এক আকাশ রোদের মাঝে, এখনও হিমেল হাওয়ার পরশ। সকাল আর ভোর রাতে একটা ঠান্ডা-ঠান্ডা আমেজ। ছড়ানো হৈমন্তির আঁচলে ঘরছাড়ার আশকারা। এই বসন্তে প্রকৃতির রূপে পাগল হতে কোথায় যাই? মন বলল, চলো পরেশনাথ।

আমরা তো পুণ্যার্থী নই, তবে কেন পরেশনাথ? অতশত বুঝি না। মন চায় নতুন কিছু দেখতে। নতুন কিছু পেতে। নতুনের প্রত্যাশাতেই তো বেঁচে থাকা। বসন্ত মানেই নতুনের আগমন। বসন্ত মানেই রঙের বাহার। বসন্ত মানেই মনের কথা প্রাণ খুলে বলা এবং শোনাও।

আসানসোল ছাড়াতেই চোখ চলে গেল জানলার বাইরে। লালে লালে প্রকৃতি রঙিন। পলাশ আর শিমুল গাছগুলো দেখছি, আর মনে হচ্ছে ট্রেন থেকে ছুটে চলে যাই। মাঠে মাঠে ছুটে চলি রঙের পরশ পেতে। সহযাত্রী বন্ধু গান ধরেছেন, ‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল।’ ট্রেনের ধাতব আওয়াজে গানটা ভেঙে ভেঙে মনের গভীরে অনুরণন ছড়িয়ে দিল।

জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস-এ চলেছি পরেশনাথ। সঙ্গে ভ্রমণসঙ্গীরা। নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা পরে পৌঁছোলাম পরেশনাথ স্টেশনে। স্টেশন চত্বরেই ট্রেকার স্ট্যান্ড। এসে শুনলাম, আজ আর সার্ভিস ট্রেকার মিলবে না। সবে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। অগত্যা একটা মারুতি ভাড়া করে রওনা দিলাম।

আমাদের ডেস্টিনেশন মধুবন। পথের দূরত্ব পঁচিশ কিমি। মধুবনই পরেশনাথ পাহাড়ে ওঠার বেস ক্যাম্প। মাত্র মিনিট পঁয়তাল্লিশ-এর যাত্রা পথ। তবে রাস্তা মোটেই ভালো নয়। যাচ্ছেতাই। গা-গতর থেঁথলে গেল। যাত্রাপথের বাড়তি আশঙ্কা ছিল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে। পথ চলতি যাদেরই দেখছি রাতের আঁধারে, মনে হচ্ছে এরাই বোধহয় চড়াও হবে আমাদের উপর। যাক শেষ পর্যন্ত আশঙ্কা জয় করে, সাফল্যের হাসি মেখে এলাম মধুবন। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। রাত-ঠিকানা নিলাম ‘ভোমিরাজ ভবন’ ধর্মশালায়।

মধুবনের বাজার বেশ জমজমাট। অনেকটা অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো মার্কেটের মধ্যেই দোকানপাট, ব্যাংক, ধর্মশালা। দিগম্বর আর শ্বেতাম্বর ধর্মশালা মিলিয়ে প্রায় ডজন খানেকের উপর। প্রতিটিতে রুমের সংখ্যা পর্যাপ্ত। প্রতিটি ধর্মশালার ভিতরেই মিলবে একটি করে জৈন মন্দির। জানা গেল শ্রাবণ মাসেই তীর্থযাত্রীর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি হয় এখানে।

২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ। তিনি ১০০ বছর বয়সে শ্রাবণ মাসের শুক্লাষ্টমীতে এই পাহাড়েই এসে দেহ রাখেন। তাঁর নামানুসারে এই পাহাড়ের নাম হয় পরেশনাথ পাহাড়।তাছাড়া ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে মহাবীর ছাড়া সকলেই তপস্যাস্থল হিসাবে এই পাহাড়কেই বেছে নেন। সেই জন্যই জৈনদের কাছে এই স্থানের মাহাত্ম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাতে ধর্মশালায় মিলল না খাবার। জানা গেল, জৈন ধর্মাবলম্বীরা সূর্যাস্তের পর আর আহার করেন না। অগত্যা বাইরের হোটেলই ভরসা। রুটি, এঁচোড়ের তরকারি আর মিষ্টি-সহ ডিনার সারা হল। সারা দিনের জার্নিতে ক্লান্ত সকলেই। তাই শোওয়ার সাথে সাথে ঘুম আসতে দেরি হল না।

সময় মেনেই অ্যালার্ম বেজে উঠল। রাত তখন আড়াইটে। ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম। আবার চোখ কচলে শুয়েও পড়লাম, ঘুমের রেশ টেনে। ইতিমধ্যে ঘুমকে তুড়ি মেরে প্রত্যেকেই উঠে পড়েছে। প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে অনেকটা। শেষমেশ ঘুমের জনগণমন বাজিয়ে আমাকেও অতিকষ্টে উঠতে হল। মুখ-হাত ধোওয়ার পর প্রাতরাশ।

