উত্তরপূর্ব ভারতের ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ত্রিপুরা। আমার এবারের সফরনামায় রয়েছে ত্রিপুরার অচেনা কয়েকটা জায়গা। সিপাহিজলা ও তৃষ্ণা অভয়ারণ্য তার মধ্যে অন্যতম। কাল প্রাক দুপুরের উড়ানে নেমেছি রাজধানী শহর আগরতলায়। নামার পরই সোজা লাঞ্চের টেবিলে। এরপর গাড়ি নিয়ে প্রথমে উজ্জয়ন্ড প্রাসাদ। ১৮৯৬ সালে গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়া এই প্রাসাদ এখন স্থানান্তরিত মিউজিয়াম।

ইতিহাস ছুঁয়ে গাড়ি ছুটল সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে। মাঝে আধঘন্টার জন্য অবশ্য বিবেকনগরে রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়েছিলাম। সিপাহিজলার ২৫ কিমি পথ বেশ আরামদায়ক। সবুজের ব্যাপ্তি চোখ জুড়িয়ে দেয়। সে সবুজের ধারাবাহিকতা এসেছে সিপাহিজলা ঢুকতে রাবার বাগানের উপস্থিতিতে। ইদানীং রাবার শিল্পে ভালোই লাভের মুখ দেখছে ত্রিপুরা। আকাশ ছোঁয়া নিবিড় রাবার গাছের উপস্থিতি, গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করল। চুঁইয়ে পড়া কাঁচা রাবার কাছ থেকে দেখলাম।

সিপাহিজলাকে অভয়ারণ্য না বলে, ত্রিপুরার নন্দন কানন বলাই যুক্তিযুক্ত। ১৮.৫৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে হাজার পশুপাখি থাকলেও, তা সবই খাঁচাবন্দি। টিকিট কেটে এবার পায়ে-পায়ে এগিয়ে যাওয়া। বোটানিক্যাল গার্ডেন, ডিয়ার পার্ক, হ্রদ, বোটিং, টয় ট্রেন– এরকম হাজার ব্যবস্থা থাকলেও, অতটা সময় ছিল না আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখার। বাঘ, ভল্লুক, নেউল, নীলগাই, পাখপাখালি দেখতেই অনেকটা সময় কাবার। কিন্তু যার জন্য এখানে ছুটে আসা, সেই ‘সিগনেচার অ্যানিম্যাল’ চশমা-বাঁদর কোথায় গেল? কর্তব্যরত বনকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই দেখিয়ে দিল বোর্ড নির্দেশিত পথ। শুনেছি ভারতের আর কোথাও এই বাঁদর দেখা যায় না। বেশ করে চশমা-বাঁদরদের ছবি তুলে, দৌড়ালাম উদয়পুরের দিকে।

মন্দিরের শহর নামে খ্যাত ত্রিপুরার পুরাতন রাজধানী উদয়পুর। এখানে পথে-প্রান্তে রয়েছে অজস্র মন্দির। আজ সকালে প্রথমেই গাড়ি ছুটল মাতাবাড়ি। একান্ন পীঠের অন্যতম মন্দির ত্রিপুরেশ্বরী দর্শনে। শোনা যায় সতীর ডান পা পড়েছিল এখানে। মন্দির রয়েছে এক টিলার ওপর। কথিত আছে ১৪০১ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজা ধন্যমাণিক্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ত্রিপুরাসুন্দরীর মূর্তি অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে এখানে এনে স্থাপন করেন। একচালার দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুজোর উপচার কেনা হল। মন্দিরে ভিড় নেই একদম। হয়তো বে-বার বলে! পান্ডার দলবলও চোখে পড়ল না।

সুউচ্চ মন্দিরের গঠনশৈলীতে দেখি বাংলা চালাঘরের আদল। শীর্ষদেশ স্তুপাকৃতি ও তার ওপর পূর্ণকলস। পরিবেশ অসাধারণ। কষ্টিপাথরের কালীমূর্তির ছবি তুলতে কেউই বাধা দিল না। তেল সিঁদুর মাখা হাড়িকাঠ বোঝাল এখানে বলিপ্রথা অক্ষুণ্ণ। মন্দির সম্মুখে কল্যাণসাগর হ্রদ। মহারাজা কল্যাণমাণিক্যের পৃষ্ঠপোষকতায় খনন প্রাপ্ত। বিশালাকার দিঘিতে পা ডোবালেই মাছ ও কচ্ছপের গুঁতো খেতে হয়। পর্যটকরা দেখলাম মুড়ি ও বিস্কুট খাওয়াচ্ছে আচ্ছা করে।

