একের পর এক বিয়েবাড়ি, পার্টি, জন্মদিনের নিমন্ত্রণ – একেবারে টাইট শিডিউল। কবে কী পরবেন মোটামুটি তার প্রস্তুতিও তুঙ্গে। কিন্তু সবশেষে এই গ্রীষ্মে মেক-আপের কথা ভাবলেই অনেকেরই কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। কারণ এই সময় মেক-আপ টিকিয়ে রাখাটা বেশ কঠিন কাজ। এটা কিন্তু কোনও চিন্তার বিষয় নয়। ঋতু অনুযায়ী মেক-আপের রকমফের হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। শুধু ত্বকের প্রকৃতি এবং গায়ের রং অনুযায়ী সঠিক প্রসাধনী বেছে নিয়ে যথাযথ ভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারলে মেক-আপ যেমন দীর্ঘস্থায়ী হবে, তেমনি গ্ল্যামারাস লুকও পাবেন আপনি।

তবে একদিনের পরিচর্যায় কখনও গর্জিয়াস লুক পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ নিয়মিত ত্বকের দেখভাল না করলে যতই মেক-আপ করুন না কেন, ত্বকের সেই উজ্জ্বলতা আনা সম্ভব হবে না। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং করুন। এমনকী ট্যান-ফ্রি ত্বক পেতে ভালো কোনও বিউটি এক্সপার্ট-কে দিয়ে মাসে অন্তত একবার ট্যান রিমুভাল ফেশিয়াল করান। এগুলি যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে সব ঋতুতেই সমান ভাবে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ভাব বজায় থাকবে। মেক-আপও ভালো বসবে। আসুন, জেনে নিই মেক-আপ দীর্ঘস্থায়ী করার কয়েকটি সহজ উপায়।

মেক-আপের খুঁটিনাটি

মেক-আপ বেস – মেক-আপ করার আগে বেস-টাই হল মেইন। প্রথমে মুখে, গলায়, ঘাড়ে বরফ ঘষে নিন, নয়তো অ্যাস্ট্রিনজেন্টও লাগাতে পারেন। এবার ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে কনসিলার প্রয়োগ করুন। এটি আপনার মুখের ত্বকের দাগছোপ, চোখের নীচের কালোভাব ঢেকে দেবে। যদি ন্যাচারাল লুক রাখতে চান তাহলে লিকুইড কনসিলার ব্যবহার করুন। তবে মাথায় রাখবেন কনসিলার লাগানোর সময় কোনও ঠান্ডা জায়গাতেই লাগান এতে ঘামও হবে না আর কনসিলারও সঠিক ভাবে বসে যাবে।

কনসিলার লাগানোর পরে নাক, চিন আর জ লাইনের আশেপাশে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। কখনওই অতিমাত্রায় কমপ্যাক্ট পাউডার ব্যবহার করবেন না, এতে যেমন মুখের ত্বকের পোরস্ বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি দৃষ্টিকটুও লাগবে।

তবে অনেকেই ফাউন্ডেশন-এর ব্যাপারে একটু বেশি-ই আগ্রহী। অর্থাৎ তারা মনে করেন ফাউন্ডেশন না লাগালে মেক-আপ বুঝি অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। তারা রাতের মেক-আপ হিসাবে কনসিলারের পরে ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। ফাউন্ডেশন মূলত ফেয়ার আর ডাস্কি স্কিন-এর জন্যই হয়ে থাকে। ফেয়ার স্কিন-এর জন্য বেইজ আর শ্যামলা বা কৃষ্ণবর্ণের জন্য ব্রোঞ্জ। এছাড়াও বাজারে এখন অনেক ধরনের লাইটওয়েট ফাউন্ডেশন পাওয়া যাচ্ছে, যেমন ক্রিমি, লিকুইড, ফোম, মুজ এবং পাউডার কমপ্যাক্ট– যেগুলি এসপিএফ যুক্ত। অর্থাৎ এখন দিনের আলোতেও আপনি স্বচ্ছন্দ্যে মেক-আপ করতে পারেন। শুধু তাই নয় এই প্রোডাক্টগুলি একেবারে অয়েল ফ্রি। কাজেই প্যাচিনেস একেবারেই আসে না।

অনেকে আবার মেক-আপের ক্ষেত্রে দিনেরবেলা ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে সানস্ক্রিন-এর উপর কমপ্যাক্ট পাউডার চড়িয়ে নেন, এতেও বেশ একটা গ্লসি লুক চলে আসে।

