খোলা হাওয়ায় শ্রীরাধা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল। শহরের শেষপ্রান্তে থাকা ঝিলটায় পৌঁছোতে গেলে এই একটাই রাস্তা ধরতে হয়। এদিকটা বেশ নির্জন। চারিদিকে নিবিড় সবুজ গাছগাছালি তাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। পিচ বাঁধানো ঢালাই মসৃণ রাস্তা। একটাই বেশ বড়ো হাসপাতাল রয়েছে এই চত্বরে, ঝিলের থেকে কিছুটা দূরত্বে। আর কোনও লোকবসতি নেই এই দিকটায়।
আজ অনেক দিন পর গৌতমের সঙ্গে বাইকে শ্রীরাধা বাড়ি ছাড়িয়ে এতটা দূরে এসেছে, একান্তে কিছুটা সময় কাটাবে বলে। জায়গাটা বরাবরই তার বড়ো প্রিয়। চারপাশের নিসর্গ দেখতে দেখতেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। তাই গৌতম যখন এখানে আসার কথা বলল, দ্বিধা করেনি শ্রীরাধা মুহূর্তে রাজি হয়ে গিয়েছিল।
ঝিলের চারপাশে কিছু কিছু আগাছার ভিড় থাকলেও একটু পরিষ্কার দেখে ওরা দুজনে একটা কাগজ বিছিয়ে ঘাসের উপর বসল। গৌতম একটু কাছে ঘেঁষে আসতে চাইলে, শ্রীরাধা কপট রাগ দেখিয়ে ওকে দূরত্ব রেখে বসতে বলল। দুজনেই পা মেলে বসল ঘাসের উপর। হঠাৎই ঝিলের জলে একটা মৃদু কম্পন আর তার সঙ্গে ঝুপ একটা শব্দ শুনে, শ্রীরাধা একটু সজাগ হয়ে উঠল।
মনে হচ্ছে জলে কেউ পাথর ফেলল। নিশ্চয়ই আশেপাশে কেউ আছে আর আড়াল থেকে আমাদের লক্ষ্য করছে।
এখানে কেউ প্রায় আসে না। অনেক সময় জলের উপরে মাছ লাফিযে ওঠে। তারই আওয়াজ তুমি শুনে থাকবে। গৌতম নিশ্চিন্ত করতে চায় শ্রীরাধাকে।
শ্রীরাধার শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ এসে গৌতমের দেহ-মনে নেশা ধরিয়ে দিয়েে। নিজেকে সংযত রাখতে কষ্ট হচ্ছিল গৌতমের। কিন্তু শ্রীরাধার যা ব্যক্তিত্ব তাতে কোনও ভাবেই ওর মতের বিরুদ্ধে যাওয়া চলে না। তাই ধীরে ধীরে ওর চুলের লম্বা বিনুনিটা হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে হালকা করে জিজ্ঞেস করে, তোমার পারফিউম-টার নাম কী?
উত্তর দেয় না শ্রীরাধা। মৃদু হেসে গৌতমের কাঁধে মাথা রাখে সে। সুযোগ বুঝে গৌতমের চোখদুটো শ্রীরাধার রূপ-মাধুর্য পান করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই কাটে কিছুটা সময়।
কী দেখছ এমন করে?
