অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে বর-বধূর মাল্যদানের দৃশ্য এখন সাহিত্যের পাতায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এখন বিয়ের নিয়মকানুনেও ওয়েস্টার্ন শব্দ ‘থিম’-এর বাড়বাড়ন্ত বেশ নজর কাড়ছে। মরুভূমির মাঝে, আকাশে প্লেনের মধ্যে, প্রস্তরখচিত দুর্গে রহস্য রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে নিতে, নদীতে ভাসমান ক্রুইজ ভাড়া করে নাচ-গান আমোদের মাঝে একটা কাগজে সই। ব্যস আইনত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উপর কোর্টের শীলমোহর পড়ে যাওয়া– এটাই হল এখন আসল বিয়ে।

আগে বিয়ে মানে ছিল আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে ভরা বিয়েবাড়ির মহল। এখন ব্যাবসা চালানোর মতোই বিয়ের সব দায়িত্ব ইভেন্ট ম্যানেজার, ডেকরেটর, ফ্যাশন ডিজাইনার, টেকনিক এক্সপার্ট, বিউটি এক্সপার্ট এবং ম্যারেজ অর্গানাইজারদের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে বর-কনে উভয় পক্ষের ঝাড়া হাত-পা। সবই যেখানে হাইটেক সেখানে বর-কনের সাজে পরিবর্তন আসবে না এমনটা ভাবা উচিত নয়। আধুনিক ট্রেন্ড ফলো করে কনের মেক-আপেও এসেছে সংগত পরিবর্তন।

পিকচার পারফেকশন

 অ্যালবামের পাতায় সাদা-কালো বিয়ের ছবির যুগ কবেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও বর-কনের রঙিন ছবি অ্যালবামের শোভা বৃদ্ধি করেছে। আর এখন তো ডিজিটাল ম্যাটেড অ্যালবাম সঙ্গে হাই ডেফিনেশন ক্যামেরায় তোলা ডিজিটালাইজ বিয়ের ছবি। ছবিতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ডিটেলিংগুলোও চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। বিয়ের স্মৃতি যেখানে সকলের কাছেই আনন্দের, সেখানে আজকের যে কনে, সেও চায় নিজের বিয়ের শৃঙ্গার নিখুঁত ভাবে ধরা পড়ুক ক্যামেরার লেন্সে যা ভবিষ্যতে তাকে সুখস্মৃতিতে ভরিয়ে তুলবে।

মডার্ন চিন্তাধারা

 হেভি, থিক মেক-আপ বেস, গ্লিটর দেওয়া চোখ, ডার্ক মেরুন লিপস্টিক, আউটডেটেড ব্রাইডাল টিপ এবং ভারী বেনারসি (লাল বা মেরুন রঙের) এইসব কিছুই এখন আউট অফ ফ্যাশন। বেশিরভাগই এই স্টাইল থেকে বেরিয়ে নতুন এবং ট্রেন্ডি ফ্যাশনের উপর ঝুঁকছেন।

নিউট্রাল ট্রান্সবেস মেক-আপ

 বিয়ের দিন এখন সকলেই চান ফ্রেশ, গর্জিয়াস লুক এবং নিজের সেই সৌন্দর্যকে সকলের সামনে তুলে ধরতে। অথচ ওভার মেক-আপ এখন আউট ডেটেড। এইক্ষেত্রে নিউট্রাল ট্রান্সবেস মেক-আপ পছন্দের তালিকায় রাখা যেতে পারে। এই মেক-আপ এতটাই সোবার এবং লাইট হয় যে, ত্বকে মিশে গিয়ে ব্রাইড-কে ফ্রেশ রাখে এবং লুকস্ উগ্র করে তোলে না। এছাড়া মুখের ত্বকে কোনও প্রবলেম থাকলে সেটাও ঢাকতে সাহায্য করে। যারা কনে সাজাবার পেশায় আছেন তাদের নিউট্রাল ট্রান্সবেস মেক-আপ খুবই পছন্দ কারণ এটি কনের সৌন্দর্য নিখুঁত করার পাশাপাশি, কনের সাজটাকেও কমপ্লিট করে।

চোখের জন্য নিয়ন কালার

 ব্রাইডাল শাড়ি অথবা লেহেঙ্গায় যেমন লাল, মেরুনের জায়গায় আরও বিভিন্ন রং জায়গা করে নিয়েছে তেমনি আই মেক-আপের জন্য নিয়ন কালারস এখন ফ্যাশনে ইন। নিয়ন রং বলতে ব্রাইট ন্যাচারাল রং বোঝায়। এতে ব্রাইট ইয়েলো, অরেঞ্জ গ্রিন, ফ্লুরোসেন্ট, রুবি রেড, ব্লু, পার্পল, অ্যাকোয়া ব্লু, লেমন গ্রিন, পিংক, ইত্যাদি ভাইব্র্যান্ট রঙের আধিপত্য রয়েছে।

নিয়ন আইশ্যাডোর সঙ্গে চোখকে ডিফাইন করার জন্য আইলাইনার এবং ভলিউমাইজিং মাসকারার সঙ্গে সঙ্গে ফেদারটাচ আর্টিফিশিয়াল আইল্যাশেজ-এরও ব্যবহার করছেন পেশাদারেরা, ব্রাইডকে সাজাতে। বিশেষ করে বিয়ের দিন চোখের সৌন্দর্য অভ্যাগতদের আকর্ষণ করে বই-কি!

