রোগ-কে দূরে রাখুন, রোগীকে নয় এই প্রচার সরকারি স্তরে, বেসরকারি স্তরে সর্বত্র চলছে ঠিকই কিন্তু এর সারমর্ম বোঝার মানসিকতা সবার মধ্যে নেই। এই বিষয়টা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হয়ে উঠছে।

আসলে গলদটা হয়ে গেছে ওই শব্দ দুটোয় সামাজিক দূরত্ববিধি বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং। বস্তুত এই শব্দ দুটোই করোনার মতো অতিমারির জন্য একমাত্র পরিত্রাণের পথ। এর দ্বারা বোঝাতে চাওয়া হয়েছিল সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় জমায়েত,রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং, সভা প্রভৃতি থেকে মানুষ যাতে বিরত থাকেন। অর্থাত্ একত্রে বহু লোক সমাগম এড়ানোটাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানোর এটাই একমাত্র পথ।

কিন্তু সমস্যা হল অন্যত্র। মানুষ এই সামাজিক দূরত্ববিধির অপব্যাখ্যা করে, মানুষ মানুষের সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তন এনে ফেলেছে। সেই কারণেই ঘটছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা।

কোনও বাড়িতে কেউ করোনা আক্রান্ত শুনলে, সেই বাড়িকে লক্ষ্য করে নানা অকথা-কুকথা বলা হচ্ছে। অপমান লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন রোগীর বাড়ির মানুষেরা। কেউ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলে, তাকেও অপদস্থ করা হচ্ছে। এককথায় সমাজ থেকে বাদ দিয়ে একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে করোনা আক্রান্ত পরিবারটিকে।

সামাজিক দূরত্ববিধির এমন ন্যক্কারজনক অপপ্রয়োগ আমরা কিছুদিন আগে একটি ঘটনায় জেনেছি, যেখানে রাস্তায় পড়ে যাওয়া এক অশীতিপর বৃদ্ধের দিকে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি, তিনি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে। এত অসংবেদনশীল হয়ে যাচ্ছি আমরা এই অতিমারির পরিবহে, একথা ভাবলেই লজ্জিত হতে হয়।

অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার প্রভৃতি নিয়ে চলছে দুর্নীতি৷ কোভিড রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে, মাত্রাছাড়া দর হাঁকছে অ্যাম্বুলেন্স৷সমাজটা কেমন এক স্বার্থপরতার খোলসে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে৷অথচ এই সময়ই দরকার একটা মানবিক মন৷

কী করবেন?

  • যে-কোনও সভ্য ও শিক্ষিত সমাজের কাছে এটাই প্রত্যাশিত যে-আমরা বিপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াব
  • যিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাকে সামাজিক অপরাধী বলে ভাবাটা অশিক্ষার প্রকাশ।
  • সহানুভতি ও সহমর্মিতার সঙ্গে বিচার করুন
  • সংক্রমণ ঠেকাতে শারীরিক সংশ্রব এড়ানো একান্ত জরুরি কিন্তু সামাজিক ভাবে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠাটাও আপনার উচিত
  • যদি শোনেন, আত্মীয়, অনাত্মীয় বা পাড়ায় পরিচিত কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছে, দয়া করে তার ব্যাপারে সংবেদনশীল হন
  • কিছু সাহায্যের প্রয়োজন কিনা ফোন করে জানার চেষ্টা করুন
  • তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ওষুধ বা খাদ্যসামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন
  • ৬ ফুট দূরত্ব রেখে তার সঙ্গে দরকারি কথা সেরে নিন। মানবিক হোন।
  • ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তার শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিন৷
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...