বিয়েটা অ্যারেঞ্জড্-ই হোক বা লাভ ম্যারেজ– ওই বিশেষ সন্ধ্যাটার কথা ভাবলেই হূৎস্পন্দনের গতি একটু হলেও সব মেয়েরই বেড়ে যায়। তার উপর থাকে ওই সন্ধ্যায় কেমন দেখতে লাগবে সেটা জানার অদম্য উৎসাহ। হালফিল কনেরা তাই এই সময়ের মেক-আপ ট্রেন্ডস নিয়ে নিজেদের আপডেটেড রাখতে পছন্দ করেন। আপনিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন। জেনে নিন ব্রাইডাল মেক-আপ-এ কী এখন ইন আর কী আউটডেটেড।
এয়ারব্রাশ মেক-আপ
স্প্রে পেন্টিং-এর মতোই এটি কাজ করে। মুখে লাগাবার পরও খুব হালকা এবং ক্লিন ফিলিংস হয়। এই মেক-আপ আপনা-আপনি ব্লেন্ড হয়, ফলে মুখে কোনও দাগ দেখা যায় না। বিয়ের দিন হাই ডেফিনেশন ক্যামেরায় ছবি তোলা হলেও, ছবিতে মুখের কোনও দাগ ধরা পড়ে না ফলে কনেকে খুব সুন্দর লাগে।
ব্রাইট আইজ
ট্যানজরিন (ব্রাইট অরেঞ্জ কালার), ফেয়ারি রেড, রানি পিংক, ইয়েলো– এই শেডসগুলো এবার ফ্যাশনে রয়েছে এবং কনের চোখের মেক-আপে এই রংগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। এরই সঙ্গে কনের চোখকে প্রমিনেন্ট করতে গোল্ডেন শেড-ও ব্যবহার হচ্ছে। ককটেল পার্টির দিন গোল্ডেন কালার ব্যবহার করেই ব্রাইড-এর চোখকে স্মোকি লুক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আই মেক-আপের ক্ষেত্রে হাইলাইট করার জন্য গোল্ডেন, কপার শেডস একটু বেশি ব্যবহার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বোল্ড লুক প্রাধান্য পাচ্ছে
কনের লজ্জানত চোখকে বোল্ড লুক দিতে আগ্রহী মেক-আপ আর্টিস্টরা। চোখের শেপ ডিফাইন করার জন্য জেট ব্ল্যাক লাইনার একটু এক্সটেন্ড করে লাগানোর চল শুরু হয়েছে অথবা ডিজিটাল ফর্মেও লাগানো হচ্ছে। যদি সিংগল আইশ্যাডো ব্যবহার করা হয় তাহলে লাইনারের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক-এর সঙ্গে অন্য কালার মিক্স করা হচ্ছে। যেমন ব্ল্যাক-এর সঙ্গে গ্রিন এবং ব্লু। ন্যাচারাল আইল্যাশ-কে ঘন দেখাবার জন্য আর্টিফিশিয়াল ল্যাশেজ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তার উপরেই মাস্কারা লাগিয়ে ল্যাশ-এর সঙ্গে মার্জ করানো হচ্ছে। ভুরুর ক্ষেত্রে, আইপেনসিলের সাহায্যে ভুরু মোটা এবং ডার্ক দ্যাখোনো ফ্যাশান-এর নবতম সংযোজন।
এমবেলিশড লুক
টিপের ব্যবহার, ব্রাইডের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে। কেউ চাইলে, চোখের উপর স্টাড্স প্রয়োগ করা হচ্ছে। নানারকম অ্যাক্সেসরিজ দিয়ে চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার ক্রেজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কনের সাজে এগুলো অ্যাড করলেই ওভারঅল লুক মডার্ন এবং এমবেলিশড মনে হবে।
ভাইব্র্যান্ট লিপ্স
আগে লিপ্স এবং চোখের মেক-আপ, দুটোর মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে করা হতো। চোখের মেক-আপ ডার্ক হলে ঠোঁটে লাইট শেডের লিপস্টিক লাগানোর চল ছিল। আর চোখে লাইট মেক-আপ করা হলে ঠোঁটে বোল্ড কালার ব্যবহার করা হচ্ছিল। এখন চোখ এবং ঠোঁট দুটোই ব্রাইট রাখা হচ্ছে তবে গ্লসের ব্যবহার খুব কম করা হচ্ছে।
নেল এক্সটেনশন
নখ যদি খুব ছোটো হয় অথবা নখ বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে যেতে থাকে তাহলে নেল এক্সটেনশন টেকনিকের সাহায্য নিতে পারেন। এতে, ভাঙা নখ হলেও তাকে ন্যাচারাল শেপে নিয়ে আসা যাবে। নেল এক্সটেনশন করা নখ দেখতে এবং কাজও করে একদম ন্যাচারাল নখের মতো। এই নখ অ্যাক্রেলিক পাউডার এবং আরও কিছু পদার্থের মিশ্রণে বানানো হয়। এটির সাহায্যে আপনি নখ মনের মতো আকার এবং যতটা লম্বা রাখতে চান ততটাই লম্বা রাখতে পারবেন।
