সদ্যোজাতরা এমনিতেই খুব কোমল হয়। আপাদমস্তক হয় নরম ও তুলতুলে। আর যদি সময়ের আগে জন্ম নেয়, তাহলে তো ওই শিশুর দেহ তুলনামূলকভাবে আরও বেশি স্পর্শকাতর হবে।
শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অনেকসময় নানা জটিলতার কারণে আগেই প্রসব করাতে হয়। মাতৃগর্ভে ৩৬ সপ্তাহ না থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে চিকিৎসকরা বলে থাকেন– ‘প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি’। এই প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি-র যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি। শিশুর বাবা-মাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে হয় নিয়মিত। শুধু তাই নয়, প্রি-ম্যাচিয়োর বেবিকে বাড়িতে রাখলে বিশেষ কিছু নিয়ম এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
স্তনপান – নবজাতকের জন্য মাতৃদুগ্ধ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, মায়ের বুকের দুধ নবজাতককে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। শুধু তাই নয়, মাতৃদুগ্ধ সন্তানের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক পরিণত হতেও সাহায্য করে। জন্মের পর প্রথম ছয়মাস শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারলে সুফল পাওয়া যায়। আর প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির ক্ষেত্রে তো মাতৃদুগ্ধ পান আবশ্যক এবং এর কোনও বিকল্প নেই।
তাপমাত্রা – তাপমাত্রার ওঠানামা সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলে নবজাতকের উপর। মাতৃগর্ভের তাপমাত্রা এবং বাইরের তাপমাত্রার মধ্যে অনেক তারতম্য। তাই শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে। আর প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির ক্ষেত্রে এই ঠান্ডা লাগার ভয়টা আরও বেশি। কারণ, তাপমাত্রার ওঠানামার তারতম্যের চাপ সহ্য করার মতো ইমিয়ুন সিস্টেম তৈরি হতে সময় লাগে প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির। তাই প্রি-ম্যাচিয়োর বেবিকে ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করার জন্য বেশি যত্ন নিতে হবে মা-কে। যতটা সম্ভব বুকে জাপটে রাখতে হবে প্রি-ম্যাচিয়োর বেবিকে। এতে ওই শিশু মায়ের শরীরের উষ্ণতা পাবে।
নিয়মিত চেক-আপ – প্রি-ম্যাচির বেবি মানেই বাড়তি সতর্কতা। ওকে নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ-এ রাখতে হবে। কারণ, প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির ফুসফুস, চোখ প্রভৃতি স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও হতে পারে এবং তাতে দ্রুত শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটাবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
কোলে তোলার সাবধানতা – সময়ের আগে জন্ম নেওয়া বাচ্চা যেহেতু খুব কোমল শরীরের হয়, তাই তাকে খুব সাবধানে রাখতে হবে। এই সময় ওকে কোলে তোলার কৌশলও রপ্ত করতে হবে। কারণ, প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির হাড় শক্ত হয় না এবং হার্ট ও লাং খুব দুর্বল থাকে। তাই শিশুটি যাতে কোনওভাবে চোট না পায়, সেই খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে কোলে তোলার কৌশল। আর কোনওভাবেই ওই শিশুকে কোলে তুলে জোরে জোরে দোলানো যাবে না। কারণ, বেশি জোরে দোলালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
শব্দদূষণ কমান – বেশি হই-হট্টগোল, চিৎকার প্রভৃতি থেকে দূরে রাখতে হবে প্রি-ম্যাচিয়োর বেবিকে। কারণ, যে-কোনও শব্দদূষণ প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি-র ক্ষতি করতে পারে। মস্তিষ্ক এবং হার্ট-এ শব্দদূষণের কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে রাখুন বেবিটিকে।
ত্বক এবং হাড়ের যত্ন – প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির শরীরের সমস্ত হাড় যেমন নরম থাকে, তেমনই ত্বকও থাকে কোমল এবং সংবেদনশীল। তাই, হাড় শক্ত করার জন্য এবং ত্বককে শুষ্কতা থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতিদিন বেবি-অয়েল মাখাতে হবে শিশুকে। পায়ের আঙুল থেকে ঘাড় পর্যন্ত ধীরে-ধীরে শরীরের দু’দিক ভালো-ভাবে মালিশ করুন প্রতিদিন অন্তত পনেরো মিনিট।
বিশুদ্ধ হাওয়ার প্রয়োজন – প্রি-ম্যাচিয়োর বেবির হার্ট খুব দুর্বল থাকে। তাই, হার্ট সচল রাখার জন্য অফুরন্ত অক্সিজেন-এর প্রয়োজন। একমাত্র বিশুদ্ধ বাতাসই দিতে পারে এই অক্সিজেন। তাই, শিশুকে ধুলো-ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন এবং প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে দিন। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, শিশুর ধারে কাছে ধূমপান করবেন না এবং ধূমপানের পর কোনওভাবে শিশুর মুখের কাছাকাছি যাতে কেউ মুখও না নেয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে মা-বাবাকে।
বাড়তি সতর্কতা
১) শিশু হাত-পা ছুড়ছে কিনা দেখুন। খিদে পেলে কাঁদছে কিনা তাও দেখা উচিত। যদি এই স্বাভাবিক বিষয়গুলির ব্যতিক্রম হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
২) পরিষ্কার জায়গায় এবং ভালো ভাবে কাচা ধোয়া নরম বিছানা-বালিশে, শোয়ান শিশুকে।
৩) মশারি ছাড়া শোয়াবেন না।
৪) সপ্তাহে একদিন নর্মাল মেডিকেল চেক-আপ জরুরি।