তোমার চোখ।
এতে দেখার কী আছে? তোমার সবেতেই বেশি বেশি।
ওই চোখে কী শুধু আমিই জানি।
থামো তো, বাড়িয়ে বলাটা তোমার স্বভাব। এবার চলো উঠি। আর একটু পরেই সন্ধে নামবে। বলে শ্রীরাধা উঠে পড়ল। শাড়িটা ঠিকঠাক করে গুছিযে নিল। সেই সময় দমকা একটা হাওয়ার বেগ ওর আঁচলটা উড়িয়ে নিয়ে গৌতমের মুখ ঢেকে দিল।
গৌতম আঁচলটা হাত দিয়ে ধরতেই শ্রীরাধা বলে উঠল, আঁচলটা প্লিজ ছেড়ে দাও, কেউ দেখে ফেলবে।
আজকের দিনটাই ভালোবাসার জন্য। আমারও প্রাণভরে তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
প্লিজ ছাড়ো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ঠিক আছে ম্যাডাম আজ ছেড়ে দিচ্ছি, বলে শ্রীরাধার কোমরের খোলা অংশ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে গৌতম গভীর চুম্বনে শ্রীরাধাকে সিক্ত করল।
ওদের এই ভালোবাসার সাক্ষী থাকে ঝিলের জল, আশেপাশের গাছপালা আর এক দম্পতি যুগল। ডক্টর সৌম্য বোস এবং ডক্টর শীলা বোস। ঝিলের অনতিদূরেই তাঁদের হাসপাতালটি। কখনও কখনও দুজনের কাজ একই সমযে শেষ হলে, নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে, স্বামী-স্ত্রী এই ঝিলটির ধারে এসে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটিযে যান।
গৌতম-শ্রীরাধা ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর শীলা তাঁর স্বামীকে বললেন, এই ছেলেটিকে আমি চিনি। আমার বাপেরবাড়ির পাড়ায় থাকে। খুব বাজে ছেলে। এক কথায় বলা যায় ধনী বাপের উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে। পড়াশোনা কতদূর করেছে জানা নেই, তবে নিত্য নতুন মেয়েে ফাঁসাতে ওস্তাদ। একবার তো এই ছেলেটির দুশ্চরিত্র স্বভাবের কারণে, একটি মেয়ে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিল।
ছাড়ো তো ছেলেটার কথা, ওদের সঙ্গে আমাদের তো কোনও লেনদেন নেই, ডা. সৌম্য স্ত্রীকে বলেন।
এই ঘটনার পর ছয়-সাত মাস কেটে গেছে। সৌম্য এবং শীলা দুজনেরই সেদিন নাইট ডিউটি। হঠাৎই একটা ট্যাক্সি এসে থামে হাসপাতালের সামনে। এক দম্পতি একটি মেয়েে নিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে হাসপাতালে ঢোকেন। দুজনে মেয়েটিকে ধরে, ধীরে ধীরে এমারজেন্সি-তে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ডাক্তারবাবু দম্পতির দিকে চাইলে, মহিলা এগিয়ে আসেন।
ডাক্তারবাবু, এ আমার মেয়ে আজ দুপুর থেকে ওর পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে আর সেই সঙ্গে খুব ব্লিডিং-ও হচ্ছে।
ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েির ব্লাড প্রেশার চেক করে একটা ফোন করলেন। ডক্টর শীলা, প্লিজ তাড়াতাড়ি একবার এমারজেন্সি-তে আসুন। একটা ক্রিটিক্যাল কেস এসেছে।
দুমিনিটের মধ্যেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শীলা এসে সেখানে পেঁছোলেন। ঝড়ের গতিতে মেয়েিকে বিছানায় শুইযে পর্দা টেনে দিলেন। একটু পরেই বেরিয়ে এসে জানালেন, মাত্রাতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে। এখুনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে। সার্জারি করতে হবে।
অপারেশনের নাম শুনেই মেয়েটির মা-বাবা ঘাবড়ে গেলেন। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ডক্টর, ভয়ে কোনও কারণ আছে নাকি?
এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনারা ফর্মালিটিজগুলো সেরে, ওটি-র সামনে অপেক্ষা করুন।
ওটি-তে সৌম্যও স্ত্রী-কে জয়েন করলেন। একটু পরেই একজন নার্স বাইরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ওটি-তে থাকা অসুস্থ মেয়েটির অভিভাবক কি আপনারা? নার্স একটি কাগজ এগিয়ে দিল ভদ্রলোকটির দিকে, তাড়াতাড়ি করে এটাতে সাইন করে দিন। অপারেশন করতে হবে। এখনই করুন।
কী হয়েে সিস্টার?
