প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা৷খুব কয়েকটি চেনা জায়গা ছাড়া আমরা ঘুরে দেখি না এই রাজ্যটি৷ অথচ এখানে রয়েছে আরও নানা নয়নাভিরাম ডেস্টিনেশন৷ রয়েছে পাহাড় জঙ্গলের সিনিক বিউটি, আবার ইতিহাসের হাতছানি৷ আমরা আপনাদের কাছে নিয়ে এলাম এমনই অচেনা এক ওড়িশাকে৷
হাদগড়
শালের জঙ্গল আর ঘন ঘাসে ছাওয়া হাদগড় ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারিতে খুব বেশি পর্যটক আসেন না। অথচ এ এক স্পর্শ না করা সৌন্দর্যের খনি। ভদ্রক থেকে ২০ কিমি দূরত্বে কেন্দুঝড় জেলার অন্তর্গত এই বনস্থলি। বহু অচেনা গাছ, পাখি, প্রজাপতির আবাসস্থল। গভীর জঙ্গলে সচরাচর দেখা মিলতে পারে লেপার্ডের। জঙ্গলি বেড়াল, হায়েনা, প্যাঙ্গোলিন ও ভাল্লুকও রয়েছে এই জঙ্গলে। আর আছে অজস্র বানর, হাতি ও হরিণের ঝাঁক।
১৯৭৮ সালে এটি স্যাংচুয়ারি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এর বিস্তার ১৯১ স্কোয়ার কিমি। সালান্ডি ড্যামের কোল ঘেঁষে এই জঙ্গল। ফলে সালান্ডি নদীর মাছ এবং কুমিরও এই জঙ্গলের প্রাকৃতিক সম্পদ। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা নদীর ল্যান্ডস্কেপ এক কথায় অপূর্ব। যদিও সারাবছরই যাওয়া চলে এই জঙ্গলে, কিন্তু শীতই অতি উপযুক্ত সময়। বসন্তে মহুয়া আর পলাশের জঙ্গল নেশা ধরিয়ে দেয়। এখান থেকেই ঘুরে নিন রামচণ্ডী মন্দির।
কীভাবে যাবেন : ভদ্রক স্টেশনে নেমে গাড়িতে ১৬০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হবে।
কোথায় থাকবেন : ওড়িশা টুরিজম-এর ওয়েবসাইট ওয়াইল্ড ওড়িশা দেখতে পারেন। এছাড়া গেস্ট হাউস আছে সালান্ডি ড্যাম, গদাচণ্ডীতে। ইন্সপেকশন বাংলো আছে কেওনঝড়, হাদগড় ও ভদ্রকে।
স্বর্ণ ত্রিভুজ
বৌদ্ধধর্মের পীঠস্থান হিসাবে খ্যাত রত্নগিরি, উদয়গিরি ও ললিতগিরি এই তিন নিয়ে ওড়িশার স্বর্ণ ত্রিভুজ। একত্রে এই বৌদ্ধ নিদর্শন দেখতে হলে, কটক বা যাজপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো।
কটক থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে রত্নগিরি। ৫ নং জাতীয় সড়ক ধরে চণ্ডীখোল হয়ে পারাদ্বীপের রাস্তা ধরে এগোলেই, রত্নগিরি পৌঁছোনো যাবে। একসময় ওসিয়া পাহাড় শ্রেণির অন্তর্গত একটি ছোটো পাহাড়ে ছিল এক জনপদ, যার নাম পুষ্পগিরি। পরবর্তী কালে যেটি এক বৃহত্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। তিনটি নদী ব্রাহ্মণী, কিমরিয়া ও বিরূপা ঘিরে রেখেছে এই অঞ্চল। খননকার্যে পাওয়া গেছে, দুটি বড়ো বড়ো মন্দির-সহ কিছু ভগ্নস্তূপ।
রত্নগিরিই এই ত্রিভূজের মধ্যে সবচেয়ে সাজানো। পাহাড়ের মাথায় বিরাট মনাস্ট্রিতে আছে একটি বিশালাকার স্তূপ। ১২০০ শতাব্দীতে এখানে পড়েছিল তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের প্রভাব। এখন সাজানো পার্ক ও প্যাগোডা দেখলে অবশ্য প্রাচীন সময়টা তেমন ধরা পড়ে না। একসময় এখানে দশহাজার ছাত্রের পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল। এখানে এলে ভূমিস্পর্শ বুদ্ধমূর্তিটি অবশ্যই দেখুন।
ফিরতি পথে বাঁদিকের রাস্তায় দেখে নিন উদয়গিরি। ৪০০ একর জায়গা জুড়ে দেখে নেওয়া যায় খননকৃত শিলালিপি, ধ্যানী মুকুট পরা বুদ্ধমূর্তি, দেবালয়ে গেটের অপূর্ব কারুকাজ।
পারাদ্বীপের পথে আরও ২ কিমি দূরে বালিচন্দ্রপুর। এখান থেকে আরও ৮ কিলোমিটার এগোলেই ললিতগিরি। বিশাল এক চৈত্য, দুটো মনাস্ট্রি ও পাথরের বড়ো স্তূপ এই নিয়ে ললিতগিরি। এখানে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। বিশাল মাপের বোধিসত্ত্ব, তারা ও দণ্ডায়মান বুদ্ধমূর্তি দেখে নিন।
কীভাবে যাবেন : ফলকনামা, ধৌলি বা করমণ্ডল এক্সপ্রেস-এ করে কটক পেঁছোতে হবে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টার জার্নি।
কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য ওড়িশা টু্রিজম-এর পান্থনিবাস রয়েছে। বুকিং করতে যোগাযোগ করুন উত্কল ভবন, ৫৫ লেনিন সরণি, কলকাতা-১৩।