নিত্যনতুন প্রসাধন সামগ্রী বিশ্বেব্যাপী বাজারকে জমজমাট করে রেখেছে। বিজ্ঞাপন দেখে সঙ্গে সঙ্গে সেসব সামগ্রী কিনতে ইচ্ছে করলেও ব্যবহারের আগে প্রোডাক্টটি সম্পর্কে সবকিছু জেনে নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। কোন কসমেটিক প্রোডাক্টটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত এবং মেক-আপ-এর কোন কালার আপনার বেছে নেওয়া উচিত সেই সম্পর্কে কিছু টিপস দেওয়া হল।

 

রিভোলিউশনারি বিউটি প্রোডাক্টস

সিলিকোন মেক-আপ ব্লেন্ডার : এই স্পঞ্জটি ব্যবহার করা হয় সঠিক ভাবে ফাউন্ডেশন এবং কনসিলার লাগাবার জন্য। জলে ভিজিয়ে এবং হাত দিয়ে চেপে জল ফেলে দিয়ে এটিকে কাজে লাগানো হয়।

ফেসিয়াল ক্লিনজিং ডিভাইস : এটি মেক-আপ পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে তৈলাক্ত ত্বকেও অত্যন্ত কার্যকরী। এটি মৃত কোশ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের শোষণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।

ফেস স্লিমিং চিন লিফটিং স্ট্র‌্যাপ : লাইক্রা দ্বারা প্রস্তুত এই স্ট্র‌্যাপ মুখ এবং থুতনিকে সংকুচিত করে পাতলা এবং ডবল চিন রোধ করতে সাহায্য করে। মার্কেটে পাওয়া যায় এই প্রোডাক্টগুলি। এগুলির দাম নির্ভর করে ব্র‌্যান্ড, কোয়ালিটি এবং প্রোডাক্ট টাইপ-এর উপর।

উইমেন বডি কর্সেট, টামি টাকার, বডি শেপার : প্রোডাক্টটি নানা নামে মার্কেটে অ্যাভেলেবল। মেদবহুল শরীরকে শেপ-এ আনতে এটি ব্যবহৃত হয়। ব্লেন্ডেড কটন এবং স্প্যানডেক্স ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি এই প্রোডাক্টগুলি শরীরকে সংকুচিত করে অন্তত ১ থেকে ৩ ইঞ্চি কম দেখায়।

নোজ শেপার : এই সরঞ্জামগুলি সাধারণত খুব মসৃণ ধরনের মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হয়। ক্লিপ-এর শেপের এই টুল নাকে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে নাক পয়েন্টেড, সোজা এবং সুন্দর আকার গ্রহণ করে।

ইলেক্ট্রনিক ব্ল্যাকহেড রিমুভার : হাই-সাকশন পাওয়ার সমৃদ্ধ এই টুল সহজেই ব্ল্যাকহেড, ত্বক থেকে টেনে বের করে আনে। ফলে ত্বকে কোনও দাগ পড়ে না এবং ত্বক পরিষ্কার দেখতে লাগে।

 

মেক-আপ প্রোডাক্টস

  • যারা মেক-আপ করতে ভালোবাসেন তারা ফেস প্রাইমারের গুরুত্ব কতটা খুব ভালো করে জানেন। মেক-আপের প্রথম স্টেপ হল প্রাইমার যা ত্বককে মসৃণ করে এবং ত্বককে মেক-আপের জন্য তৈরি করে। ক্রিম, জেল এবং ওয়াটার-এ ম্যাট এবং শিমার ফিনিশ প্রাইমারের বাজার মূল্য ২২৫ টাকা থেকে ২,৬৬০ টাকা পর্যন্ত
  • লিপ অ্যান্ড চিক স্টেন এমন একটি প্রোডাক্ট, যা কিনা গাল এবং ঠোঁট-কে কালার করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক রকম রঙে এটি পাওয়া যায়। যেমন পিংক, অরেঞ্জ, পপি, কোরাল ইত্যাদি। বাজার মূল্য হল ২২০ টাকা থেকে শুরু করে ২,৮৯০ টাকা পর্যন্ত
  • চিকবোনস হাইলাইট করার জন্য ব্রোঞ্জার ব্যবহার করা হয়। ১৭০ টাকা থেকে শুরু করে ১,৭০০ টাকার মধ্যে বাজারে সহজেই কিনতে পাওয়া যায়
  • নর্মাল মাসকারা-র সঙ্গে সঙ্গে ল্যাগিং মাসকারা ও রোলার মাসকারাও বাজারে পাওয়া যায়। এর দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,১৪০ টাকা পর্যন্ত
  • আইব্রোজ-এর জন্য বাজারে অনেক রকম প্রসাধন সামগ্রী রয়েছে যেমন গুফ প্রুফ আইব্রো পেনসিল, আইব্রোজ শেপিং অ্যান্ড সেন্টার জেল, আইব্রো প্রাইমার, আইব্রো ক্রিম জেল কালার, আইব্রো হাইলাইটার, আইব্রো শেপিং কিট, আইব্রো এনহ্যান্সার, আইব্রো ব্লেন্ডার ইত্যাদি। প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের দাম আলাদা আলাদা যা কিনা ১,২৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,২৯০ টাকা পর্যন্ত
  • মেক-আপ হাইলাইটারও নানা ধরনের পাওয়া যাচ্ছে। লিকুইড, পাউডার, ক্রিম, হাইলাইটার। এর দাম মোটামুটি ৪৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,৬০০ টাকা পর্যন্ত
  • ক্রিম থেকে পাউডার কনটু্যর স্টিক-এর বাজার মূল্য ৫২৫ টাকা থেকে শুরু করে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত
  • ফেস মাস্ক শিট এতদিন কেবল বিদেশেই পাওয়া যেত, এখন ভারতেও সহজে পাওয়া যাচ্ছে, যার মূল্য ১০০ টাকা
  • মেক-আপ সেটিং স্প্রে ২৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২,৬৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