টিফিনের পর দেখে নিলাম গুণবতী মন্দির কমপ্লেক্স। এইসব মন্দিরে বৌদ্ধ স্থাপত্যের ছাপ সুস্পষ্ট। বিশেষত শীর্ষদেশটি দেখলেই উপলব্ধি হয়। এবার দেখলাম ত্রিপুরেশ্বর ভৈরব মন্দির আর চতুর্দশ দেবতার মন্দির। চতুর্দশ দেবতার মন্দিরে অবশ্য কোনও বিগ্রহ নেই। রাস্তার উলটো দিকে বিজয়সাগর, বর্তমানে ‘মহাদেব দিঘি’ নামে পরিচিত।

এবার গাড়ি ছুটল গোমতী নদী পেরিয়ে ভুবনেশ্বরী মন্দিরের উদ্দেশ্যে। পথে গোমতী নদীতে বাঁশ ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া দেখলাম, গাড়ি থেকে নেমে। পরিবহন খরচ বাঁচাতে এখানে নদীর স্রোতকে কাজে লাগানো হয়। চতুর্দিকে সবুজের মাঝে গোমতীর পারে ভুবনেশ্বরী মন্দির এককথায় অসাধারণ। মন্দিরটি নির্মাণ করেন মহারাজ গোবিন্দমাণিক্য। মন্দিরের ভিতরে বর্তমানে কোনও বিগ্রহ নেই। শোনা যায় পূর্বে এই মন্দিরে নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল। রবীন্দ্রনাথও এই মন্দির দর্শন করেছিলেন। তাঁর রাজর্ষি উপন্যাস ও বিসর্জন নাটকে এই মন্দিরের বিশেষ উল্লেখ আছে।

বর্তমানে মূল মন্দিরের পাশে একটি ছোটো মন্দির নির্মিত হয়েছে। সেখানে অবশ্য পুজোপাঠ হয়। মন্দিরের হাতায় দেখি, সদ্য গড়ে ওঠা একটি ওয়াচটাওয়ার। ওয়াচটাওয়ারে উঠে গোমতী নদীর ঘোলাটে জল-সহ ছড়ানো সবুজের ল্যান্ডস্কেপ অনবদ্য লাগল। উদয়পুরকেও পেয়ে গেলাম পাখির চোখে। ফেরার পথে ওই রাস্তাতেই দেখে নিলাম মহারাজা গোবিন্দমাণিক্য নির্মিত পুরাতন রাজপ্রাসাদের ধবংসাবশেষ। আর দেখলাম জঙ্গলাকীর্ণ এক জরাজীর্ণ বিষ্ণু মন্দির।

এবার উদয়পুর থেকে ৬১ কিমি দূরে পিলাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা। দক্ষিণ ত্রিপুরার

বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত পিলাক। পিলাক আবার দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম পিলাক। এখানে একটি ছোট্ট নদী আছে, তার নামও পিলাক। পার হলাম বাগাফা, শান্তির বাজার, বাইঘোড়া। গাড়ি ঢুকল এবার জোলাইবাড়ি বাজারে। জোলাইবাড়ি থেকে মেইন রাস্তাটা গেছে সাব্রুম-এর দিকে। আমরা ধরলাম ডানদিকের একটা অপ্রশস্ত পথ। মাইলস্টোন বলছে, জোলাইবাড়ি থেকে পিলাক মাত্র ২ কিমি।