থ্রি-ডি নেল আর্ট
নখে ডিজাইন এঁকে তার উপর স্টাড্স লাগিয়ে নখকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। এছাড়াও আর্ট হিসেবে নখে মিনা-র কাজও করা হয়। মিনাকারির সাহায্যে পোশাকের মতো আভরণ নখের উপর পরিয়ে দেওয়া হয়। পার্মানেন্ট নেল আর্টের জন্য উপরের সজ্জিত পরতটা নখের উপর সিল করে দেওয়া হয়। এই আর্টের পরতটি প্রায় ১ মাস পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে এবং এর চাকচিক্যও এতটুকু কম হয় না। এটি ছাড়াও আকর্ষণীয় রং দিয়ে করা নেল আর্ট বেশি করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বিয়ের আগে করণীয়
বিয়ের সুন্দর মুহূর্তগুলিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতে কনের জন্য দেওয়া হল বেশ কয়েকটি টিপস-
ফাইনাল বুকিং করার আগে
বিয়ের দিন যে আর্টিস্টকে দিয়ে মেক-আপ করানোর মনস্থির করেছেন, তার এই ব্যাপারে কতটা নলেজ রয়েছে পরীক্ষা করে নিন। পার্লারে একটু এক্সট্রা টাইম হাতে নিয়ে যান যাতে বসে দেখে নিতে পারেন ভিতরের ব্যবস্থা কীরকম। তা ছাড়া যিনি মেক-আপ করাবেন তার হাত কতটা পারফেক্ট সেটা জানার জন্য একটা ট্রায়াল সিটিংও নিতে পারেন।
প্রোডাক্টস-এর ডিটেলিং
আর্টিস্ট বা এক্সপার্ট খোঁজার সময়, সে কী মেক-আপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করবে সেটা আগেই জেনে নেওয়া জরুরি। সে যদি ভালো কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার করে তবেই তার কাছে বুকিং ফাইনাল করুন।
হেলদি রুটিন
বিয়ের আগে অনেকসময় একসাইটমেন্ট অথবা ক্লান্তির জন্য হরমোন ডিসটার্ব হয়ে যায়। ফলে ত্বকের অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মতন পুষ্টিকর খাবার, লিকুইড ডায়েট, ৭-৮ ঘন্টার স্ট্রেস ছাড়া ঘুম এবং ব্যায়াম আপনার রোজকার জীবনের অঙ্গ করে নিন।
মুখে হাসি রাখুন
জরুরি হচ্ছে, স্ট্রেসের কাছে মাথা নোয়াবেন না। সমস্ত রকম পরিস্থিতিতে মনে আনন্দ রাখুন। মানসিক ভাবে আপনি যত খুশি থাকবেন ততই আপনার বাইরের চেহারায় উজ্জ্বলতা আসবে।
হোম ট্রিটমেন্ট
এই ফাস্ট লাইফের যুগে নিজের সৌন্দর্যের আকর্ষণ বজায় রাখতে হলে, প্রি-ব্রাইডাল ট্রিটমেন্ট করানোর সঙ্গে সঙ্গে হোম ট্রিটমেন্টও জরুরি যাতে বিয়ের দিন চেহারায় আলাদা গ্লো যোগ হয়। আপনি ভালো কোনও কসমেটিক ক্লিনিকে যান যেখানে ডাক্তার আপনার ত্বক পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় হোম মেড ট্রিটমেন্ট আপনাকে বলে দেবে।
প্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রী
বিয়ে করে নতুন বাড়িতে যাওয়ার পর যা যা প্রসাধনসামগ্রীর আপনার প্রয়োজন হতে পারে, তার একটা লিস্ট বানিয়ে রাখুন। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশের মধ্যে গিয়ে কোনও জিনিসের জন্য অপরের উপর আপনি নির্ভর করতে পারবেন না। সুতরাং প্রয়োজনীয় সব জিনিস য়েমন ক্লিনজিং ক্রিম, শ্যাম্পু, বডি ওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, স্ক্রাব ইত্যাদি আপনি স্কিন কেয়ার কিটে আগেই ভরে রাখবেন। এর জন্য ট্র্যাভেল পাউচ সবথেকে ভালো বিকল্প। এটি আপনার হানিমুনেও কাজে লেগে যাবে।
এছাড়াও বিয়ের আগের দিন ওয়েডিং আউটফিট, ম্যাচিং ফুটওয়্যার, গয়নাগাটি সব এক জায়গায় গুছিয়ে রাখুন যাতে প্রয়োজনের সময় ওগুলো খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট না হয়।