আমাদের শরীরের এক অতি মূল্যবান সম্পদ হল চোখ। যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে কিংবা যারা চোখে পুরোপুরি দেখতে পান না,তারা-ই চোখের গুরুত্ব বুঝতে পারেন প্রকৃত অর্থে। অতএব,চোখ থাকতেই চোখের সঠিক যত্ন নিতে হবে।বিশেষকরে যত্ন নিতে হবে রেটিনা-র। কিন্তু কেন রেটিনার বেশি যত্ন নিতে হবে,সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন আই স্পেশালিস্ট ডা.সপ্তর্ষি মজুমদার।

রেটিনা কী?

চোখের পেছনে থাকা আলোক সংবেদনশীল দেয়ালটাই হল রেটিনা। চোখের সামনে থাকা বস্তুর ছবিটাকে ধরে রেখে তাকে স্নায়ুস্পন্দনে বদলে অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠানো এর কাজ। ঠিক যেন খুব সূক্ষ্ম ক্যামেরার সেন্সর।

রেটিনাল ডিটাচমেন্ট বলতে কী বোঝায়?

চোখের এই আলোক-সংবেদী অংশের নীচে যে-টিশু বা কলাগুলো থাকে, তার থেকে রেটিনা কোনও কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাকেই বলে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট। চোখের ক্ষেত্রে এটা খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে চিরকালের মতো অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Health tips
Retinal detachment

কীভাবে এই রোগের সূত্রপাত হয়?

রোগের সূত্রপাত হয় রেটিনায় চোখের জল জমা হওয়া থেকে। খুব সাধারণ যে-কারণগুলো এর জন্য দায়ী, তার মধ্যে আছে– পস্টিরিয়র ভিট্রিয়াস ডিটাচমেন্ট (চোখের মধ্যে যে-ভিট্রিয়াস জেল থাকে, তা সরে যাওয়া), আঘাত বা মায়োপিয়ার জন্য রেটিনার পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। রেটিনায় চোখের জল জমার সঙ্গে অনেক সময় চোখে আলোর ঝলক বা ফ্ল্যাশ এবং ফ্লোটার অর্থাৎ চোখে ঝাপসা দেখার মতো লক্ষণও দেখা যায়। ঠিক সময়ে লেজার ফটোকোয়াগুলেশন চিকিৎসা করানো হলে, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট আটকানো সম্ভব। রেটিনাল ডিটাচমেন্টে ক্ষেত্রগত দৃষ্টিশক্তি বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি যে-কোনও ধরনের ক্ষতিই হতে পারে। তাই বাকি লক্ষণগুলো সম্পর্কেও ধারণা থাকা খুব দরকার। দৃষ্টিক্ষেত্রের চারপাশ জুড়ে উজ্জ্বল আলোর ঝলক দেখা গেলে তাকে বলে ‘ফ্ল্যাশ’ এবং মাকড়সার জালের মতো বা একাধিক ছোটো ছোটো ছায়ার মতো দৃষ্টিপথে বারবার ঘুরেফিরে এলে সেগুলোকে বলে ‘ফ্লোটার’।

কীভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়?

রোগীর একবার রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হয়ে গেলে সেটাকে চোখের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি পরিস্থিতি বলে গণ্য করা হয় এবং সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার করানো ছাড়া গতি নেই। দু’ ধরনের শল্যচিকিৎসা এক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে– স্কেলার বাকলিং (একটা সিলিকন ব্যান্ড বা বেল্ট চোখের চারপাশে বেঁধে দেওয়া হয়) এবং ভিট্রেক্টোমি প্লাস গ্যাস অর অয়েল ট্যাম্পোনেড (এটা ভিট্রিয়াস জেল কেটে করা হয়)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিট্রেক্টোমি করা হয়ে থাকে কারণ এক্ষেত্রে সামান্য অস্ত্রোপচার করলেই চলে। অপরদিকে সিলিকন অয়েল ব্যবহার করলে ২-৩ মাস পরে আবার সেটি সরিয়ে নেওয়ার দরকার পড়ে। গ্যাস আর সিলিকন অয়েল ব্যবহার করা হলে রোগীকে কমপক্ষে দু সপ্তাহ উপুড় হয়ে শুতে পরামর্শ দেওয়া হয়। মানে যতক্ষণ না রেটিনা পেছনে সেঁটে যায়।

কতটা সাফল্য পাওয়া যায় এই শল্যচিকিৎসায়?

রেটিনাল ডিটাচমেন্টের এই শল্যচিকিৎসার সাফল্যহার প্রথমবার অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সাধারণত ৮০-৯০ শতাংশ। প্রথমবার কোনও কারণে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। সেক্ষেত্রে সাফল্যের হার আরও বেশি, ৯০-৯৫ শতাংশ। দৃষ্টি ফিরে আসার ক্ষেত্রে ম্যাকুলা (রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশ) ডিটাচমেন্ট হয়েছে কিনা তা দেখে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাকুলা যদি বেঁচে গিয়ে থাকে, তাহলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল অস্ত্রোপচারের পর ২০/২০ পর্যন্ত দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ম্যাকুলা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে দৃষ্টি ফিরে আসার সম্ভাবনা অনিশ্চিত এবং প্রায়শই সম্পূর্ণ দৃষ্টি ফিরে আসে না। তবে ৪-৬ মাসের মধ্যে ক্রমশ উন্নতি হতে পারে।

এই বিষয়ে বিশেষ কী পরামর্শ দেবেন আপনি?

রেটিনায় অশ্রু জমার সমস্যাটি নির্ণয় এবং তার অস্ত্রোপচার যত দ্রুত হবে, রোগীর দৃষ্টি হারানোর সম্ভাবনা ততটাই কমবে। উলটো ভাবে বলা যায়, যত দেরি করে রোগ ধরা পড়বে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি একজন রেটিনা-র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...