স্বর্গের অপ্সরার মতোই সুন্দরী ওড়িশার এই ট্রাভেল ডেস্টিনেশন। হয়তো হঠাৎ ঠিক না করলে দেখাই হতো না তার রূপ। পুরিতে দিন দুয়েক থেকে, ভিড়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে হঠাৎই আমাদের রম্ভা চলে আসার প্ল্যান। ওটিডিসি’র পান্থনিবাস-এ যোগাযোগ করতে ঘর পেতে অসুবিধা হল না। ফলে ভোর ভোর তৈরি হয়ে ভাইজাগগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে উঠে পড়লাম।

এ এক অপূর্ব যাত্রাপথ। বালুগাঁও থেকে শুরু হল চিল্কার সঙ্গে সাক্ষাৎ। বস্তুত এগুলি চিল্কার খাঁড়ি। এই ‘ব্লু লেগুন’ এক দিকে রেখে, অন্যদিকে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ট্রেন চলল চিল্কা, কালিজল, খাল্লিকোট হয়ে রম্ভা।

প্রায় ১১০০ বর্গ কিলোমিটার জোড়া চিল্কা হ্রদটি বস্তুত সহস্র পাখির আবাস। অনেকেই ডে ট্যুর করেন বারকুল ও রম্ভা। বারকুল অবশ্য আরও নিরিবিলি। ফলে পাখির সংখ্যাও ওখানে অনেক বেশি। শতাধিক পর্যটক রোজ নলবন, কালিজল মন্দির বেড়াতে আসেন। কিন্তু আমাদের মতো রম্ভায় থাকার বাসনা নিয়ে আসা পর্যটকের সংখ্যা কম। পুরি থেকে রম্ভা আসার আরও তিনটি ট্রেন আছে। পুরি-গুনপুর প্যাসেঞ্জার, পুরি-তিরুপতি এক্সপ্রেস, পুরি-শিরডি এক্সপ্রেস। কেউ কেউ খুরদা রোড থেকেও ট্রেন ধরেন।

ওটিডিসির অভ্যর্থনায় পেট ভরে লাঞ্চ সারলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম জায়গাটা ঘুরে দেখতে। ব্যালকনি থেকেই চোখে পড়ে ওই বিশাল জলাধার। পান্থনিবাস-এর সবুজ লন আর ফুলের বাগিচা পেরিয়ে চিল্কা জেটি। রম্ভা বস্তুত একটি ছোট্ট জনপদ। ছোট্ট চার্চ, দোকানঘর, কিছু বর্ধিষ্ণু পরিবারের বাড়ি, একটি মধ্যবিত্তদের পাড়া, গুটিকয় পকোড়া ও ভাজাভুজির দোকান। সন্ধে হলে কোলাহল কমে আসে আর তখন পান্থনিবাসের ব্যালকনিতে বসে তারাভরা আকাশ ও ওই বিশাল হ্রদটিকে আশ্চর্য মায়াময় মনে হয়।

পরের সকালটা বরাদ্দ ছিল আমাদের ক্রুজ-এর জন্য। মোটর বোট-এ করে ওই প্রকাণ্ড হ্রদটি চষে ফেলার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। জলাধারের উপর ছোট্ট একটি দ্বীপ, যার নাম ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড। খাল্লিকোটের রাজা-রানি নাকি এখানে প্রাতরাশ সারতে আসতেন। এরপর বোট ভিড়ল আরও তিনটি দ্বিপে। বেশ রোমান্টিক। বেকন আইল্যান্ড, সোমোলো আইল্যান্ড ও হনিমুন আইল্যান্ড। হ্রদের নীল জল, মধ্যে মধ্যে টিলাপাহাড় আর অজস্র চেনা-অচেনা পাখির ঝাঁক, অচিরেই আমাদের মন কেড়ে নিচ্ছিল। শীতকালে দেখা মেলে আরও অনেক পরিযায়ী পাখির যেগুলি এই ভরা বসন্তে অনুপস্থিত।

পরদিন আমরা একটি অটো ভাড়া করে ঘুরে নিলাম রম্ভার এদিক-সেদিক। প্রথমেই খাল্লিকোটের রাজা স্থাপিত আর্ট কলেজ। তারপর গেলাম নির্মলঝোরা। পাহাড়ের তলদেশে এক নির্জন স্থানে সুন্দর একটি মন্দির। মন্দিরের মধ্যে দিয়ে অজস্র জল বয়ে যাওয়ার চ্যানেল করা আছে। পাহাড়ি ঝরনা থেকে বয়ে আসছে সেই জল। এটাই এ অঞ্চলের পানীয় জলের সূত্র। শিবের মন্দির। পাথরের নীচে একটি শিবলিঙ্গ রাখা রয়েছে। অনুরোধে তা দেখার সুযোগ মিলল।

দিনের দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ঘুরে এলাম তপ্তপানি। সর্বরোগহারী হট ওয়াটার স্প্রিং। জায়গাটি ভারি মনোরম। রম্ভায় সচরাচর কেউ এসে থাকেন না। অথচ এই অচেনা সুন্দরী আপনার আসাটা ব্যর্থ করবে না একথা হলফ করে বলা যায়।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...