পথে পেলাম তালসুপারির সাথে দিগন্ত প্রসারী ধানখেত। ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ স্থান পিলাক। যেখানে প্রায় ১০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধযুগের বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পিলাক বাজার ঢোকার আগে এক প্রত্নস্থল দেখতে গাড়ি থেকে নেমে আলপথ ধরে হাঁটতে থাকলাম। দেখি সেখানে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে আগাছা সংস্কারের কাজ চলছে। চোখে দেখে মনে হল সম্ভবত বড়ো কোনও বৌদ্ধ মনাস্ট্রি ছিল এখানে। বর্তমানে মাটি থেকে সামান্য অংশই কালের স্বাক্ষর দিতে টিকে আছে। ভাঙা দেয়ালের গায়ে অবিকৃত কিছু স্থাপত্য নজর এড়ায় না। চত্বরের ভিতরে ও বাইরেও বেশ কিছু আধভাঙা ভাস্কর্য। পুরাতাত্ত্বিক ফলকে অষ্টম থেকে নবম শতকের মনাস্ট্রি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাতাত্ত্বিক এই স্থানের বেশ কিছু ছবি তুলে এবার বাজারের পথে।

বাজার ঢোকার মুখেই দেখি, পিলাক প্রত্ননিদর্শনের একটা ঘেরা চত্বর। চত্বর জুড়ে বেশ কয়েকটা টিনের শেড। কেয়ারি করা পথ ধরে গিয়ে দেখি চত্বর জুড়ে প্রত্ননিদর্শনের ছড়াছড়ি। সারিবদ্ধ সেইসব প্রত্ননিদর্শনের গায়ে বোর্ড ফলক থাকলেও, কোনও গাইড চোখে পড়ল না। একটু পরেই অবশ্য এগিয়ে এলেন দু’জন ব্যক্তি। অনেক অজানা তথ্য জানালেন গল্পের ছলে। পরে জানলাম এরা এখানকার কেয়ারটেকার। নাম শংকর ও কানু। ওরাই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাল ভারতের সর্ববৃহৎ সূর্যমূর্তির প্রতি। খননে প্রাপ্ত দশ ফুটের সেই সূর্যমূর্তিটি বেলেপাথরের। হাতে ধরা পদ্মফুল। মূর্তিটির বেশ কয়েক জায়গা ভেঙে গেছে।

এছাড়া চত্বরের অন্য প্রান্তে দেখলাম কিন্নর মূর্তি, গণেশ মূর্তি ইত্যাদি। ওদেরই মুখে শুনলাম, এখানে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের সন্ধান মিলেছে। এখানে প্রাপ্ত নবম শতাব্দীর অবলোকিতেশ্বর মূর্তি ও দ্বাদশ শতকের নরসিংহ মূর্তি দুটি বর্তমানে আগরতলা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। জানা গেল সমগ্র পিলাক জুড়ে যে-স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নিদর্শন মেলে, তার বেশির ভাগেই রয়েছে বাংলা, পাল ও গুপ্ত স্থাপত্য-কীর্তির ছোঁয়া।

এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরাকান ও মায়ানমারি স্থাপত্যের নিদর্শনও মেলে। পিলাকের উল্লেখযোগ্য প্রত্ননিদর্শনের স্থানগুলি হল শ্যামসুন্দর টিলা, দেববাড়ি, ঠাকুরানি টিলা, বালির পাথর, বাসুদেব বাড়ি এবং সাগরদেব। ত্রিপুরায় যে-শাসকেরা রাজত্ব করেছিলেন, তাদের অনেকেই ছিলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাই আজও ত্রিপুরায় আনাচে-কানাচে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছোঁয়া মেলে।

এবার ওদের হাত ধরে গেলাম চত্বরের কোণে এক ছোট্ট ঘরে। আমাদের বসতে দিয়ে, আলমারির তালা খোলে ওরা। বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রত্নসামগ্রী বার করে সামনে রাখা একটা টেবিলে ভালো করে সাজিয়ে দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্ফটিকের শিবলিঙ্গ। এছাড়া টেরাকোটার গণেশমূর্তি, ব্রোঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, অপ্সরা মূর্তি ও বেশ কিছু মুদ্রা উল্লেখযোগ্য। ভালোভাবে দেখে ও ছবি তুলে আবার স্বস্থানে তা রেখে দিল ওরা। তালাবন্দি এইসব মূর্তিগুলো নিয়ে এখানে একটা মিউজিয়াম বানানোর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

