শাড়ির ফ্যাশন আবহমানকাল ধরে চলে এলেও, এর আকর্ষণ ফুরোবার নয়। কর্মব্যস্ততার কারণে ড্রেস পরার চলটা এখন বেড়েছে কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে মানুষের মনে। তাই উৎসবে, অনুষ্ঠানে আজও মেয়েদের পছন্দ শাড়ি। তবে অনভ্যাস এবং ব্যস্ততার কথা মাথায় রেখে ছয় গজের শাড়ি পরা এবং ম্যানেজ করা অনেকের জন্যই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এই কথা মাথায় রেখেই ডিজাইনাররাও পোশাক নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন এবং শাড়ি নিয়েও নানা পরীক্ষা, জল্পনা-কল্পনাও চলছে আধুনিক সময়ে।
এখন মার্কেটে হট্ ফেভারিট, ‘শাড়ি গাউন’ অথবা এটাকে অনেকে লেহেঙ্গা শাড়িও বলতে পছন্দ করছেন। শাড়ি এবং গাউনের কম্বিনেশনে তৈরি শাড়ি গাউন দেখতে খুবই স্টাইলিশ এবং ম্যানেজ করাটাও খুব সোজা। যে-কোনও অনুষ্ঠানের রাত আরও রঙিন করে তুলতে বেছে নিতে পারেন এই শাড়ি গাউন, তবে বাছার আগে কয়েকটা বিষয়ে খেয়াল রাখা খুব দরকার।
শাড়ি গাউন-ই কেন বাছবেন
এভারগ্রিন এবং সবসময় ফ্যাশনে ইন এই শাড়ি গাউন, পরাটা এবং পরে ম্যানেজ করাটা খুবই সোজা। শাড়ির মধ্যে প্লিটস-এর সঙ্গেই ব্লাউজ এবং আঁচল অ্যাটাচ করা থাকে। তাই ড্রেস পরার মতোই খুব সহজে মিনিটের মধ্যে এটা পরা যায়। সবকিছু অ্যাটাচ থাকার ফলে, কুঁচি বা আঁচল খুলে যাওয়ারও ভয় থাকে না এবং ফিটিংস-টাও খুব ভালো হয়।
কীভাবে বাছবেন শাড়ি গাউন
বাজারে শাড়ি গাউনের বিভিন্ন প্যাটার্ন, স্টাইল এবং ফেব্রিক চোখে পড়বে। নিজের জন্য পারফেক্ট শাড়ি গাউন বাছতে হলে খেয়াল রাখতে হবে –
প্যাটার্ন – মার্কেটে শাড়ি গাউনের অনেক রকম ভ্যারাইটি পাওয়া যায়। ধুতি, প্যান্ট স্টাইল, ফিশ কাট, লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে স্ট্রেট কাট সব ধরনের প্যাটার্ন-ই এখন ফ্যাশনে ইন। নিজের পার্সোনালিটি কীরকম, সেটা মাথায় রেখে প্যাটার্ন বাছাটা জরুরি। এমন প্যাটার্ন বাছা উচিত, যেটা নিজের বডি শেপের সঙ্গে মানাবে। যেমন, যাদের হাইট কম তাদের উচিত স্ট্রেট অথবা ফিশ কাট শাড়ি গাউন বাছা কারণ এতে আপনাকে লম্বা দেখাবে। যাদের উচ্চতা বেশি তাদের ফ্লেয়ার্ড শাড়ি গাউন দারুণ মানাবে।
ব্লাউজ – শাড়ি গাউনের ব্লাউজের নানা প্যাটার্ন হয়, যেমন ভন শোল্ডার, অফ শোল্ডার, স্লিভলেস, হাফস্লিভ, ফুলস্লিভ, থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ ব্লাউজ ইত্যাদি। এরই সঙ্গে নেকলাইনেও ডিফারেন্ট ভ্যারাইটি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন রাউন্ড, স্কোয়্যার, ওভাল, বোটনেক। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও, পার্সোনালিটির উপরই নির্ভর করবে, কী ধরনের ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি গাউন বাছাটা বাঞ্ছনীয়।
