মেঘের দেশের রাজধানী শিলং, তার মাথায় মেঘালয়ের রানির শিরোপা। মেঘালয়ের আদি বাসিন্দারা হল খাসি, গারো ও জয়ন্তী এই তিনটি উপজাতি। ১৯৭১ সাল। অসম রাজ্যের খাসি, গারো ও জয়ন্তীয়া পাহাড়কে নিয়ে একটি পৃথক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শেষের মুখে। এই সময় প্রশ্ন উঠল নতুন রাজ্যের নামকরণ নিয়ে। এই জন্য গঠিত হল একটি কমিটি। তার অন্যতম সদস্য ছিলেন স্বনামধন্য ভাষাবিদ ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়। অনেক আলোচনার পর স্থির হল রাজ্যের নাম মেঘালয়। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি, মেঘালয় ভারতের একুশতম পূর্ণ রাজ্যরূপে আত্মপ্রকাশ করল।
মেঘালয় বলতে শুধু শিলং নয়। উদ্দেশ্য শিলং-কে কেন্দ্রে রেখে, মাওলিনং, নারটিয়াং, চেরাপুঞ্জি প্রভৃতি স্থান দেখে নেওয়া। ফেরার পথে উমিয়াম লেক রিসর্টে এক রাত কাটিয়ে গুয়াহাটি ছুঁয়ে ফিরে যাব কলকাতার উদ্দেশে। সময় বাঁচানোর জন্য কলকাতা থেকে গুয়াহাটি আসার ব্যবস্থা হয়েছে আকাশপথে।
গুয়াহাটি বিমানবন্দরে বেরিয়ে এসে দেখি যে সেখানে শিলং যাওয়ার গাড়ির বড়োই আকাল। একটি দুটি গাড়ি যেতে রাজি হলেও সেগুলি সব ছোটো গাড়ি আর ভাড়াও চাইছে অনেক বেশি। তাই স্থির করলাম মালপত্র নিয়ে চলে যাব গুয়াহাটি রেলস্টেশনের কাছে পল্টনবাজারে। সেখানে শিলংয়ের গাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দুটি ছোটো গাড়িতে মালপত্র নিয়ে চলে গেলাম পল্টনবাজার। গাড়ির স্ট্যান্ডের বাইরে ‘শিলং-শিলং’ বলে লোক ডাকছে। শুধু শিলং ড্রপ নয় পুরো সফরের জন্য টাটা সুমো সার্ভিসের সঙ্গে গাড়ির চুক্তি করে নিলাম। ভাড়াও বেশ ন্যায্য বলে মনে হল। গাড়ি শিলংয়ের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। পরদিন থেকে ভ্রমণ শুরু।
গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে ১০৩ কিমি দূরবর্তী শিলং পৌঁছোতে সময় লাগবে তিন থেকে চার ঘন্টা। গুয়াহাটি থেকে শিলং যাত্রার পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল জোড়বাট– গুয়াহাটি থেকে ১৬ কিমি দূরে। এখানে পথ দুভাগ হয়ে গেছে। তেজপুর, কাজিরাঙা, জোরহাট এবং ডিব্রুগড় যেতে হলে বাঁদিকের পথে যেতে হবে আর শিলংয়ের পথ সোজা। জোড়বাট থেকে শিলংয়ের দূরত্ব ৮৩ কিমি। জোড়বাটকে পিছনে ফেলে রেখে, হালকা চড়াই পথ ধরে শিলংয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে একে একে পেরিয়ে এলাম বেশ কয়েকটি ছোটো বড়ো জনপদ– বার্নিহাট, উমলিং, নংপো আর উমসনিং। এর পরেই পথের ডানদিকে পড়ল অপরূপ উমিয়াম লেক যা স্থানীয়দের কাছে বড়াপানি নামে পরিচিত। রাস্তা থেকে একটি ভিউপয়েন্ট চোখে পড়ল। এই কৃত্রিম কিন্তু অপূর্ব লেকটি দেখতে দেখতে আরও এগিয়ে যাই। উমিয়াম লেক থেকে মওলাই হয়ে শিলংয়ের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি।