বাস্তার জেলার অন্তর্গত একটুকরো অপাপবিদ্ধ অরণ্যের ঠিকানা কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। ২০০ বর্গ কিমি তরাই বনভূমি ছেয়ে আছে শাল, সেগুন, টিক, অর্জুন, মহুয়া, কেন্দু, খয়ের-সহ – নানা চেনা অচেনা গাছপালা। রয়েছে নানা ওষধি গাছও। জঙ্গলের বুক চিরে বয়ে চলেছে কাঙ্গের নদী। সোঁদা গন্ধমাখা আদিম অরণ্যে পাথরের গায়ে, জমে উঠেছে কালচে সবুজ শ্যাওলার পরত আর ছত্রাক৷ পাথর জড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফার্ণের দল। আদিবাসী মানুষ আর পশুপাখি – জঙ্গলের সব আদিম বাসিন্দাই এখানে মিলেমিশে বাস করে। নানান প্রজাতির হরিণ, শম্বর, শেয়াল, বনবেড়াল, বুনোশুয়োর, চিতা, কাঠবিড়ালি, নানা জাতের সাপ, এমনকী বাঘের দেখাও মিলতে পারে এই ঘন অরণ্যে৷ গাছের পাতার শব্দে মিশে যায় ঈগল, কাঠঠোকরা, পেঁচা, ময়ূর, মাছরাঙা, বুনো পায়রার বিচিত্র আওয়াজ। দেখা মিলতে পারে বাস্তারের বিখ্যাত পাহাড়ি ময়নার৷ গান গাইতে ভারি ওস্তাদ এরা। ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক বন্ধ থাকে।
ছত্তিশগড়ের এই জাতীয় উদ্যান একটি অন্যতম প্রিয় ডেস্টিনেশন ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফারদের কাছে।কারণ বেশ কিছু বিরল জন্তুজানোয়ার আর পাখির দেখা মেলে এই জঙ্গলে। অচেনা গাছ-গাছড়ায় ঘেরা এই বনস্থলিতে লেপার্ড, হায়েনা, বার্কিং ডিয়ার ও কুমিরের বাস। জগদলপুরের রেলস্টেশন থেকে মাত্র ২৭ কিমি দূরত্বে এই পার্কের অবস্থান।
কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ঢোকার মুখেই কাঙ্গের নদীর বুকে তিরথগড় জলপ্রপাত। জগদলপুর থেকে দূরত্ব ৩৯ কিমি। ১০০ ফুট ওপর থেকে পাহাড়ের ধাপ বেয়ে নেমে এসেছে দুধসাদা জলপ্রপাত। অনেকগুলি সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছনো যায় জলপ্রপাতের পায়ের কাছে।
জিপ-সাফারি ও জঙ্গলে ঘোরার গাইড দুয়েই ব্যবস্থা আছে এখানে। আপনার যদি বন্যপ্রাণ বিষয়ে আগ্রহ থাকে, তাহলে গাইডের সাহায্যে আপনার তথ্যের ঝুলি ভরে উঠবে। তবে শীত-ই জঙ্গল ঘোরার পক্ষে উপযুক্ত সময়।
এই জঙ্গলে বন্যপ্রাণী ছাড়াও ঘোরার আরও কিছু আকর্ষণ রয়েছে। ছত্তিশগড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলপ্রপাত ও প্রাচীন গুহার জন্য প্রসিদ্ধ। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যেই রয়েছে কৈলাশ কুটুম্ব গুহা।
তিরথগড় থেকে ১ কিমি এগিয়েই আদিম অরণ্যের বুকে এই প্রাচীন গুহা কুটুমসর। মাটির গভীরে প্রায় ৩৫ কিমি নীচে ২৫০মি দীর্ঘ গুহাটিতে সংকীর্ণ ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। পাহাড় চুঁইয়ে জল পড়ে পড়ে গুহার দেওয়ালে তৈরি হয়েছে স্ট্যালাগমাইট-স্ট্যালাগটাইটের অপরূপ সব কারুকার্য।বহু যুগ ধরে লাইমস্টোনের পরত জমা হয়েছে গুহার গায়ে৷এই গুহা বহু প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী। গুহার ভেতরে দিনের বেলাতেও জমাট অন্ধকার৷ গাইডের সৌরলন্ঠনই ভরসা। সঙ্গে টর্চ রাখলে সুবিধা হবে।
কুটুমসর গুহায় প্রবেশের জন্য জগদলপুরে পর্যটনের অফিস থেকে টিকিট কাটতে হবে। গুহামুখ থেকে ১০ কিমি আগে চেকপোস্ট। এখানে রসিদ জমা দিয়ে গাইড ও লাইট নিয়ে নিন। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন গুহা খোলা থাকে।
প্রকৃতির মধ্যেই যদি অবসরের দিনগুলো কাটাতে চান, তবে অবশ্যই পৌঁছে যান জঙ্গলের গহীনে কাঙ্গের ধারার কাছে। পাথরের চট্টানের উপর শুয়ে শুয়ে শুনুন জলের শব্দ আর পাখির ডাক।
জঙ্গল ঘুরে দেখার পাশাপাশি ঘুরে দেঘুন কাঙ্গের ঘাটির আদিবাসী গ্রামগুলি। পোশাক-আশাক, রন্ধনকলা, শিল্পসামগ্রী সবেতেই এক বৈশিষ্ট্যের ছাপ আছে ওই অঞ্চলের মানুষের। ঘুরে দেখুন পার্কের অদূরে ভারত মিলাপ মন্দির।
কীভাবে যাবেন – জগদলপুর থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে এই জাতীয় উদ্যান। জগদলপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিন, বাস-ও পাবেন এখানে পেঁছোনোর জন্য।
কোথায় থাকবেন – কুটুমসর আর তিরথগড়ে রয়েছে ফরেস্ট রেস্ট হাউস। জগদলপুরে থাকার বেশ কিছু ভালো হোটেল রয়েছে।ছত্তিশগড় টুরিজমের জগদলপুরে আসানা টুরিস্ট রেস্টহাউস ও চিত্রকোটে রিসর্টও আছে।