ব্লাশ-অন – এই প্যাচপ্যাচে গরমে দিনেরবেলা ব্লাশঅনের কথা ভাববেন-ই না। সন্ধের পর কোনও অনুষ্ঠানে যেতে হলে হালকা পিংক অথবা লাইট ব্রাউন শেড ইউজ করতে পারেন, তবে সেটাও হতে হবে পাউডার বেসড, ক্রিমযুক্ত ব্লাশার এড়িয়ে চলুন।

লিপস্টিক – বাজারে এখন বহু নামিদামি কোম্পানির এসপিএফ-যুক্ত লিপস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী কিনে নিতেই পারেন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন এই সময়ে লাইট শেড লিপস্টিক-ই একেবারে পারফেক্ট। চাইলে কোনও অকেশনে রাত্রিবেলা ডার্ক শেড ইউজ করতে পারেন।

প্রথমে লিপ লাইনার দিয়ে আউট-লাইন করে নিন। তারপর সিলার লাগিয়ে ম্যাট লিপস্টিক লাগান। এতে লিপস্টিক দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং গলবেও না। গ্লসি লিপ পেতে হলে সবশেষে হালকা ভাবে লিপগ্লস-এর এক কোট লাগিয়ে নিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন অন্যান্য ঋতুর মতো এই সময়ে কখনওই আউটলাইন করে সরাসরি লিপগ্লস লাগাবেন না, কারণ ছড়িয়ে পড়ার ভয় থেকে যাবে। যা আপনার লুকটাকেই বিগড়ে দেবে। নিয়ন কালার্স-ও এখন বাজারে খুব হিট যা পোশাকের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করাতে পারেন।

কাজল – মেক-আপ যদি হালকা হয়, সেক্ষেত্রে কাজলও পরতে হবে হালকা ভাবে, ডার্ক করা যাবে না। বিশেষ করে দিনের বেলায় হালকা কাজলের এককোট দিয়ে ছেড়ে দিন। রাত্রিতে যে-কোনও অনুষ্ঠানে ডার্ক চলতেই পারে। তবে কাজল লাগানোর আগে চোখের ঠিক নীচের অংশে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না। এতে কাজল ছড়িয়ে পড়বে না। এইসময় লিকুইড লাইনারের পরিবর্তে পেনসিল-ই ব্যবহার করুন। তাই দিয়েই চোখ এঁকে নিন। চোখের মেক-আপ দীর্ঘস্থায়ী করতে ওয়্যাক্স-যুক্ত আইশ্যাডো লাগান।

এছাড়াও কতকগুলি বিষয় মাথায় রাখবেন

১)   মেক-আপ কেনার সময় অয়েলবেসড মেক-আপের পরিবর্তে ওয়াটার প্রুফ মেক-আপ-ই বাছুন।

২)   এই ঋতুতে ব্রাইট মেক-আপের তুলনায় লাইট মেক-আপই পারফেক্ট।

৩)   আপনার ত্বক যদি দাগছোপ-মুক্ত হয় তাহলে অযথা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না।

৪)   বরফ ঘষে অথবা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন লাগিয়ে তবেই মেক-আপের শুরু করুন। এগুলি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।

৫)   প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাউডার ব্যবহার করবেন না, এতে ত্বকের পোরস্ বন্ধ হয়ে যায়।

৬)   পাউডার লাগানোর পরে ভিজে স্পঞ্জ দিয়ে হালকা ভাবে মুছে নিন। পরে আর-এক কোট পাউডার লাগিয়ে নিন।

৭)   আইশ্যাডো পেনসিল আই মেক-আপের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ব্রাউন অথবা গ্রে রঙের আইশ্যাডো পেনসিল দিয়ে চোখের মেক-আপ করলে সফ্ট এবং স্মোকি লুক চলে আসবে।

৮)   এই সময় লিপগ্লস এড়িয়ে চলাই ভালো। যদি গ্লসি লুক আনতে লিপগ্লস লাগাতেই হয়, সেক্ষেত্রে প্রথমে প্রাইমার লাগিয়ে ম্যাট লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। তার উপর হালকা ভাবে এক কোট লিপগ্লস লাগিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন লিপগ্লসের মাত্রা যেন কখনওই বেশি না হয়।

৯)   হালকা ম্যাট লিপস্টিক-ই পছন্দের তালিকায় রাখুন।

১০)  গরমে টি-জোনেই বেশি মাত্রায় ঘাম হতে দেখা যায়, তাই সবসময় টিশু পেপার সঙ্গে রাখুন। এটি ঘামের পাশাপাশি অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাবও শুষে নেবে। আপনাকে দেখতেও ফ্রেশ লাগবে।

১১)  মেক-আপ তুলতে অ্যালকোহল ফ্রি রিমুভার প্রয়োগ করুন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...