ছোটোবেলায় শুনেছিলাম রামেশ্বরমের সমুদ্রপাড় থেকে ধনুষ্কোটির সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে পাকপ্রণালী পার হয়ে এককালে যাওয়া যেত ভারত থেকে সিংহলে। সেই রাস্তার পুনর্নির্মাণ হয়নি, সড়কপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আর বাস্তাবায়িত হয়নি। তাই আকাশপথেই কলকাতা থেকে পৌঁছেছি কলম্বোর বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরে। তারপর একদিন কলম্বো সফর করে চলেছি অনুরাধাপুরের পথে। দূরত্ব প্রায় ২০৬ কিমি। প্যাকেজ ট্যুর হলেও আমরা পাঁচজন নিজস্ব একটা গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছি। লম্বা পথ, একবার শুধু কার্তিক মন্দিরে নেমে দর্শন করে আবার এগিয়ে চলেছি। পথে সে রকম দর্শনীয় কিছু নেই– ফাঁকা মাঠ, মাঝে মাঝে চাষের খেত, গাছপালা, গ্রাম, আধাশহর। সঙ্গে আনা শ্রীলংকা সম্পর্কিত তথ্য পুস্তকগুলিতে মনোযোগ দিই।

শ্রীলংকার ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময় দেশে ভগবান বুদ্ধের পদার্পণ ঘটে আর এই ঘটনাই দেশের সভ্যতা প্রসারের ভিত্তি। কথিত আছে আরও আগে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারত থেকে বিতাড়িত হয়ে রাজকুমার বিজয়, শ্রীলংকায় আসেন আর এই দ্বীপের প্রথম রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন সিংহলী জাতিকে। প্রথম সিংহলী রাজত্ব খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এই অনুরাধাপুরের কাছেই প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুরাধাপুরের ধবংসাবশেষ দক্ষিণ এশিয়ার এক এমনই আকর্ষণ যা স্মৃতিকে অনেক প্রাচীন সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

অনুরাধাপুরের এই বিশাল চত্বর জুড়ে পুরাতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যশিল্পের অতুলনীয় সমষ্টি। কখনও দেখা যাবে স্তূপ (দাগোবা), বিশাল আকৃতির ইটের স্থাপত্য, প্রাচীন পুষ্করিণী বা ভগ্ন মন্দির যা কয়েক হাজার বছর আগে অনুরাধাপুরে শ্রীলংকার রাজাদের শাসনের সময় নির্মিত। আজকের দিনেও তার অনেকগুলি যেন জীবন্ত! কখনও পবিত্র বা ধার্মিক স্থান হিসাবে মানুষের সমাগম হচ্ছে। মন্দিরে পূজা বা নানা উৎসবে মানুষের মনে স্পন্দন জাগাচ্ছে।

পান্ডুকাভায়ার রাজত্বকালে অনুরাধাপুর, সিংহলের প্রথম রাজধানী হয়। সেটা ৩০০ খ্রিষ্টপূর্ব। কিন্তু দেবনামপিয়া টিসার রাজত্বকালে  বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার সিংহলে শুরু এবং সামাজিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে। কয়েক বছরের মধ্যেই অনুরাধাপুর সমৃদ্ধির পীঠস্থান হয়ে ওঠে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় রাজাদের হাতে তার পতন হয়। এই ঘটনা হাজার বছরের মধ্যে বার বার ঘটেছে। কিন্তু ডুটুগেমুনু তার গুপ্ত আশ্রয়স্থল থেকে একদল সৈন্য জোগাড় করে তাদের সাহায্যে আবার অনুরাধাপুর পুনরুদ্ধার করেন। ডুটুগেমুনু তার রাজত্বকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নির্মাণ করেন, যা আজকের দিনেও বর্তমান। এর পরবর্তীকালের গুরুত্বপূর্ণ রাজাদের মধ্যে রয়েছেন ভালাগাম্বা যিনি দক্ষিণ ভারতীয় রাজাদের আক্রমণে সিংহাসন হারান কিন্তু আবার তা পুনরুদ্ধার করেন। অনুরাধাপুরে শেষ মহান রাজা ছিলেন মহাসেনা যার আমলে জিতবনরামা দাগোবা বা স্তূপ নির্মিত হয়। এছাড়া পুষ্করিণী ও একটি ক্যানেল কাটানোর তিনি ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ক্রমাগত দক্ষিণ ভারতীয় আক্রমণের ফলে রাজধানী, দেশের আরও অভ্যন্তরে পোলোনারুয়ায় স্থানান্তরিত হয় এবং অবশেষে ক্যান্ডিতে স্থাপিত হয়। এই অনুরাধাপুর, পোলোনারুয়া, ক্যান্ডি স্থানগুলি পরস্পরের সঙ্গে সরলরেখায় যুক্ত করলে যে ত্রিভুজ তৈরি হবে তাকে সাংস্কৃতিক ত্রিভুজ বলে আখ্যা দিয়েছে ইউনেস্কো। শ্রীলংকা ছোটো দেশ হলেও এখানে রয়েছে সাত-সাতটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...