জীবন বহমান। আজ যা ভালো লাগে, কাল ভালো না-ও লাগতে পারে। কেউ পুরোনোর মধ্যে নতুনত্বের স্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করে, কেউ তা পারে না। যারা পারে তারা সুখী দম্পতি। আর যারা পারে না, তারা জড়িয়ে পড়ে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে। এই সম্পর্ক শারীরিক, মানসিক দুই-ই হতে পারে। এখন এইরকম সম্পর্ক বাড়ছে। কখনও আবার এই সম্পর্ক গোপন থাকছে না, প্রকাশ্যে চলে আসছে। খবরের শিরোনামও হয়ে উঠছে কখনও।

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে সফল করার জন্য কেউ-কেউ তো আবার স্বামী বা স্ত্রীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেও পিছ্পা হচ্ছেন না। এমন অনেকে আছেন, যারা এই অতিরিক্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামী বা স্ত্রী-কে মেরে ফেলে সাজা ভোগ করছেন। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা দুদিকে ভারসাম্য বজায় রেখে দিব্যি খোশমেজাজে আছেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন। এখন প্রশ্ন, কেন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে? এর কারণ কী? বৈবাহিক সম্পর্ককে অটুট রাখার কৌশলটাই বা কী?

গুরুত্বঃ  সংসারে সবাই চায়, তাকে বাড়তি গুরুত্ব এবং মনযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু তা যদি না দেওয়া হয়, তাহলে মনের ভেতর একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন এই ক্ষোভ জমতে জমতে একদিন সমাধানের রাস্তা খোঁজা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আসলে এক ছাদের তলায় বসবাস করে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকলেও, শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে তৈরি হয়ে যায় মনখারাপ, অবসাদ। যার ফলে মন খুঁজে বেড়ায় অন্য কোনও আশ্রয়। তাই স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে টেকন ফর গ্রান্টেড করে ফেলা ঠিক নয়।

প্রশংসাঃ  আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও নানা কারণে নিজেকে নিজে প্রশংসিত করার অভ্যাস আছে মানুষের। তাই প্রশংসা পেতে চান সকলেই। কিন্তু দাম্পত্যে একে অন্যকে কোনওদিনও যদি প্রশংসা না করেন, বাহবা না দেন, তখন একটা অপাংক্তেয় হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয় এবং তখনই সম্পর্কে তৃতীয় কারওর ঢুকে পড়ার পথ সুগম হয়। অতএব, প্রশংসা করাটা জরুরি। ভালো কিছু করলে তারিফ করবেন, এমনকী ভালো পোশাক, ভালো রান্না, ভালো কথা প্রভৃতি সাধারণ বিষয়েও পারলে প্রশংসা করুন।

ক্ষমতাঃ  বৈবাহিক সম্পর্কে যতই ভালোবাসা থাকুক না কেন, কিছু কিছু সাংসারিক ক্ষমতা ভোগ করতে চান স্বামী – স্ত্রী দুজনেই। যেমন, কোথায় কী খরচ হবে, কোন জিনিসটা কেনা হবে, এসব সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা ভোগ করতে চান উভয়েই। যদি এক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে পারেন তাহলে ভালো, নয়তো বিপত্তি। বিষয়টি ছোটো হলেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেকসময় এই ছোটোখাটো বিষয় থেকে ঝগড়া অশান্তির সূত্রপাত ঘটে এবং দাম্পত্যসুখ নষ্ট হয়। ফলে, সুখের আশায় মন খুঁজে নেয় অন্য কাউকে।

relationship article
Extra Marital Affair

ইগোঃ  ভালো কাজে ইগো থাকা ভালো কিন্তু অকারণে ইগো সর্বনাশের মূল কারণ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি অত্যাধিক ইগো থাকে, তাহলে সেই সম্পর্ক মধুর হয় না। আর ঠিক তখন তৈরি হয় অবৈধ সম্পর্কের চাহিদা। ইগোর লড়াইয়ে যখন ঝামেলা চরমে পৌঁছোয়, তখনই দু’জনের মনে হয়, অন্য কারওর সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এভাবেই বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরেও আরও এক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