ডিজাইন – সিম্পল এবং সোবার থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স, জরির কাজ, এমব্রয়ডারি কাজের শাড়ি গাউন, মার্কেটে সহজেই পেয়ে যাবেন। কী অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি গাউন বাছবেন সেটা খেয়াল রাখাটাও খুব জরুরি। যেমন বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিতে পারেন হেভি ওয়ার্কের গর্জিয়াস লুকিং শাড়ি গাউন। কিন্তু ডে-পার্টি, গেট-টুগেদার-এর জন্য সিম্পল, সোবার ডিজাইনই মানাবে ভালো।
কালার্স – হালকা রং থেকে শুরু করে ডার্ক, ব্রাইট কালার্স অথবা ম্যাট কালার্স, সব রকমের অপশন-ই মার্কেটে অ্যাভেলেবেল। স্কিনটোন দেখে কালার বাছা উচিত। রং ফরসা হলে রেড, পিংক, গোল্ড, সিলভার শেড-এর শাড়ি গাউন কেনা যেতে পারে। কিন্তু রং যদি শ্যামলা হয়, লাইট বা প্যাস্টেল শেডের শাড়ি ট্রাই করা উচিত। কোনও কোনও শাড়ি গাউন ডুয়েল শেড, কনট্রাস্ট কালারস অথবা মাল্টি শেডেও বানানো হয়, যেগুলোও ট্রাই করে দেখা যেতে পারে মানানসই লাগছে কিনা।
ফ্যাব্রিক – নেট, ব্রোকেড, জর্জেট থেকে শুরু করে সিল্কের ফ্যাব্রিকেও শাড়ি গাউন পাওয়া যায়। আলাদা আলাদা ফ্যাব্রিকে, শাড়ির লুক এবং ফল-ও ডিফারেন্ট হয়। কোন মরশুমে শাড়িটা পরবেন সেটা মাথায় রেখে ফ্যাব্রিক পছন্দ করা উচিত। শাড়ির লুক-টাও দেখে নেওয়া খুব জরুরি। লাইট ফ্লোয়িং ফ্যাব্রিকের শাড়ি গাউন দেখতে সবথেকে সুন্দর লাগে। এর সঙ্গে ব্লাউজের ফ্যাব্রিক যদি নেট-এর বাছা যায়, তাহলে শাড়ি গাউনের লুক আরও সেক্সি হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। আর আপনার আনন্দ-উৎসবের রাতও হয়ে উঠবে স্মরণীয়।
স্মার্ট আইডিয়া
শাড়ি গাউনে কমপ্লিট লুক পেতে হলে কী করবেন তার কিছু আইডিয়া শেয়ার করা হল।
জুয়েলারি সিলেকশন – শাড়ি গাউনের সঙ্গে হেভি জুয়েলারি পরার ভুল করবেন না। কানের দুল, আংটি ব্রেসলেট পরলেই যথেষ্ট।
হেয়ারস্টাইল – পারফেক্ট লুকের জন্য চুলে হাই অথবা লো ‘বান’ বাঁধতে পারেন। আবার চাইলে স্ট্রেটনিং করিয়ে চুল খোলাও রাখতে পারেন।
মেক-আপ লুক – ডার্ক শেড-এর লিপস্টিক লাগান অথবা স্মোকি আই মেক-আপ, এর সঙ্গে মানাবে ভালো। দুটোর কোনওটাকেই হাইলাইট করবেন না।
ট্রেন্ডি ফুটওয়্যার – স্লিম লুকের জন্য শাড়ি গাউনের সঙ্গে হাইহিল পেনসিল ফুটওয়্যার পরুন। সিম্পল গাউনের সঙ্গে সোবার এবং হেভি গাউনের সঙ্গে স্টোন স্টাডেড ফুটওয়্যার ভালো মানাবে।
ক্লাচ ব্যাগ – শাড়ি গাউনের কালারের সঙ্গে ম্যাচ করে ক্লাচ ব্যাগ ক্যারি করতে পারলে আপনার সাজ সম্পূর্ণ হবে।