শারীরিক রোগ নিয়ে বরাবরই ‘অতিরিক্ত’ চিন্তা করেন অনেকে৷ কেউ কেউ আবার প্রচলিত ভুল ধারণাগুলিকেই আমল দেন বেশি৷ মনে মনে ভয়ে থাকেন, এই বুঝি কোনো বড়ো রোগ অনাহূতের মতো শরীরে বাসা বেঁধে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। তাই ফাঁক পেলেই রোগ নিয়ে ইউটিউবের নানা হেলথ চ্যানেল দেখা, গুগল করা তাদের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়ায়।সাধারণের আলোচনায় স্থান পায় এমন কিছু মিথ আজ বদলাতে চাই আমরা৷ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে সেই ভুলগুলো ভাঙানোর প্রয়াস করা হল এখানে৷
মিথ – টাইট ব্রা ব্রেস্ট ক্যানসার-এর কারণ।
ব্যাখ্যা – এটা প্রাচীন ধারণা। ব্রা টাইট হলে ব্রেস্ট-এ টক্সিন-এর মাত্রা বেড়ে যাবে এবং ক্যানসার হবে। এমন ধারণার সত্যতার প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অতএব, এমন ব্রা পরুন, যা আপনাকে আরাম দেবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ছোটো ব্রা কিন্তু বিগ সাইজ-এর ব্রেস্ট-কে স্মল সাইজ করে দিতে পারে না।
মিথ – বিয়ে করলে এপিলেপ্সি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা – এমন ধারণা ঠিক নয়। তবে এপিলেপ্সি থাকলেও মহিলারা বিয়ে করতে পারেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে নিশ্চিন্তে সন্তানের জন্মও দিতে পারেন।
মিথ – সদ্যজাত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ক্ষতিকারক।
ব্যাখ্যা – একেবারে ভুল ধারণা। শিশু জন্ম নেওয়ার পর মায়ের বুক থেকে হলুদাভ দুধ নিসৃত হয়, তা শিশুকে খাওয়ানো উচিত। কারণ, ওই দুধ খেলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
মিথ – শরীরের কোনও অংশ পুড়ে গেলে দেশি ঘি দিলে যন্ত্রণা লাঘব হবে।
ব্যাখ্যা – না, এরকম কোনও কথা চিকিৎসাশাস্ত্রে কোথাও লেখা নেই। বরং, পোড়া জায়গায় ঘি দিলে আরও বেশি গরম হয়ে টিস্যুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং যন্ত্রণা বাড়বে। তাই পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল দিন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করুন।
মিথ – আমরা মাত্র দশ শতাংশ ব্রেন ইউজ করি।
ব্যাখ্যা – গত শতকে এরকম কথা বলে কর্মীদের থেকে সেরা কাজ আদায় করে নেওয়া হতো। কিন্তু নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ অংশ সবসময়ই সক্রিয় থাকে এবং কাজেও লাগে।
মিথ – এডস রোগীকে স্পর্শ করলেই জীবাণু সংক্রমিত হবে শরীরে।
ব্যাখ্যা – এডস রোগীর বডি ফ্লুইড-এর সংস্পর্শে এলে তবেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। এই বডি ফ্লুইড-এর তালিকায় আছে ব্লাড, সিমেন, ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড, সালাইভা, মাতৃদুগ্ধ প্রভৃতি। যদি এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিকে টাচ করেন কিংবা তার ব্যবহৃত টয়লেট ইউজ করেন, তাহলে কোনও সংক্রমণের ভয় নেই। এমনকী, এডস রোগীকে কামড়ানো মশা যদি আপনাকে কামড়ায়, তাহলেও এডস-এ আক্রান্ত হবেন না আপনি। অতএব এডস রোগীকে ঘৃণার চোখে দেখবেন না, ওদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করুন।
মিথ – এপিলেপ্টিক-এ মূর্ছা যাওয়া রোগীকে জুতোর গন্ধ শোঁকালে জ্ঞান ফেরে।
ব্যাখ্যা – এটা শোনা কথা, কিন্তু প্রমাণিত সত্য নয়। এপিলেপ্টিক রোগী মূর্ছা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসককে নিয়ে এসে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
মিথ – অ্যান্টিবায়োটিক শরীর দুর্বল করে দেয়।
ব্যাখ্যা – অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীর দুর্বল হয় না। শরীর দুর্বল হয় অসুখের কারণে। তবে হ্যাঁ, ক্ষতিকারক জীবাণুর পাশাপাশি গুড ব্যাকটেরিয়াকেও কখনও সখনও মেরে ফেলে অ্যান্টিবায়োটিক। তাই শরীরের স্বভাবিক ক্রিয়াকলাপে বিঘ্ন ঘটে। আর অসুস্থতার কারণে যেহেতু খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো হয় না, সেই কারণেও শরীর কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। অতএব, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে।
মিথ – গ্রিন টি খেলে ওজন কমে।
ব্যাখ্যা – ওজন কমে খুব অল্প, তবে হৃদরোগ আটকায়, জীবাণু দমন করে এবং মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। যেমন – অস্টিয়োপোরোসিস, অ্যানিমিয়া এবং মিসক্যারেজ-এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে গ্রিন টি।
মিথ – কপারটি ব্যবহার করলে মেদ বাড়ে মেয়েদের শরীরে।
ব্যাখ্যা – কপারটি হল ইন্ট্রাইউটেরাইন কন্ট্রাসেপটিভ ডিভাইস। এর সাফল্যের হার ৯৯ শতাংশ। এটি গর্ভরোধ করে। তাই অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ আটকায় এবং মেয়েরা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকেন। কিন্তু শরীরে মেদ জমার সঙ্গে কপারটির কোনও সম্পর্ক নেই। অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় না করে যারা জমান, তাদেরই মেদ বেড়ে যায়।
মিথ – গর্ভবতী মহিলাদের দু’জনের খাবার খাওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা – গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত কিন্তু পরিমাণ দ্বিগুন হবে না। কতটা খাবার খাবেন তা ঠিক করে দেবেন আপনার চিকিৎসক। মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় বেশি খাবার খেয়ে যদি ওজন বেড়ে যায়, তাহলে নানারকম সমস্যা দেখা দেবে। যেমন পিঠে যন্ত্রণা, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকী পেটে গ্যাস ফর্মও করতে পারে। অতএব, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
মিথ – চোখ লাল হলে, অর্থাৎ কনজাংটিভাইটিস হলে অন্যের চোখের দিকে তাকাতে নেই, এতে অন্যেরও একই সমস্যা হবে।
ব্যাখ্যা – অ্যালার্জি কিংবা জীবাণুর দ্বারা যদি চোখ সংক্রমিত হয়, তাহলে চিকিৎসাধীন থাকা উচিত। এই সময় চোখে ধুলো ময়লা ঢুকলে যেহেতু অস্বস্তি হয়, তাই চোখে সানগ্লাস পরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে অন্যের চোখ সংক্রমিত হওয়ার কোনও যোগ নেই। রোগী হাইজিন মেনটেন করলে অন্য কারও সংক্রমণের আর কোনও ভয় থাকবে না।