 

কোন রং বাছবেন

স্কিন টোন অনুযায়ী কসমেটিক প্রোডাক্ট বাছা উচিত। যদি আপনার শিরা-র রং সবুজ লাগে দেখতে তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্কিন টোন-এর ধরন ওয়ার্ম আর যদি নীল মনে হয় তাহলে আপনার স্কিন টোন কুল। এর উপর নির্ভর করে কসমেটিক প্রেডাক্ট-এর কালার বাছুন।

  • ইন্ডিয়ান ফেয়ার কালারের ত্বকের জন্য নিউট্রাল শেড বাছা উচিত। খুব বেশি অরেঞ্জ আর খুব বেশি গ্রে ঘেঁষা শেড একেবারেই না। রেড, পিচ এবং কোরাল সব থেকে ভালো মানাবে
  • ইন্ডিয়ান গম রঙা ত্বকে ব্রোঞ্জ, অরেঞ্জ, ইযেলো অথবা অলিভ শেড মানাবে বেশি
  • ইন্ডিয়ান শ্যামলা রঙের ত্বকের জন্য হালকা লাল রং ঘেঁষা ডার্ক কালারের ফাউন্ডেশন বেশি ভালো লাগবে। কোকো, চেস্টনাট, ব্রোঞ্জ কালার সবথেকে উপযুক্ত।

 

প্রোডাক্ট অনুযায়ী বাছার নিয়ম

ফাউন্ডেশন : সাধারণত ত্বকের ধরণকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অয়েলি, ড্রাই ও নর্মাল। ত্বকের ধরন এবং কমপ্লেকশন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন বাছা উচিত। আপনি যদি বিশেষ কোনও ফাউন্ডেশন লাগিয়ে অভ্যস্ত থেকে থাকেন, তাহলেও উচিত হবে একবার যাচাই করে নেওয়া যে, সেটি আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী কিনা। যেমন ম্যাট ফিনিশ ফাউন্ডেশন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এবং ব্লেমিশ প্রোন ত্বকের জন্য সঠিক নির্বাচন কিন্তু শুষ্ক ত্বকের জন্য একেবারেই সঠিক নির্বাচন নয়। ড্রাই অথবা নর্মাল স্কিনের জন্য মযে্চারাইজিং লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে ত্বকের জেল্লা বাড়বে।

যাদের ত্বক সামান্য অয়েলি অথবা সামান্য ড্রাই তারা স্মুদ ফিনিশ পেতে কমপ্যাক্ট বা পেসড পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। সানস্ক্রিনের সঙ্গে এটি লাগাতে হবে। ন্যাচারাল লুক-এর জন্য বিবি ক্রিম সবথেকে উপযুক্ত। এটি রোজই ব্যবহার করা যেতে পারে অবশ্য পার্টি-তে যেতে হলে আপনাকে ফাউন্ডেশনই লাগাতে হবে।

ত্বকের জন্য সঠিক শেডের ফাউন্ডেশন বাছার বা কেনবার সময়ে ৩-৪টি শেড একসঙ্গে বাছুন এবং নিজের জ-লাইনে একটা একটা করে লাগিয়ে পরীক্ষা করুন। যে-শেডটি আপনার গলার ত্বকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করবে সেটাই আপনার জন্য সঠিক শেড। ফাউন্ডেশনের শেড সবসময় দিনের বেলা বাছা উচিত। খেয়াল রাখবেন, কনসিলারের কালার ফাউন্ডেশনের শেডের থেকে এক শেড হালকা হওয়া উচিত।

ফাউন্ডেশনের মতোই অন্য মেক-আপ কালারও সঠিক শেড দেখে নির্বাচন করা বাঞ্ছনীয় যেমন ব্লাশ, লিপ কালার, আই শ্যাডো, আই লাইনার, মাসকারা ইত্যাদি।

 

লিপস্টিক

রং পছন্দ হলেই লিপস্টিক কিনে ফেলা উচিত নয়। স্কিন টোন এবং আন্ডার টোন-এর সম্পূর্ণ খেয়াল রেখেই লিপস্টিক কেনা উচিত।

  • লিপ কালার বাছুন ঠোঁটের ভিতরের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে
  • কুল আন্ডারটোন-এর ত্বকে লাল, ব্রাউন, বেগুনি রঙের লিপস্টিক মানাবে ভালো
  • ওয়ার্ম আন্ডারটোন-এর ক্ষেত্রে ওয়াইন, কোরাল, বারগ্যান্ডি অথবা অরেঞ্জ রঙের লিপস্টিক বেশি ভালো লাগবে।

 

ম্যাট ফিনিশ অথবা গ্লসি লিপস্টিক বাছার সময়

  • যদি ঠোঁট পাতলা হয় তাহলে গ্লসি লিপস্টিক লাগান। এটি ঠোঁটকে থ্রি ডাইমেনশনাল এফেক্ট দেবে এবং ঠোঁট ভরন্ত দেখাবে
  • ম্যাট লিপস্টিক, পিগমেন্ট এবং শিমার না থাকার কারণে দেখতে আকষর্ণীয় লাগে। ঠোঁট যদি একটু মোটা হয় তাহলে ম্যাট ফিনিশ লিপস্টিক ব্যবহার করুন। লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁটের বাউন্ডারি দিন
  • ঠোঁট যদি রুক্ষ, ফাটা হয় তাহলে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁটের জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা থাকে এবং এর শাইন ঠোঁটের এবড়ো খেবড়ো ত্বকের অসুন্দরতাকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেয়।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...