ইদানীং কি প্রেম প্রসঙ্গটাই আপনার কাছে বিষময় ঠেকছে? সিনেমার পর্দায় কিংবা পাশের বাড়ির টিনএজার মেয়েটির প্রেম করা দেখে, মাঝে মাঝেই নিজের বিরূপ অদৃষ্টকে দোষারোপ করছেন? তাহলে আপনাকে একটিই কথা বলা যেতে পারে– ‘ওয়েলকাম টু দ্য লোনলি হার্ট্‌স ক্লাব’। ব্রেক-আপ শব্দটা এখন প্রায় জলভাতের মতো আকছার ঘটা একটা ঘটনামাত্র। কিন্তু প্রেম ভেঙে যাওয়া সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত করে না– এমন মানুষ বোধহয় নেই। তাই বলে কি নিজের দুঃখের উপর ব্যান্ড এড লাগাতে লাগাতেই কাটিয়ে দেবেন  বাকি জীবনটা ?

তার চেয়ে বরং নিজেকে সিমপ্যাথাইজ না করে একটু অন্যভাবে ভাবুন। সেলিব্রেট করুন নিজের ‘সিংগলহুড’।

ভেবে দেখুন শেষ কবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছেন। প্রেম ভেঙে গেছে বলেই কি নিজেকে অসুন্দর করে রাখবেন? নিজের জন্য বাঁচুন। আপনার ফিল গুড ফ্যাক্টরটাই আপনাকে পুনরুজ্জীবিত হতে সাহায্য করবে। আর রইল আমাদের কিছু টিপ্স, আপনার নতুন জীবনের শুভেচ্ছায়।

ব্যাকপ্যাকিং

একাকিত্ব দূর করার প্রথম হাতিয়ার হিসেবে হাতে তুলে নিন ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এর একটি কপি। এটি একটি অতুলনীয় ট্রাভেল ম্যাগাজিন যার সূত্রপাত আপনারই মতো একজন ‘সিংগল’-এর হাত দিয়েই। একাকিত্বকে অভিসম্পাত না দিয়ে, আপনার ব্যাকপ্যাকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভরুন। চোখ ভরে দেখুন প্রকৃতিকে। কোনও নির্জন পাহাড়ি গ্রামে কাটিয়ে দিন কয়েকটা দিন। স্থানীয় সাধারণ মানুষের জীবনশৈলী আপনাকে আপনার একঘেয়ে জীবনচর্যা থেকে টেনে বের করে আনবে। দেবে জীবনের অন্য এক স্বাদ।

রিডিং হ্যাবিট

পট্যাটো ওয়েফার চিবোতে চিবোতে, মিউজিক সিস্টেমে স্যাড সং শুনতে শুনতে আপনার চিরকালের প্রিয় রিডিং হ্যাবিটটা কি একেবারেই ভুলতে বসেছেন? এই সময়টাই কিন্তু পারফেক্ট, সেটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। চলে যান কাছাকাছি কোনও বুকস্টোরে। অক্সফোর্ড বা স্টারমার্ক। বই হাতে নিয়ে সেখানে বসে, পড়ার সুযোগ তো রয়েছেই। ফলে সময় নিয়ে দেখেশুনে কিনে আনতে পারবেন আপনার পছন্দের বই। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক বেস্ট সেলারের তালিকা থেকে দাগিয়ে নিতে পারেন আপনার ‘মাস্ট রিড’ গুলিও।

ফল ইন লাভ উইথ ইয়োরসেল্ফ

নিজেকে ভালোবাসতে না পারলে হয়তো অন্যকেও ভালোবাসা যায় না। তাই একটা গোটা দিন কাটান নিজের সঙ্গে। এমন কোনও কিছু আছে কি, যা দীর্ঘদিন ধরে নিজের জন্য কিনবেন ভেবেও নানা কারণে পিছিয়ে গেছেন? তাহলে শুরু করুন সেই ইচ্ছাপূরণ দিয়েই। নিজেকে গিফ্ট করার আনন্দই আলাদা। পছন্দের রেস্তোরাঁয় খেতে যান, বা বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন নিজের প্রিয় ডিশ। ইচ্ছে হলে ‘বুক মাই শো’-তে কেটে ফেলুন পছন্দের মুভি টিকিট। ক্ল্যাসিকাল মিউজিক প্রোগ্রাম বা থিয়েটার দেখতে ভালোবাসলে, সেটাও দেখে আসতে পারেন। স্যালনে গিয়ে নিজের হেয়ারস্টাইল বদলে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন একটা লুক-ও দিতে পারেন। জীবনটা বেশ অন্যরকম লাগবে।

