সেবক রোডের ঝুপড়ি হোটেলে গরম ধোঁয়া ওঠা মোমো আর ঝাল ঝাল চাটনি খেয়ে গাড়ি ছোটাবেন পাকদণ্ডি পাহাড়ি পথ বেয়ে যত উপরে উঠবেন পথ আরও সর্পিল আরও আঁকাবাঁকা হবে। সবুজের অজস্র শেড-এ ঢাকা পাহাড়, নাম না-জানা ফুলের বাসর এমন স্বপ্নের ল্যান্ডস্কেপ, যেন এক নিমেষে আপনাকে পেঁছে দেবে নিরন্তর প্রশান্তিতে। আমরা দিচ্ছি দুটি ভিন্ন স্পটের খবর৷এর যে-কোনোওটিই হতে পারে আপনার গ্রীষ্ম যাপনের ঠাঁই৷

জুলুক

ডেস্টিনেশন জুলুক৷ কালিম্পং-এ লাঞ্চ সেরে আবার ছুটবে গাড়ি। পেডং হয়ে সোজা সাড়ে চার ঘন্টায় ঋষি খোলা। প্রথম রাতটা এখানেই হল্ট। এমনই মনোরম দৃশ্য আর কুলকুল করে বয়ে যাওয়া এই ঋষি নদী যে, পথের ক্লান্তির রেশটুকুও থাকবে না।

ইকো টুরজিম-এর কটেজ থেকে পায়ে হেঁটে নদীর উপর সময় কাটানোর অবকাশ সত্যিই মন ভালো করে দেবে।

পরদিন সকালে গরমাগরম পুরি দিয়ে নাস্তা সেরে গাড়িতে উঠুন লিংথাম-এর জন্য। ওটাই পারমিট নেওয়ার চেকপোস্ট। জুলুক যেহেতু বর্ডার, তাই বিশেষ প্রবেশ পারমিট প্রয়োজন।

জুলুক যাওয়ার পথটি অসাধারণ। ওল্ড সিল্ক রুট হিসাবেই এর প্রসিদ্ধি। যত উপরে উঠবেন, ফেলে আসা পথের বাঁকগুলি ছবির মতো ভেসে উঠবে দৃশ্যপটে। ঘন্টা তিনেকের জার্নিতে পৌঁছোবেন জুলুক।

Picturesque Zuluk

নির্জন এই গ্রামে দুপুরেও কনকনে হাওয়া আর তেমনি কনকনে ঠান্ডা। ৬০টি পরিবারের বাস এই জুলুকে। অতীতে এখানে রেশম ব্যবসায়ীরা বিশ্রাম নিতেন সিল্ক পারাপারের সময়। এখন এটা পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় ঠিকানা। রয়েছে কিছু হোম স্টে, রিসর্ট আর গোটা কয়েক চাউমিন ও ভাতের হোটেল। দৈনন্দিন ভিড়ের বাইরে এক নিরালা মায়াভমি।

কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি। ভাড়া গাড়িতে কালিম্পং এসে, ওখান থেকেই গাড়ির বন্দোবস্ত করে নিন রেশম-পথের জন্য।

কোথায় থাকবেন : ইকো কটেজ ও হোম-স্টে রয়েছে ঋষিখোলায়। জুলুকের হোম-স্টের জন্য নেট-এ যোগাযোগ করতে পারবেন।

travel Tumling

তুমলিং : শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী শেয়ার জিপে সওয়ার হলেই, মনটা কেমন পাগলপারা হয়ে ওঠে। ডেস্টিনেশন আপাতত মানেভঞ্জন। তাই ঘুম আসতেই শোয়ার জিপ থেকে নেমে পড়ুন। ওখান থেকেই আবারও শেয়ার জিপ পাবেন মানেভঞ্জনের জন্য। পৌঁছোতে পৌঁছোতে দুপুর। এবারের সফর ঠিক বিলাসিতার সফর নয়। তাই পথ যেভাবে নিয়ে ফেলবে, সেভাবেই সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন।

মানেভঞ্জনে লাঞ্চ সেরে নিয়ে পা-কে প্রস্তুত করুন তুমলিং-এর জন্য। হিমালয়ের কোলে, সিঙ্গালিলা অরণ্যের অন্তর্গত ২৩৯৫ মিটার উচ্চতায় মেঘ-ছাওয়া গ্রাম তুমলিং। ছবির মতো সুন্দর এই নেপালি গ্রামটিতে, প্রায়শই পা পড়ে সান্দাকফুগামী ট্রেকারদের।

মানেভঞ্জন হচ্ছে সান্দাকফুর তোরণদ্বার। টুংলু আর জোড়পোখরি বাটির মতো উপত্যকা। দোকান-পাট, হোটেল, লজ সবই মানেভঞ্জনে মজুদ। পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে,  দুভাবেই এখন সান্দাকফু যাওয়া যায়। আর পথেই পড়ে তুমলিং। দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।

Trek Tumling

মানেভঞ্জন থেকে এগোলেই একে একে পড়ে চিত্রে, লামডুরা তারপর মেঘমা। বস্তুত মেঘের রাজ্যে পদার্পণ। কখনও ভারতে পা, তো কখনও নেপালের সীমান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পথ গেছে। মেঘমা থেকে তুমলিং মাত্র তিন কিলোমিটার। মানেভঞ্জন থেকে গাড়িতে বড়োজোর সোয়া ঘন্টা। মেঘমুক্ত আকাশ আর বিকেলের রোদ চুঁইয়ে পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা আপনাকে স্বাগত জানাবে। সে এক অপার্থিব দৃশ্য। মন বলবে এখানেই থেকে যাই আজীবন।

কীভাবে যাবেন : মানেভঞ্জন থেকে গাড়ি পাওয়া যাবে। তবে পায়ে হেঁটে তুমলিং পেঁছোনোর মজাই আলাদা।

কোথায় থাকবেন : বেশ কিছু লজ বা হোটেল আছে, আর আছে স্থানীয়দের বাড়িতে হোম-স্টের ব্যবস্থা।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...