প্রায় প্রতিবেশী রাজ্যই বলা চলে ত্রিপুরাকে। তাই যাতায়াতও অত্যন্ত সুগম। বেড়ানোর জন্যও এই জায়গাটি কিন্তু বেশ ভালো। এই আগরতলা শহর এবং এর বাইরে রয়েছে চমৎকার সব দর্শনীয় স্থান। আর এগুলোতে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

আগরতলা

ত্রিপুরা বেড়ানো শুরু করুন আগরতলা দিয়ে স্থাপত্য ও ভাস্কর‌্যে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব চোখে পড়ার মতোই। মিস করবেন না উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, যা এখন বিধানসভা ভবনে রূপান্তরিত।

আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় আধা মাইল এলাকাজুড়ে দ্বিতল এই প্রাসাদটি অবস্থিত। মিশ্র স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রাসাদটির তিনটি গম্বুজ ঘিরে রয়েছে মুঘল আমলের খাঁজকাটা নকশা যার মাঝেরটি ৮৬ ফুট উঁচু। ১৮৯৯ সালে এই সুদৃশ্য ও মনোরম প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯০১ সালে। ওই সময়ই এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ১০ লাখ টাকা। মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা। প্রধান ভবনটির দু’পাশে দুটি দীঘি। দীঘির পাড়ে সেগুন, শিরিষ, কড়ই আর শাল গাছের সাজানো অরণ্য। প্রাসাদের প্রবেশ পথের ঠিক মাঝখানে রয়েছে ফোয়ারা আর ভাস্কর্যসমৃদ্ধ একটি চমৎকার বাগান। প্রাসাদের ভেতরে সারি সারি কক্ষ। এগুলোর প্রতিটির রয়েছে আলাদা আলাদা নাম- শ্বেতমহল, লালমহল, সদর বাড়ি, তহবিল খানা, আরাম ঘর, পান্থশালা প্রভৃতি।

উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের একমাইল উত্তরে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্যের নির্মিত (১৯০৯ থেকে ১৯২৩ সালে) ছবির মতো সুন্দর কুঞ্জবন প্রাসাদ হচ্ছে আগরতলার আরেকটি চমৎকার স্থাপত্যকর্ম।এছাড়া ত্রিপুরার অন্যতম আকর্ষণ চতুর্দশ দেবতার বাড়ি।শহরের যে-কোনও যানবাহনে চড়ে দিনে দিনেই দেখে নেওয়া যায় এগুলি৷

Sipahijola Forest in Tripura

শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরের সিপাহিজলা। অজস্র পাখ-পাখালি আর জীবজন্তু ভরা অরণ্য। বার্ড ওয়াচাররা শূন্য হাতে ফিরবেন না। বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত অভয়াশ্রমে রয়েছে নজরকাড়া সব পাখি ও বানর। এখানে আছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, লেক এবং বিপুল প্রজাতির বৃক্ষ। অভয়াশ্রমটি সারা বছরই ঘন সবুজ বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত থাকে। সাধারণ বানরের পাশাপাশি এখানে দেখা যাবে ক্ষুদ্র লেজবিশিষ্ট বানর, ক্যাপড লেঙ্গুর, চশমাপরা লেঙ্গুর প্রভৃতি। বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রমের পাশাপাশি একটি গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে।

উদয়পুর

পরের দিনটি নির্দিষ্ট থাক উদয়পুরের জন্য। এর অন্যতম আকর্ষণ ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির ও গোমতী নদীর তীরে ভুবনেশ্বরী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। রাজা গোবিন্দ মাণিক্য এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। রবি ঠাকুরের বিসর্জন নাটকটি এই পটভমিকাতেই লেখা।

আগরতলা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে নীরমহল দেখে মুগ্ধ হতে হয়। গভীর বিস্তৃত এই হ্রদ রুদ্রসাগরের মাঝখানে রাজা বীরকিশোরের প্রাসাদ। রবীন্দ্রনাথই এই প্রাসাদের নাম দিয়েছিলেন নীরমহল।

হাতে আরও একটা দিন সময় থাকলে ঘুরে নিন ডমরু ফলস এবং ঊনকোটি।

কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে ট্রেনে গুয়াহাটি, সেখান থেকে লামডিং-বদলপুর হয়ে ত্রিপুরা।

কোথায় থাকবেন : নানা মানের হোটেল আছে আগরতলায়। সিপাহিজলায় থাকতে হলে বনবাংলো পাবেন। যোগাযোগ করতে হবে চিফ কনজার্ভেটর অফ ফরেস্ট, আগরতলা।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...