‘কী ব্যাপার, তুমি তো রিভার্স গিয়ারে রয়েছো দেখছি’, ‘লুকিং সো হট্’, ‘ফাটাফাটি দেখতে লাগছে তোমাকে’, ‘ইউ আর গ্লোয়িং ডে বাই ডে’ প্রভৃতি কম্প্লিমেন্টস শুধু তরুণীদেরই প্রাপ্য হবে কেন? পঞ্চাশোর্ধ মহিলারাও পেতে পারেন এমন কমপ্লিমেন্টস। তবে এরজন্য নিজেকে বদলাতে হবে। শরীর মনকে চাঙ্গা করে তুলতে হবে নতুন উদ্যমে।

আসলে পঞ্চাশ বছর বয়স পেরোলেই ‘জীবনের অর্ধেক সুখ বিসর্জন গেছে’ এমন এক বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়ে যায় মনে। সুন্দরভাবে সাজা, ফিটফাট থাকা প্রভৃতি প্রায় বন্ধ করে দেন অনেকে। কোন বইতে লেখা আছে যে, পঞ্চাশ পেরোলে আর ফ্লার্টি থাকা যায় না?

ব্রিটিশ মহিলারা সত্তর বছর বয়সেও নিজেকে প্রৌঢ়া ভাবেন না। সাম্প্রতিক সমীক্ষার ফলও প্রমাণ করেছে, এখন ৫৫ বছর বয়সের পর প্রৌঢ়ত্ব শুরু হয়। তাই সময়ের আগে মনে যেন প্রৌঢ়ত্ব না ছায়া ফেলে। অতএব, রপ্ত করুন পঞ্চাশেও তারুণ্য বজায় রাখার কৌশল।

মেক-আপ অ্যান্ড ড্রেস-আপ

বিউটি এক্সপার্ট এবং কস্মেটোলজিস্ট সংগীত সভরওয়ালের মতে, পঞ্চাশ বছর বয়সের মধ্যে যেহেতু মেনোপজ হয়ে যায়, তাই ত্বকের জেল্লা কিছুটা হারিয়ে যায়। অতএব, লোকের চোখে আপনার তারুণ্য ফিরিয়ে আনার জন্য হাল্কা (মানানসই) মেক-আপ এবং আকর্ষনীয় পোশাকের প্রয়োজন।

ঘরোয়া উপায়

অ্যালোভেরা জেলঃ ত্বককে রিজুভিনেট করার জন্য ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল। কারণ, ওতে মজুত থাকে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।

আই জেলঃ পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে চোখের চারিদিকে ফাইন লাইন্স এবং ব্ল্যাক শ্যাডো দেখা দেয়। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য আই জেল ব্যবহার করা জরুরি।

নাইট ক্রিমঃ ত্বকের স্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য নাইট ক্রিম-এর জুড়ি নেই। এই ক্রিম ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘সি’ যুক্ত। ডার্ক স্পট্‌স থেকে মুক্তি দেয় এই ক্রিম।

স্কিন এক্সফোলিয়েশনঃ ডেড স্কিন দূর করে ত্বকের যৌবন ফিরিয়ে দেয় স্কিন এক্সফোলিয়েশন।

ময়শ্চারাইজিং ক্রিমঃ পঞ্চাশ বছর বয়সের পর ত্বকে রুক্ষতা আসবেই। তাই রুক্ষতা কাটাতে নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। আসলে ময়শ্চারাইজার-এর মধ্যে থাকে পেট্রোলিয়াম জেলি এবং হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা ত্বক নরম ও মোলায়েম রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে বজায় রাখে তারুণ্য।

সার্জিক্যাল উপায়

বোটক্সঃ ত্বকের বয়স বেড়ে যাওয়া আটকায় বোটক্স। বলিরেখা (ফাইন লাইন্স) পড়তে দেয় না, ত্বককেও রাখে টানটান।

স্কিন পলিশিংঃ ত্বককে মৃত কোশ-মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন স্কিন পলিশিং। এই পদ্ধতিতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

স্কিন লাইটিনিংঃ ত্বকের যাবতীয় খুঁত আটকানো যায় এই টেকনিক ব্যবহার করে। অনেকে ফাউন্ডেশন বেশি ব্যবহার করে মেক-আপ করেন, যা ত্বকের ক্ষতি করে। বলিরেখার জন্ম দেয়। তাই এই স্কিন লাইটিনিং প্রয়োগ করার পাশাপাশি, বেশি করে জল পান করুন। পর্যাপ্ত ঘুমোন এবং ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে নির্মেদ থাকুন।