শংকরের নির্দেশিত পথে এবার কয়েকটা বাড়ির পর এক স্থানীয় বাড়িতে হাজির হই। খননে প্রাপ্ত এক মনসামূর্তি এখানে দিব্যি শিবঠাকুর রূপে পূজিত হচ্ছেন। শুনলাম এই মূর্তিটিকে আর সরকারিভাবে হস্তগত করা সম্ভব হয়নি। এবার মাঠের মাঝে ধানজমির ফাঁকে এক প্রান্তে উপস্থিত হই। শুনলাম বাঁশঝাড় আর ঝোপজঙ্গল ভরা এই পতিত জমিটার দখল নিয়েছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। কারণ এখানকার মাটি খুড়লেই মিলবে প্রত্ন ঐশ্বর্য। জায়গাটা গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢিপি আকারের। খননে প্রাপ্ত এক গণেশমূর্তি দেখি একটা টিনের শেডের নীচে রাখা। গণেশের শুঁড় ও পায়ের অংশ সিঁদুরে মাখামাখি, দেখে বোঝা গেল স্থানীয়রা এই মূর্তিতে নিত্য পুজোআর্চা করে।

শংকর ও কানুর অনুরোধে এবার হাজির হই পিলাক বাজার থেকে তিন কিমি দূরে রাজ-রাজেশ্বরী মন্দিরে। এই রাজ-রাজেশ্বরী মূর্তি (দুর্গা) আদৌ হাল আমলের নয়। অষ্টাদশ হস্ত বিশিষ্ট এই মূর্তি এক বিরল বিগ্রহ। পিলাক খননে প্রাপ্ত এই নিদর্শনও সরকার হস্তগত করতে পারেনি। স্থানীয় মানুষজন মন্দির তৈরি করে তাই নিষ্ঠা-সহ পুজোপাঠ করছে। মন্দিরে পৌঁছে দেখলাম শুধু দুর্গা নয়, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী-সরস্বতী টোটাল ফ্যামিলিই এখানে হাজির। সবই খননপ্রাপ্ত পাথরের মূর্তি বলে পুরোহিত জানায়। এই রকম কত নিদর্শন যে পিলাক জুড়ে ছড়িয়ে আছে, তার হিসাব ঠিকঠাক দেওয়া শক্ত।

ফিরে এলাম জোলাইবাড়ি। ফেরার পথে এক চায়ের দোকানে টি-ব্রেক নেওয়া হল। চা শেষে পা রাখি তৃষ্ণার পথে। এই অভয়ারণ্য দেখতে বেলোনিয়া হয়ে ড্রাইভার ধরল বড়োপাথারির রাস্তা। বেলোনিয়া থেকে ১৫ কিমি দূরে তৃষ্ণা। বড়োপাথারি থেকে রাস্তা ঢুকেছে ডানদিকে। তবে তৃষ্ণা যেতে, চোখের তৃষ্ণা নিবৃত্ত হলেও, পথের হদিশ পেতে কালঘাম ছুটে গেল। কারণ পথনির্দেশ সর্বত্র নেই বললেই চলে। উদয়পুরে গৌরী হোটেলের ম্যানেজার এক্ষেত্রে ম্যাপ এঁকে আমাদের সাহায্য করেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত হাজির হলাম তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে। তবে নিয়ম অনুযায়ী আজ বন্ধ এ অরণ্য। অগত্যা কি উপায়! সুদূর পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছি শুনে বনকর্মীদের মনে দয়া হল। ফলে বনের কিছু অংশ ঝলক দর্শনের অর্ডার মিলল। কিছুটা চলার পর গহিন জঙ্গলমাঝে পার্ক ও সংলগ্ন একটি লেকের ধারে আমরা উপস্থিত হলাম। জায়গাটা লা-জবাব। লেকে বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে দেখলাম। বিস্তীর্ণ জলাশয়ে অগুনতি পাখিদের কলকাকলি মুখরিত করল। রঙিন প্রজাপতি আর দিকহারা মৌমাছির ভনভন আওয়াজ যেন অন্য জগতে নিয়ে গেল। ছবিও তুললাম মন ভরে। রকমারি বাঁদরদের উপস্থিতি এখানে লক্ষ্যণীয়। তাই এ অরণ্যকে ‘বাঁদর জঙ্গল’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। অন্যান্য জন্তু-জানোয়ারেরও হদিশ মেলে। এবার তৃষ্ণা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির অফিসে বনকর্মীরাই অনতিদূরে বাইসন পয়েন্টে যাওয়ার জন্য এক বনকর্মীকে আমাদের গাড়িতে তুলে দিলেন।