এখন কথা বলার সময় নেই। যা প্রশ্ন আছে অপারেশনের পরে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে নেবেন। মেয়েিকে ডিসচার্জ করার আগে এক বোতল রক্ত আমাদের ব্লাড ব্যাংক-এ জমা করতে হবে। এখন আমরা আমাদের স্টক থেকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
নার্স চলে গেলে একজন অ্যাটেনডেন্ট-এর সঙ্গে গিয়ে ভদ্রলোক এক বোতল নিজের রক্ত জমা দিয়ে আবার এসে স্ত্রীয়ের পাশে, ওটি-র সামনের বেঞ্চটাতে বসলেন।
হঠাৎ করে শ্রীরাধার কী হল? ভালোই তো ছিল। ভিতরের টেনশন কিছুতেই চেপে রাখতে পারছিলেন না শ্রীরাধার বাবা।
অপারেশন টেবিলে শ্রীরাধাকে শুইয়ে দিয়ে শীলা জিজ্ঞেস করলেন, যার সঙ্গে তুমি প্রায়শই ওই ঝিলটায় যাও এটা তারই কীর্তি, তাইতো?
চোখের জল বাধ মানে না শ্রীরাধার। হ্যাঁ ডক্টর, আমার একটা ভুলের জন্য এই পরিণতি হবে আমি ভাবতে পারিনি। আমাকে প্লিজ বাঁচাবার চেষ্টা করবেন না। আমার মরে যাওয়াই উচিত।
আমি তোমার মতো বোকা এবং দাযিত্বজ্ঞানহীন নই। আমার কী কর্তব্য সেটা আমি ভালোই জানি।
কিন্তু এই কলঙ্কের বোঝা নিয়ে আমি কী করে বাঁচব? আপনি আমাকে এখন বাঁচিয়ে দিতে পারেন ঠিকই কিন্তু পরেও তো আবার আমি আত্মহত্যা করতেই পারি। দয়া করে আমাকে মরতে দিন।
ঘাবড়ে যেও না, আমি তোমার বদনাম হতে দেব না। এখান থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে তুমি বাড়ি যাবে। নিজের পড়াশোনার ওপর বেশি ফোকাস রাখো। এখন থেকে মা-বাবার সম্মানের কথাটা মাথায় রেখো দয়া করে। সম্মতিসূচক মাথা হেলায় শ্রীরাধা। আর কথা বোলো না, এখনই অ্যানাস্থেশিযার প্রভাব ধীরে ধীরে শুরু হয়ে যাবে। তার পরেই আমি অপারেশন শুরু করব।
প্রায় দুঘন্টা পর ওটি থেকে শীলা বাইরে বেরোতেই, শ্রীরাধার মা-বাবা দৌড়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাদের মেয়ে কেমন আছে?
ভালো আছে। আপনারা ঠিক সময়ে মেয়েটির হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন, নয়তো বেশি ব্লিডিং হওয়ার ফলে প্রাণটাও যেতে পারত। অপারেশন সাকসেসফুল। এখন আর কোনও ভয় নেই আপনাদের মেয়ে।
কিন্তু ডক্টর, আমার মেয়ের কী হয়েছে ? শ্রীরাধার বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
আপনারা আমার কেবিনে আসুন।
শ্রীরাধার মা-বাবা ডা. শীলার সঙ্গে ওনার চেম্বারে গিয়ে বসলেন। শীলা, শ্রীরাধার ফাইলে দেওয়া বিবরণ চোখের সামনে খুলে ধরলেন। পেশেন্টের বাবার দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনি ফাইলে মেয়ে বয়স লিখিয়েেন সতেরো অর্থাৎ নাবালিকা। আপনারা কি জানতেন, শ্রীরাধা গর্ভবতী ছিল?
কিন্তু এটা কী করে সম্ভব?
