স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি, একটি সঞ্চালন ব্যাধি যা স্বাভাবিকভাবে পেশির সঞ্চালন ব্যহত করে। যার ফলে রোগীর সমস্যার সৃষ্টি হয়। সীমিত গতিসঞ্চালন, দৈনিক জীবনযাত্রা ব্যহত হওয়া এবং ঘুমের বিশৃঙ্খলা– এসবগুলি স্প্যাস্টিক রোগীদের জীবনযাত্রার উপর অসম্ভব প্রভাব ফেলে, যার ফলে স্বাভাবিক কাজকর্মগুলিও হয়ে ওঠে কঠিন।
এই রোগে আক্রান্তরা কী ধরনের সমস্যার শিকার হন?
স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি হল, পেশির চরম দৃঢ়তা এবং ব্যথাযুক্ত খিঁচুনিসহ শিথিলসঙ্কল্প গতির বিশৃঙ্খলা, যা অনেক পরিমাণে রোগীর জীবনের মানের অবনতি ঘটায়। যেসব রোগীর মধ্যে স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসি আছে, তারা কেবলমাত্র শরীর কুঁকড়ে যাওয়া এবং অঙ্গবিকৃতির দ্বারা আক্রান্ত হন না, তার সঙ্গে খিঁচুনি-সংক্রান্ত ব্যথাতেও আক্রান্ত হন, যা তাদের আরও বেশি নিস্তেজ করে দেয়। ব্যথাপূর্ণ খিঁচুনির সঙ্গে অন্যান্য অবস্থাগুলি কখনও কখনও এত চরমে ওঠে যে, রোগী ব্যথায় কেঁদে ফেলেন। এটি হয় যখন পেশি অস্বাভাবিকভাবে দৃঢ় হয় এবং পেশি উপরদিকে বাড়তে থাকে। এই ব্যথাপূর্ণ অবস্থাকে বলা হয় ফ্লেক্সর স্প্যাজমস।
স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তরা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে ওঠেন কি?
স্প্যাস্টিক সেরিব্রাল পালসিকে সম্পূর্ণভাবে সারানো যায় না, কিন্তু কার্যকরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ব্যাসলোফেন হল পালসি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবথেকে বেশি কার্যকরি খাওয়ার ওষুধ। ব্যাসলোফেন নিউরোফ্লেক্স পাথওয়েসের মধ্যে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং ব্লাড ব্রেনের বাধা অতিক্রম করে শিরদাঁড়ার উপর কাজ করে।
অবশ্য ব্যাসলোফেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হল দৃঢ় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, যেমন ওষুধের বাধা-নিষেধ, মাথাঘোরা, দুর্বলতা, প্রভৃতি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন এই ওষুধের ব্যবহার থেকে মানুষের শরীরে এই ওষুধটির কার্যকারিতার প্রতি প্রতিরোধকতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই সব পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও, ব্যাসলোফেন চরম স্প্যাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃৎ ওষুধ। কেবলমাত্র রিহ্যাবিলিটেশন (ফিজিওথেরাপি) পদ্ধতি যথেষ্ট উপকার করতে পারে না।
এই অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনও পথ খোলা আছে কী?
আছে। জরুরি সময়ের জন্য এমন উদ্ভাবনী চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন, যেটি এই সমস্যা সমাধানের জন্য হবে অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি স্প্যাস্টিসিটির মতো অবস্থার নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন এক ইন্ট্রাথেক্যাল পাম্প সিস্টেমের উদ্ভাবন হয়েছে, যেটি মেরুদণ্ডে ওষুধ যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ইন্ট্রাথেক্যাল ব্যাসলোফেন বা ‘আইটিবি’-র প্রয়োগের ফলে ব্যাসলোফেনের প্রতিক্রিয়া সর্বাধিক করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম করে।
‘আইটিবি’ আসলে কী এবং এই রোগের চিকিৎসায় কীভাবে কাজে লাগে?
এই নবতম যন্ত্রটি হল একটি অটোমেটিক পাম্প, রোগীর ত্বকের নীচে লাগানো থাকে। এটি যুক্ত করা থাকে একটি ক্যাথেটারের সঙ্গে, যেটি সোজা পৌঁছোয় মেরুদণ্ডে এবং শেষ হয় ইন্ট্রাথেক্যাল স্পেসে, যেখান থেকে এটি অল্পমাত্রায়, মাইক্রো-ফাংশনে ওষুধ নিষ্ক্রমণ করে সরাসরি মেরুদণ্ডের দিকে।
ওষুধ সরাসরি ইন্ট্রাথেক্যাল স্পেসে দেওয়া হয় বলে সেটি আরও বেশি কার্যকরি বলে প্রমাণিত। কারণ, ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছোয় বলে রোগীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি হয় এবং তিনি ব্যথা থেকে মুক্ত হন। আর এই পাম্পটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে অল্প অল্প পরিমাণে ওষুধ মেরুদণ্ডে সঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছোয়, যেখান থেকে এটি সরাসরি পৌঁছোয় মস্তিষ্কে এবং তার ফলে কেবলমাত্র ওষুধের প্রভাব অধিক মাত্রায় কার্যকরি এবং পেশির সঞ্চালনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া শরীরের অন্যান্য জায়গার উপর থেকে প্রায় সম্পূর্ণ লোপ পায়।
উল্লেখ্য ৫০ ইউজি ইন্ট্রাথেক্যাল ব্যাসলোফেন বোলাস ট্রায়ালের এক ডোজ, স্প্যাস্টিসিটি এবং স্প্যাজম থেকে আরাম দেয় এবং থ্রি পয়েন্টস ডাউন অন অ্যাশওয়ার্থ এবং স্প্যাজম স্কোর করে। রোগীকে তারপরে ইন্ট্রা-অপারেটিভ ফ্লুরোস্কোপিক গাইডেন্সের, অর্থাৎ একটি প্রোগ্রাম করা ইন্ট্রাথেকাল ব্যাসলোফেন (আইটিবি) ইনফিউজন সিস্টেমের অধীনে রাখা হয় এবং প্রতিস্থাপন করা হয়।
সাম্প্রতিকতম ফলো-আপে দেখা যাচ্ছে যে, রোগীর উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে অ্যাশওয়ার্থ স্কেল অফ স্প্যাস্টিসিটি অনুযায়ী। সেইসঙ্গে স্প্যাস্টিসিটি, ক্লোনাস এবং স্প্যাজম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। এছাড়া, এডিএল (অ্যাক্টিভিটিস অফ ডেইলি লিভিং) অর্থাৎ দৈনিক জীবনযাত্রার কাজে এবং কিউওএল (কোয়ালিটি অফ লাইফ), অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত হয় এবং শারীরিক ব্যায়ামে, পেশি চালনার শক্তি বৃদ্ধি পায়।
এই বিরল ধরনের সার্জারি হাজার হাজার অক্ষম স্প্যাস্টিক রোগীদের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক নতুন অবদান, এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছে।
এক সমীক্ষা অনুযায়ী, আইটিবি অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে শুভফল দান করেছে। ফলে ব্যথা হ্রাস পেয়েছে এবং পেশির সঞ্চালনের কাজ এবং নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।