জঙ্গলের বুক চিরে ছুটে চলেছে গাড়ি। দেড় কিমির মধ্যে পেয়ে গেলাম বাইসন পয়েন্ট। গেটে ঢুকেও গাড়ি গড়াল জঙ্গুলে পথে অনেকটা। বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাইসন পয়েন্ট। ছবির মতো এক স্থানে এসে গাড়ি পার্কিং করা হল। জায়গাটা একটা ঘাসজমিতে গড়া প্রাকৃতিক উঠোন বলা যায়। ঘাস জমির একটু দূরে এক ওয়াচটাওয়ার। মাঝারি জঙ্গলের শুরু তারপরই। জঙ্গল-হাতার মধ্যে বেশ কিছু ছোটো ছোটো জলাশয়। পানীয় জলের চাহিদা মেটায় জীবজন্তুদের। উঠে গেলাম চুয়াল্লিশ ফুট উঁচু ওয়াচটাওয়ারের মাথায়। চোখে সবুজের সুনামি ধরা পড়তেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল। এরিয়াল ডিসস্ট্যান্টে বাংলাদেশকেও উঁকি দিলাম।

এই ভরদুপুরে একটা বাইসনের দেখা পেলাম। তবে এতটাই দূরে যে গাছপালার ফাঁকে তার অস্তিত্ব বোঝা চট্ করে সম্ভব নয়। ওই বনকর্মীর মুখেই শুনলাম, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বর্ডার সংলগ্ন এক অভয়ারণ্য তৈরির পরিকল্পনার কথা। জানি না কতটা সত্যি-মিথ্যে খবরটা। এবার হোটেল খুঁজে মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বনকর্মীটি বলল, বেলোনিয়ার আগে ভালো হোটেল পাবেন না। যাক্ শেষ পর্যন্ত বারবেলায় ভরপেট খেয়ে গাড়ি ছুটল মেলাঘরে। আজ আমরা রুদ্রসাগরের তীরে সাগর মহল টুরিস্ট লজে থাকব। কাল নীরমহল ও কসবা কালীমন্দির দেখে দুপুরের ফ্লাইটে কলকাতা ফেরা।

কীভাবে যাবেন

হাওড়া বা কলকাতা থেকে প্রথমে ট্রেনে গুয়াহাটি। গুয়াহাটি থেকে ট্রেন বদলে লামডিং। একমাত্র কামরূপ ও কাঞ্চনজঙঘা এক্সপ্রেস লামডিং পর্যন্ত যায়। লামডিং থেকে মিটার গেজ ট্রেনে আগরতলা। গুয়াহাটি থেকে নাইট সার্ভিস বাসেও আগরতলা যাওয়া যায়। সব থেকে ভালো হয় কলকাতা থেকে মাত্র পঞ্চাশ মিনিটের উড়ানে আগরতলা পৌঁছানো। আগরতলা থেকে গাড়ি বুকিং করে ঘোরাই সুবিধাজনক।

কোথায় থাকবেন

আগরতলা – রাজ্য পর্যটন দপ্তরের হোটেল গীতাঞ্জলি অতিথি নিবাস।

সিপাহিজলা – বনবিভাগের টুরিস্ট লজ অবসারিকা, লেক ভিউ রিসর্ট।

উদয়পুর – রাজ্য পর্যটনের গুণবতী টুরিস্ট লজ আছে মাতাবাড়িতে।

পিলাক – জোলাইবাড়িতে আছে পিলাক টুরিস্ট লজ। বাগাফায় আছে পিলাক পান্থনিবাস ও মনু যাত্রীনিবাস। থাকতে পারেন শান্তিবাজার ডাকবাংলোতেও।

তৃষ্ণা – অভয়ারণ্য দেখতে, থাকুন রাজনগরের গেস্টহাউস, ফরেস্ট রেস্ট হাইসে। ১৫ কিমি দূরে বিলোনিয়া শহরে বনদফতরের ‘বনমহল’ বাংলোতেও থাকতে পারেন। আর কাছাকাছি আছে জয়চন্দ্রপুরের কটেজ।

জরুরি তথ্য

প্যাকেজ বুকিং ও অন্যান্য ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য কলকাতায় যোগাযোগের ঠিকানা – ত্রিপুরা ভবন, ১ প্রিটোরিয়া স্ট্রিট, কলকাতা-৭১।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...