তার উত্তর তো একমাত্র শ্রীরাধাই দিতে পারবে। ওর একটি ফার্টিলাইজড এগ গর্ভাশয় অবধি পৌঁছোতে পারেনি। ফ্যালোপিয়ন টিউবেই আটকে ছিল। গর্ভের আকার বড়ো হতেই নালি ফেটে গিয়ে ব্লিডিং শুরু হয়েছিল। আমরা নালির ওই অংশ কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছি। এখন আর ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
ডাক্তারের কথা শুনে শীলার মা-বাবার মুখে আশ্চর্য হওয়ার অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। মুহূর্তের মধ্যে ওঁরা লজ্জায় মাথা নীচু করে নিলেন।
সপ্তাহ খানিক পর শ্রীরাধার ডিসচার্জ হওয়ার কথা। শীলার অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে জিজ্ঞেস করল, ডিসচার্জ ফাইলে কী লিখব ম্যাডাম? আপনি বলেছিলেন ডিসচার্জ ফাইল তৈরি করার সময় আপনাকে একবার জিজ্ঞেস করতে।
ওকে, পেশেন্টকে যে ডিসচার্জ স্লিপটা দেওয়া হবে, তুমি তাতে সব সত্যিটা লেখো। আর হাসপাতালের ফাইলে লেখো ডান দিকের ফ্যালোপিয়ন টিউব ফেটে যাওয়ার পরে, সেটা আপারেশন করে বার করে দেওয়া হয়েছে। একটা নোট লিখে দিও যে, সার্জারির ডিটেল রিপোর্ট গাইনিকোলজিস্টের ফাইলে রয়েছে। এই ডিটেল পেপার্স-এর ফাইল আমাকে দিয়ে দিও। এই পুরো ব্যাপারটা যেন আমাদের দুজনের মধ্যেই থাকে। তুমি নিজে একজন মেয়ে হয়ে নিশ্চয়ই এটার গুরুত্ব বুঝতে পারছ।
কথোপকথনের মধ্যেই সৌম্য এসে স্ত্রীয়ের কেবিনে ঢুকেছিলেন। চুপচাপ বসে স্ত্রীয়ের কথা শুনছিলেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই শীলাকে বললেন, এটা তুমি কী করছ? হাসপাতালের ফাইলেই অপারেশন নোটস থাকতে দাও। এটা তোমার করা উচিত নয়। পেশেন্টের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে বলে, তুমি হাসপাতালের নিয়ম ভাঙতে পারো না।
সৌম্য তুমি যা বলছ, তা একদম ঠিক। কিন্তু ভেবে দ্যাখো মেয়েটি নাবালিকা, বাচ্চা মেয়ে বললেও ভুল হবে না। ওর এই অবৈধ প্রেগন্যান্সি যদি একবার ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে মেয়েটির বদনামের শেষ থাকবে না। মেয়েটির ভবিষ্যৎও নষ্ট হয়ে যাবে। আমি ডাক্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন নারী। আমি মেয়েটির ব্যথা খুব ভালো বুঝতে পারি।
শীলা, শ্রীরাধার মা-বাবাকে ডেকে পাঠালেন নিজের কেবিনে। হাসপাতালের নিয়মকানুন বুঝিয়ে বললেন, দেখুন আপনাদের ফাইলে আমাকে সত্যিটা লিখতেই হবে। ফাইল আপনাদের সুতরাং ওটা নিয়ে আপনারা যা খুশি করতে পারেন। চাইলে নষ্ট করেও দিতে পারেন। আপনাদের মেয়ে ভালোর জন্য আমার পক্ষে যতখানি সম্ভব আমি সেটা করেছি। এবার ওর ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে।
মা জিজ্ঞেস করলেন, শ্রীরাধা ভবিষ্যতে আদৌ মা হতে পারবে কি?
হ্যাঁ, মা হতে পারবে। ওর একটা ফ্যালোপিয়ন টিউব সম্পূর্ণ ঠিক আছে।
কিন্তু অপারেশনের দাগ তো পেটে থেকেই যাবে। বিয়ের পর যদি ওর স্বামী দেখে কিছু সন্দেহ করে?
আমি ল্যাপ্রোস্কোপিক পদ্ধতিতে সার্জারি করেছি। ছোট্ট একটুখানি জায়গা কাটতে হয়েছে। সুতরাং পেটে কোনও বড়ো দাগ থাকবে না, তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। শ্রীরাধার বিয়ে এখনও অনেক দেরি আছে। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি, ও এখন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়। মাস্টার্স করে তবেই বিয়ে করবে আপনাদের মেয়ে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দেওয়ার পর বাড়ি এসে শ্রীরাধা মায়ের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ল। লজ্জা যেন ওকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। মা, আমি আর কারও কাছে মুখ দেখাতে পারব না! বেঁচে থেকে আমি কী করব?