ফিরিয়ে আনুন লেখার অভ্যাস

নিজের ভাবনাগুলো ডায়ারিতে লেখা কি একসময় আপনার প্রিয় অভ্যাস ছিল? সময়ের আস্তরনে সেই অভ্যাস চাপা পড়ে গেছে? তাহলে এটাই সঠিক সময় নিজের যাবতীয় হতাশা, দুঃখকে কাগজে কলমে প্রকাশ করার। চাইলে নিজের একটা ব্লগ তৈরি করতে পারেন, যেখানে নিজের সৃষ্টিশীল মনের নানা দিক মেলে ধরতে পারবেন। আপনার কবিতা, ছবি বা অন্য কোনও সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ করার প্ল্যাটফর্ম করুন এই ব্লগকে।

Enjoy with friends

রি-কানেক্ট

পুরোনো বন্ধুরাই কিন্তু আপনাকে একাকিত্ববোধ থেকে টেনে বের করে আনতে পারে। এখন তো   নানারকম যোগাযোগের মাধ্যম। ফেসবুক বা ওয়াট্‌স অ্যাপ থেকে খুঁজে নিন আপনার স্কুল-কলেজের বন্ধুদের। একটা বিকেল বা সন্ধে কাটিয়ে দিন নস্টালজিয়ার ডানায় ভর করে। পুরোনো আড্ডার ঠেক, চায়ের দোকান বা ফুচকাওয়ালার কাছে চলে যান দল বেঁধে। দেখবেন দুঃখগুলো খুশির ফানুশ হয়ে উড়ে গেছে।

হাসির বিকল্প নেই

হাসির হিলিং পাওয়ার-কে অস্বীকার করার উপায় নেই এই ব্যস্ত দিনকালে। তাই দুঃখের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে, হাসিকে করুন হাতিয়ার। হঠাৎ ভেঙে যাওয়া প্রেম আপনাকে বোনাস হিসাবে যেটা দিয়েছে সেটা হল– প্রিয়জনদের সঙ্গে, আপনার পরিবারের সঙ্গে, হেসেখেলে জীবন কাটানোর একটা সুযোগ।

সিং অ্যান্ড ডান্স

‘মিউজিক’ সব দুঃখ নিমেষে ভুলিয়ে দেয়। নিজে কোনও ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে জানলে তো কথাই নেই। গিটারের জ্যামিং সেশন বা ক্যারাওকের সঙ্গে গান– নিমেষে আপনাকে রিফ্রেশ্ড করে তুলবে। কিছু অ্যাপ-এর সুবাদে আপনি হয়ে উঠতে পারেন এমন কী স্টার সিংগারও

সিংগলদের জন্য শহরে রয়েছে আরও নানাবিধ এনগেজমেন্টস। এরোবিক্স ক্লাস জয়েন করতে পারেন বা সালসা ডান্স। চাইলে যোগ ব্যায়াম বা মেডিটেশন ক্লাসও আপনাকে নতুন জীবনের রসদ যোগাবে।

নিজেকে অসহায় ভাবা বন্ধ করতে হবে সবচেয়ে আগে৷মনে রাখবেন এই সময়ে বাই চয়েস বহু তরুণ-তরুণীই বেছে নিচ্ছেন সিংগলহুড। স্বাধীনতা খর্ব হবার ভয় থেকেই, ইচ্ছেমতো বাঁচার তাগিদে এই সিদ্ধান্ত। তাই নিজেকে কখনও হেল্পলেস ভাববেন না। সমীহ করুন নিজের একা থাকার ভাবনাকে। তবেই অন্যেও শ্রদ্ধার চোখে দেখবে আপনার একা থাকার এই সিদ্ধান্ত।

‘টিকল ইয়োর ফানি বোন্স, অ্যান্ড ইউ উইল নেভার হ্যাভ আ ডাল লাইফ’– বলছিলেন এই শহরেই স্বাধীনভাবে থাকা এক তরুণী।  সিংগল হওয়াকে সে অনুকম্পার চোখে দেখে না, বরং নিজেকে নিজের মতো করে অবিষ্কার করার একটি সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করেছে।            আপনিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...