চাহিদাঃ  সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঠিক যতটুকু যা প্রয়োজন, চাহিদাও থাকা চাই ততটুকু। সংসারে উপার্জনের থেকে যদি চাহিদা বেশি থাকে স্ত্রীর, তাহলে সেই চাহিদা যখন স্বামী পূরণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখনই তৈরি হয় সংঘাত। আর এই সংঘাত চলতে চলতে উভয়ের মনের মধ্যে জন্ম নেয় ‘এক্সট্রা রিলেশন’-এর চাহিদা।

অভাব-অনটনঃ  সংসার চলছিল ঠিকঠাক, হঠাৎ স্বামীর চাকরি চলে গেল, ব্যস! শুরু হল জীবনযুদ্ধ, অভাব-অনটন। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রগাঢ় প্রেম থাকে তাহলে কিছুদিন টেনেটুনে, মানিয়ে নিয়ে বয়ে চলে সংসার। এর মধ্যে যদি স্বামী পুনরায় আর্থিক স্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারে তাহলে ভালো, নয়তো অশান্তির সূচনা। আর এর থেকে মুক্তি পেতেই শুরু হয়ে যায় অন্য কাউকে খোঁজার কাজ। এই অবস্থায় যদি মনের মতো কোনও সঙ্গী পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই।

ঝগড়া-অশান্তিঃ  বিয়ের পর প্রথমদিকে যেটা রাগ-অভিমানের মধ্যে থাকে, অনেকসময় ধীরে-ধীরে তা ঝগড়া-অশান্তিতে পরিণত হয়। কেউ কেউ তো ছোটোখাটো সমস্যাকে বড়ো করে তুলে অশান্তির সূচনা করেন। এর ফলে অশান্ত মন একটু শান্তির আশায় খুঁজে পেতে চায় অন্য কাউকে।

প্রলোভনঃ  সুযোগসন্ধানীরা ফাঁদ পেতেই রাখে। যিনি অল্পে সন্তুষ্ট থাকেন, লোভ সংবরণ করতে পারেন তিনি সেই ফাঁদে পা রাখেন না। কিন্তু অনেকের সেই সংযম থাকে না। তাই তারা প্রলোভনের শিকার হন। চাকরি বাঁচাতে, পদোন্নতি তরান্বিত করতে, স্টার হোটেলে থাকা-খাওয়ার লোভে, দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেতে কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার তাগিদ থেকে ‘এক্সট্রা’ রিলেশন-এর প্রলোভনে পড়ে যান। এরপর যদি স্বামী-সন্তান এবং অতিরিক্ত সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন তাহলে ভালো, নয়তো পরিণতি সুখকর হয় না।

দূরত্ব বাড়লেঃ  পেশাগত কারণে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে এক ছাদের তলায় থাকতে পারেন না অনেকসময়। থাকতে হয় দূর-দূরান্তে। দীর্ঘদিন এভাবে একা থাকতে থাকতে যে শারীরিক অপূর্ণতার সৃষ্টি হয়, তা খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে দাম্পত্যে। ওইসময় যদি কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সে সফল হয় অনায়াসে।

অসুস্থতাঃ  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন যদি কেউ অসুস্থ থাকেন, তাহলে জীবনে একঘেয়েমি চলে আসে অন্যের। আর এর থেকেই জন্ম নেয় অন্য সম্পর্কের চাহিদা। এই সময় যদি কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সেই সঙ্গীটির প্রতি মানসিক ও শারীরিক নির্ভরতা জন্মে যায়।

যৌন অক্ষমতাঃ  সুন্দর-সুঠাম চেহারা দেখে বিয়ে করেও পস্তায় অনেকে। বিয়ের পর যখন দেখা যায় স্বামী কিংবা স্ত্রী, কেউ একজন যৌন অক্ষম, তাহলেই বিপত্তি। দীর্ঘদিন এই অক্ষমতা প্রায় কেউই মেনে নিতে পারেন না। ফলে, শারীরিক চাহিদা মেটানোর তাগিদ থেকে শুরু হয়ে যায় আরও এক বা একাধিক সম্পর্কের সূচনা।

এভাবেই সম্পর্ক ভেঙে নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাত্তা পায় না সামাজিক অনুশাসন। নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে তৈরি হয় নতুন সম্পর্ক গড়ার কাহিনি। সে কাহিনি বৈধ নাকি অবৈধ, এসব ভাবার সময় কোথায় কার?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...