খবরদার রাধা এমন বোকার মতো কথা মাথাতেও আনবি না। একটা দুর্ঘটনা ভেবে ভুলে যা। এটা নিয়ে কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করবি না। এমনকী বিয়ে পর স্বামীর সঙ্গেও না। এখন মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আমরা খুব ধুমধাম করে তোর বিয়ে দেব, চিন্তা করিস না।
শ্রীরাধার মা স্বামীকেও বললেন, এই ব্যাপার নিয়ে রাধাকে তুমি কিচ্ছু বলবে না। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। এই পুরো ঘটনায় ও খুব লজ্জিত। ও এখন পড়াশোনা নিয়ে থাকতে চায়। ভাগ্য ভালো যে, এরকম একজন ভালো লেডি ডক্টর-এর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছিল। যিনি আমাদের সম্মান বাঁচাবার জন্য যতখানি সম্ভব সহযোগিতা করেছেন।
এই ঘটনার পর আট বছর কেটে গেছে। আজ শ্রীরাধা নিজের স্বামীর সঙ্গে আবার ডা. শীলার হাসপাতালে এসে হাজির হয়েে। আড়াই মাসের গর্ভবতী সে। ওর ডাক্তারই শ্রীরাধাকে, ডা. শীলা বোসের কাছে রেফার করেছেন।
শ্রীরাধা আর তার স্বামীর সঙ্গে কথার শেষে, শ্রীরাধার স্বামীকে কেবিনের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে ডা. শীলা চেক-আপের জন্য শ্রীরাধাকে বেডে শুইযে দিলেন। পরীক্ষা করে বললেন, পেটের দাগটা তো একেবারেই মিলিয়ে গেছে দেখছি। এখন ক’মাস চলছে?
আড়াই মাস চলছে ম্যাম।
বাচ্চা একদম ঠিক আছে। খাওয়া-দাওয়ার খেযাল রাখতে হবে আর অ্যাক্টিভ থাকবার চেষ্টা করবে সবসময়। এতে নর্মাল ডেলিভারি হতে সুবিধা হবে। কমপ্লিট রেস্টের কোনও দরকার নেই তোমার। তোমার স্বামী বাইরে বসে ছটফট করছেন, তোমাকে খুবই ভালোবাসেন, তাই না?
হ্যাঁ ম্যাম। আমার অতীতের ঘটনা ওনাকে কিছুই জানাইনি। আমি তো আত্মহত্যা করব বলেই ঠিক করে ফেলেছিলাম, আপনিই আমাকে মরার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আপনার জন্যই এত সুন্দর জীবন পেয়েছি। এই ঋণ কোনও দিন আমি শোধ করতে পারব না। শ্রীরাধার চোখ জলে ভরে আসে।
আচ্ছা ঠিক আছে। এখন শিগগির স্বামীর কাছে যাও। ও বেচারা উত্কণ্ঠায় ছটফট করে মরছে। হাসতে হাসতে শীলা বললেন।
চোখে জল নিয়ে শ্রীরাধা কেবিন থেকে বাইরে এল। ওকে দেখে স্বামী রথীন দৌড়ে এল, কী হল শ্রীরাধা, সব ঠিক আছে তো? তোমার চোখে জল কেন?
রথীন এটা হচ্ছে আনন্দের অশ্রু। শ্রীরাধার শরীর আর বাচ্চা দু-ই একদম ঠিক আছে। পরের বার মিষ্টি নিয়ে আসতে ভুলো না শ্রীরাধা। ওরা দুজনের কেউই খেয়াল করেনি, কখন ডা. শীলাও শ্রীরাধার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ওনার কথাতে দুজনের চমক ভাঙে। রথীন আর শ্রীরাধা হাসিমুখে শীলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসে। নবজাতকের আগমনের স্বপ্নে দুজনেই বিভোর হয়ে ওঠে।