কে যেন বলেছিলেন হৃদয়ে পৌঁছোনোর পথটি গেছে পেট হয়ে! কথাটা প্রত্যেক ভারতীয় পরিবারেই ভীষণ রকম সত্যি।আর সেই জন্যই এক অতি সাধারণ বিষয়ও শুধু মাত্র গল্প বলার গুণে এমন অসামান্য হয়ে ওঠে।
প্রায় দুই মাস আগে প্রকাশিত হয় বহুল আলোচিত এবং প্রশংসিত মালায়ালম ফিল্ম ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’। ফিল্মটি পরিচালনা করেন দক্ষিণের নির্দেশক জিও বেবি। মূলত ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সীমিতসংখ্যক দর্শকের জন্য তৈরি করা হলেও ভিন্নধর্মী এই ফিল্মটি সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। একটি অপেক্ষাকৃত ছোট স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নিস্ট্রিম থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হলেও, এবার অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও –তে স্থান পেয়েছে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্হার দিকে আরও একবার আঙুল তুলেছে ভিন্নধর্মী এই ফিল্মটি।এর জন্য প্রচুর প্রশংসাও লাভ করেছেন পরিচালক জিও বেবি। স্ট্রিমিং সাইট অ্যামাজনের মাধ্যমে আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাবে এটি– এমনই আশা করছে প্রযোজনা সংস্থা।
আপাত ভাবে দেখলে অবশ্য এক নববিবাহিত দম্পতিকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর কাহিনি। ওই দম্পতির মধ্যে, স্ত্রী-টি একজন উচ্চাভিলাষী নৃত্যশিল্পী কিন্তু বিয়ের পর তার অধিকাংশ সময়ই কাটে রান্নাবান্না ও ঘরকন্নার কাজ করে। নবদম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিমিশা সাজায়ন ও সুরজ ভেঞ্জারমুডু।
আমাদের ভারতীয় সমাজে এখনও একটি নারীর জীবনযাপন আবর্তিত হয় রান্নাঘরকে কেন্দ্র করেই। তার বিবাহোত্তর জীবনে সুনাম–দুর্নামের অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায় রান্নাঘরের মাধ্যমেই। এই ছবিতেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকা নারীটির বিবাহ হয় এমন একটি পরিবারে, যা তার বাপেরবাড়ির শিক্ষাদীক্ষা, রুচি প্রকৃতির থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। নারী শরীরের স্বাভাবিক ধর্ম ঋতুমতি হওয়ার ব্যাপারেও যে-পরিবার ভীষণ ভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন।এই সাধারণ গৃহস্থালির ঘটনার পাশাপাশি, সবরিমালা মন্দিরে প্রজননক্ষম নারীদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত ইস্যুটি বেশ স্পষ্ট এ ছবিতে।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এই ফিল্মটির পোস্টার শেয়ার করেছেন পরিচালক । সোশ্যাল মিডিয়ায় বেবি লিখেছেন , ‘শুধু গ্রেট দর্শক এবং নিস্ট্রিমের কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এখন অ্যামাজন থেকেও সম্প্রচারিত হচ্ছে এটি।’ বস্তুত এ ছবির স্থান, কাল এবং চরিত্র কেরালা-নির্ভর হলেও, প্রতিটি ঘটনা এবং পরিস্থিতি ভয়াবহ ভাবে সর্বজনীন।আর সেই কারণেই তা মন ছুঁয়েছে আপামর ভারতীয়ের।