়াট্রিশিয়ানের সাহায্য নিন।

মনে রাখবেন, শিশুদের নিউট্রিশন-ও বড়োদের মতোই ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি, এই সমস্ত উপাদানের পরিমাণ বয়স অনুযায়ী আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ শিশুর বাড়বৃদ্ধির সঙ্গে এগুলি সরাসরি সম্পর্কিত।

৩ মাস থেকে আপনার বাচ্চার ডায়েটে শাকসবজি রাখুন৷ তাকে এগুলির স্বাদে অভ্যস্ত করতে এবং খাবারের প্যালেট প্রশস্ত করতে এগুলি দেওয়া উপকার।ফল খাওয়ানো প্রোয়োজন৷ফলের মন্ড বা পিউরি তৈরি করা সহজ, খাওয়া সহজ এবং সর্বোপরি প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যা শিশুদের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে। কিন্তু যদি প্রতিদিন একই ধরনের ফলের মন্ড বা পিউরি বাচ্চাকে পরিবেশন করেন, বাচ্চা রেগে যাবে ও বিরক্ত হবে। তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা রকমের ফল দিন৷

সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য আয়রন একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এটি ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশ ও পেশীগুলিকে অক্সিজেন সংরক্ষণে সহায়তা করে৷ এর ফলে শরীরের ক্রিয়াকলাপ সঠিক ভাবে হয়। মূলত, আয়রন স্বাস্থ্যকর রক্তের প্রধান উপাদান৷ আয়রনের অভাব রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে, যা সন্তানের দেহের মূল কার্যগুলিকে প্রভাবিত করে।

বাচ্চাদের ডায়েট-এ শাকসবজি প্রবর্তনের সর্বোত্তম উপায় হল সবজি দিয়ে তৈরি সুপ দিয়ে শুরু করা। শিশুর বন্ধ নাক পরিষ্কার করা থেকে,  স্বাদকোরকগুলিকে উত্তেজিত করা—সুপ এমন প্রচুর উপকারে লাগে।সুপে থাকা জল আপনার সন্তানের দেহে প্রয়োজনীয় তরল সরবরাহ করে। সুপে থাকা শাকসবজিগুলি ছেঁকে শুধু তরল আকারে খাওয়াতে পারেন৷ আবার পিউরি তৈরি করেও খাওয়াতে পারেন৷ এটি তার হজমে সহায়তা করে। যদি আপনার শিশুটি সর্দি-কাশিতে ভোগে, তবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাকসবজি দিয়ে তৈরি এক বাটি উষ্ণ সুপ দিন৷

শিশুর পক্ষে উপকারা খাবার হল দালিয়া বা ডালিয়া৷ যদিও ডালিয়া নামেই এই খাবারটি সারা দেশে পরিচিত, এর সঠিক উপকরণটি হল ভাঙা গম বা ফাটানো গম। বিভিন্ন দেশে যব এবং ভুট্টার মতো বিভিন্ন শস্যের মতো, এই শস্যও ব্যবহৃত হয়। ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে গম থেকে তৈরি ডালিয়া বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা হয়। বড়ো হওয়া বাচ্চাদের জন্য সাধারণত যে-ডালিয়া তৈরি করা হয়, তা ঘন ও সবজি সমেত পরিবেশিত হয়৷সবেমাত্র কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করা শিশুদের জন্য ডালিয়া পাতলা করে খাওয়া হয়, ফলে এটি হজম করা শিশুদের পক্ষে সহজ হয়।

বছরের শিশুদের খাবারের কিছু পরামর্শ

প্রোটিন : সি ফুড, পোলট্রি চিকেন, ডিম, বিন, চর্বিবিহীন পাঁঠার মাংস, নানা ধরনের ছোলা-মটর-সোয়াবিন, বাদাম বা অন্যান্য বীজ, ডায়েট-এ রাখা জরুরি।

ফল : বাচ্চাকে গোটা ফল, কামড়ে খাওয়ার অভ্যাস করান। ফ্রোজেন জুস-এর তুলনায় এটা অনেক বেশি উপকারী। যদি ক্যানড জুস খাওয়াতেই হয়, খেয়াল রাখুন তাতে যেন অ্যাডেড সুগার-এর পরিমাণ কম থাকে।

সবজি : স্টু বা স্যালাড যে-কোনও ফর্ম-এ সবজি অবশ্যই শিশুর ডায়েট-এ রাখুন। যদি ক্যানড সবজি কেনেন, তাহলে অবশ্যই দেখবেন যেন তাতে সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে।

দানাশস্য : হোল গ্রেইন, যেমন হুইট ব্রেড, ওটমিল, পপকর্ন এগুলি বাচ্চাকে অবশ্যই দেবেন। হোয়াইট ব্রেড, পাস্তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

ডেয়ারি : ফ্যাট ফ্রি বা লো ফ্যাট ডেয়ারি প্রোডাক্ট যেমন দুধ, ইয়োগার্ট, চিজ বা সোয়া মিল্ক শিশুকে খাওয়াতে পারেন। ফুল ফ্যাট ডেয়ারি প্রোডাক্ট-এ প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেটা শরীরে যাওয়া ঠিক নয়। ভেজিটেবল বা নাট অয়েল-এ রান্না করা খাবার শিশুকে খাওয়ান, এতে তার খাবার হজম করতে সুবিধা হবে।

মনে রাখবেন অল্প বয়স্ক শিশুদের হজম শক্তি দুর্বল৷তাই যে-খাবারগুলি তাদের তন্ত্রের সাথে খাপ খায় না, তা দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে৷  বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জির সমস্যাও হয়৷ তাই বাচ্চার পুষ্টির দিকটা যেমন মাথায় রাখছেন, তেমনি এই বিষয়গুলিও অবহেলা করলে চলবে না৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...