স্মার্ট ড্রেসিং

ফ্যাশন ডিজাইনার মীনাক্ষী খান্ডেলওয়ালের মতে, পঞ্চাশ বছর যদি ফিজিক্যালি ফিট থাকেন, তাহলে চলতে পারে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ড্রেস। যেমন– মিডি, গাউন, লংস্কার্ট প্রভৃতি। ব্যবহার করতে পারেন লাইক্রা ফেব্রিক। এর ব্যবহারে স্লিম এবং স্মার্টলুক পাবেন। তবে মোটা কাপড়ে তৈরি আনপ্রফেশনাল জিন্স পরবেন না, এতে বয়স বেশি মনে  হবে। মসৃণ কাপড়ে তৈরি ওয়েলফিটেড পোশাক পরুন।

হেয়ারস্টাইল

সৌন্দর্য বাড়াতে চুলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই চুলের যত্ন নিন। ভাজাভুজি কম খাবেন, এতে লিভার খারাপ হবে এবং লিভার খারাপ হলে তার কুপ্রভাবে মাথার চুল ঝরে যেতে থাকবে। তাই চুলের যত্ন নিন এবং চেহারার সঙ্গে মানানসই হেয়ার স্টাইল করুন। শ্যাম্পু করার পর প্রয়োজনে চুল ছেড়ে রেখে নিজেকে সেক্সি করে তুলুন। মাঝেমধ্যে হেয়ার-কাট করে হেয়ার স্টাইল চেঞ্জ করুন।

ফ্লার্টিং-এর কৌশল

প্রথমেই নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে নিন যে ফ্লার্টিং বন্ধুত্বের-ই প্রকারভেদ মাত্র। তাই এটার জন্য অপরাধবোধ হওয়া উচিত নয়। একটা বাড়তি অ্যাটেনশন পেতে সকলেরই ভালো লাগে। ফ্লার্টিং-কে ওই উদ্দেশ্যেই কাজে লাগান।

  •   যাকে ফ্লার্ট করতে চাইছেন তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। মুখে মৃদু হাসি রাখুন। মনে রাখবেন, যার জন্য আপনি হাসছেন, তিনি যদি আপনার হাসির জবাব দেন হাসি দিয়ে, তাহলে ভাববেন আপনি সফল। অর্থাৎ আপনি ফ্লার্ট করতে পেরেছেন। এরপর সাধারণ কথাবার্তা থেকে সরে গিয়ে শুরু করুন ব্যক্তিগত কথাবার্তা। এতে আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
  •   পছন্দের মানুষটি যদি আপনার চুলের, মুখশ্রীর, পোশাকের কিংবা ব্যবহারের প্রশংসা করেন, তাহলে আপনি তা হাসিমুখে অ্যাকসেপ্ট করবেন ধন্যবাদ জানিয়ে।
  •   ডবল মিনিং কথা না বলে কিংবা ভালগার জোক্স শেয়ার না করে বরং বডি ল্যাংগোয়েজ দিয়ে আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
  •   নিজেকে ভালোবাসুন। খুশি থাকুন। জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য সময় বের করুন। যদি সত্যিই প্রেমে পড়ে থাকেন কারও, তাহলে বয়স পঞ্চাশ পেরোলেও আপনার মনের বয়স যে বাড়েনি, চাইলে এখনও যে আপনি শরীরী সুখ দিতে কিংবা নিতে পারেন, তা বুঝিয়ে দিন আপনার চোখের ভাষায়।

পঞ্চাশেও যাঁরা তরুণী

  •   ব্রিটিশ অভিনেত্রী জুলিয়ানা মুরঃ ৫৪ বছর বয়সেও এই অভিনেত্রী হটেস্ট সেলেবদের তালিকায় রয়েছেন।
  •   আমেরিকান অভিনেত্রী কর্টলি কোক্সঃ ৫১ বছর বয়সেও শরীর ফিট রাখার জন্য অ্যারোবিক্স এবং কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ করেন। তাই এখনও তিনি হট্।
  •   ড্রিম গার্ল হেমা মালিনীঃ ৬০ বছর বয়সেও হেমাকে দেখলে ভক্তদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। তাঁর লাবণ্যময়ী রূপ আর সেক্সি হাসি দেখলে এখনও অনুরণন তোলে মনে।
  •   রেখার কামালঃ কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ি পরে যখন তিনি কোথাও উপস্থিত হন, তখন কে বলবে তাঁর বয়স ৬০-এর উপর ? এখনও তিনি হার্টথ্রব।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...