হাইলাইটেড চিক বোনস

 হেভিলি ব্লাশড চিক বোনস কনের মেক-আপকে হেভি এবং ড্রামাটিক লুক দেয়। এর সঙ্গে হেভি ব্রোঞ্জার কনের মেক-আপে গ্রে শেড এনে দেয়। সুতরাং এগুলো ব্যবহার না করে পিংক, অরেঞ্জ, ফ্লোরাল সফট শেডস দিয়ে চিক হাইলাইট করলে অনেক বেশি গ্ল্যামারাস করে তোলা যাবে কনের সাজকে।

ডিজাইনার নেল আর্ট

ব্রাইডাল মেক-আপকে কমপ্লিমেন্টস দেওয়ার জন্য থ্রি-ডি নেল আর্ট বা জেল নেল আর্ট খুব ভালো চয়েস।

বাহারি পোশাক

 হেভি জারদৌসি কাজ করা বেনারসি শাড়ির জায়গায় এখন পাটলিপাল্লু কাজের বেনারসির স্টাইল ভালো মার্কেট করে নিয়েছে। ভারী শাড়িতে নড়াচড়ার অসুবিধা তাই হেভি ওয়ার্কের কুঁচি আর আঁচলেই সন্তুষ্ট নতুন কনেরা। শাড়ির বাকি বডি-তে হালকা জড়ির বুটি বা কলকার কাজ। চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ না হতে পারলে মুশকিল। অনেকে আবার শাড়ি পরতেই চাইছেন না। প্রেফার করছেন লেহেঙ্গা যেটা পরা অনেক সহজ, অনায়াশেই ক্যারি করা যায়। মাথায় থাকছে হালকা নেটের ওড়না পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে।

ব্রাইডাল প্যাকেজ

 এখন ছোটো-বড়ো সমস্ত পার্লারে নানা ধরনের এবং নানা বাজেটের প্যাকেজ থাকছে। যে-কেউই নিজের পছন্দমতো এবং বাজেট অনুযায়ী পার্লারগুলিতে গিয়ে প্যাকেজ সিলেক্ট করতে পারেন।

নর্মাল ব্রাইডাল প্যাকেজ

 এই প্যাকেজ মোটামুটি সকলের জন্যই পকেট ফ্রেন্ডলি। সাধারণত কলকাতার নানা পার্লারে পাবেন এই প্যাকেজ। এতে রয়েছে ২ ধরনের ফেসিয়াল (কোথাও একটাই ফেসিয়াল থাকে), ফেস ও নেক ব্লিচ, ম্যানিকিওর, প্যাডিকিওর, ফুল বডি টক্সিং, হেয়ার স্পা, রুটিন ওয়ার্ক (আইব্রো, আপার লিপ, ফোরহেড) এবং ওয়াটার প্রুফ মেক-আপ। সঙ্গে একটা মেক-আপ ফ্রি দেওয়া হয়। যদি ত্বকের খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন না থাকে এবং বাজেটও কম রাখতে চান তাহলে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে নর্মাল ব্রাইডাল প্যাকেজের পরিষেবা লাভ করতে পারেন।

স্পেশাল ব্রাইডাল প্যাকেজ

 এই প্যাকেজে রয়েছে ত্বক অনুযায়ী স্পা এবং অরগ্যানিক ফেসিয়ালের ব্যবস্থা, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিওর ও প্যাডিকিওর, বডি মাসাজ, ফুল বডি ব্লিচ এবং ওয়্যাক্স, স্ট্রেস রিমুভার থেরাপি, রুটিন ওয়ার্ক, স্পেশাল হেয়ারডু এবং স্পেশাল ওয়াটার প্রুফ মেক-আপ, বিউটি কেয়ার অ্যাডভাইস। অনেক পার্লার স্পেশাল হোম কেয়ার প্রোডাক্ট-ও দেয়। এই প্যাকেজগুলির মূল্য সাধারণ ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।

এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ

 এই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজন অনুসারে স্কিন, বডি এবং হেয়ার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা। ত্বকের যে-কোনও দাগছোপ, ব্রণ, মেচেতা, হোয়াইট প্যাচ-এর সমস্যার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে ফেস টোনিং ট্রিটমেন্ট, স্পা, ফেসিয়াল, হেয়ার এবং বডি স্পা, কমপ্লিট প্রি ব্রাইডাল ও বিউটি প্যাক। এরমধ্যে ওয়াটারপ্রুফ, লং লাস্টিং মেক-আপ এবং হেয়ার স্টাইল করাবারও সুবিধা রয়েছে। এই ধরনের প্যাকেজের মূল্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেক-আপের মধ্যে হাই ডেফিনেশন বা এয়ারব্রাশ মেক-আপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এগুলো ছাড়াও ব্রাইডাল প্যাকেজে পছন্দমতো কমপ্লিট মেকওভার করানো যেতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে মূল্য কম, বেশি হয়, সার্ভিস কী নিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে টোটাল কত টাকা পড়বে।

গ্ল্যামারাস ঠোঁট

 ট্র্যাডিশনাল মেরুন, ব্লাডরেড লিপস্টিকের বদলে ফুশিয়া পিংক, প্লাম রেড, স্প্যানিশ পিংক, পিচ, রুবি রেড, বারগ্যান্ডি কালারের লিপস্টিক এখন ব্রাইডাল ফ্যাশনে দারুণ ইন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...