প্রত্যেকে এক গেলাস করে ছাতুর শরবত খেয়ে নিলাম। যেন কুস্তির আসরে নামতে যাচ্ছি। রাস্তার রসদের জন্য নেওয়া হল কিছু ড্রাই ফুড। ইষ্টনাম স্মরণ করে রওনা দিলাম। ঘড়িতে তখন ভোর চারটে। কেউ কেউ সঙ্গে নিলেন একটা করে লাঠি। পথ চলার সুবিধার্থে।

Travel Destination Pareshnath

বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। কেবল ঠক-ঠক লাঠির কোরাস আওয়াজ। দল বেঁধে তীর্থযাত্রীরা চলেছে পাহাড় পরিক্রমায়। সেই অন্ধকার পাহাড়ি পথে সঙ্গী হলাম আমরাও।লোকালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে এসেছি অনেক আগেই। অন্ধকার ঠেলে এগোচ্ছি। পথ ক্রমশ চড়াই হচ্ছে। আকাশে দ্বিতীয়ার চাঁদ। সঙ্গে জানা-অজানা হাজার নক্ষত্র। চেনা গণ্ডিতে কালপুরুষ, সপ্তর্ষি মণ্ডল। উজ্জ্বল শুকতারাটা যেন, আকাশের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউ। বাতাসে শীতল আমেজ। রাস্তার দু’ধারে পাতাঝরা অসংখ্য গাছ। তাদের নিবিড় উপস্থিতি অন্ধকারের মধ্যে স্পষ্ট অনুভূত হচ্ছে। বইছে ঝিরঝিরে বসন্তের বাতাস। ঠান্ডা আমেজেও চড়াই ভাঙতে গায়ে জমেছে ঘাম। বোঝাই যাচ্ছে, যাত্রাপথ যেমন পা খুলে নেওয়া উতরাই, তেমনি হৃদয়বিদারক চড়াই।

আধো অন্ধকারের মধ্যেই এলাম কালিকুণ্ড মন্দির শ্রেনির কাছে। চলার বিরতি টেনে বাঁধানো সিমেন্টের সিটে কিছুটা বিশ্রাম। কিছুক্ষণ পর আবার চলা।

১৩৬৬ মিটার উচ্চতায় ঝাড়খণ্ডের সর্বোচ্চ পাহাড় এই পরেশনাথ। যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছোতে ভাঙতে হবে ৯ কিলোমিটার পথ। ফিরেও আসতে হবে এই সম দূরত্বের পথ ধরে। আর তীর্থঙ্করদের সমস্ত মন্দিরগুলি স্পর্শ করতে আরও বাড়তি ৯ কিমি পথ সংযোজন। অতএব সর্বমোট ২৭ কিমি পাহাড়ি পথ পরিক্রমণ। আর সময়ের নিরিখে তা দশ-বারো ঘন্টার ব্যাপার। যার জন্যই এই ভোররাতে পথে নামা।

এই অচেনা পথে আমরা চার সঙ্গী। যেন নিরুদ্দেশের দিকে এগিয়ে চলেছি। কিলোমিটার দুয়েক যাওয়ার পরই পাহাড়ি পথের ধারে দেখলাম সূর্যোদয়। রঙের হোলি ছড়িয়ে উঠল সূর্যদেব। মুহূর্তের মধ্যে সরে গেল অন্ধকারের আড়াল। অবারিত হল সামনের দৃষ্টিপথ। রবি রশ্মির স্পর্শে অন্ধকার জঙ্গল পেল হরিৎবর্ণ। সবুজ জড়ানো পাহাড়শ্রেণি হল দৃশ্যমান। এ দলে প্রবীণরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতএব তাদের সঙ্গ দিয়েই চলতে হচ্ছে। ফলে মাঝে মাঝে চলার গতি হচ্ছে মন্থর। অবশ্য দলে চলার নিয়মও তাই।

পথ পার্শ্বে নজরে পড়ল এক চায়ের দোকান। যেন বাস্তবের ব্যস্ততা হারিয়ে একাকী আপন মনে ঝিমোচ্ছে। ক্লান্ত শরীরকে এলিয়ে দিলাম, পেতে রাখা খাটিয়ায়। অর্ডার দেওয়া হল চায়ের। ধূমায়িত চায়ের গেলাস হাতে আরাম চুমুক। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্রাট মনে হল সেই মুহূর্তে নিজেদেরকে। বুঝলাম, বিশ্রাম ট্রেকিং-এরই অঙ্গ।

Pareshnath Hills

অরণ্য চিরে কখনও আঁকাবাঁকা পথ। কখনও বা চড়াই উতরাই-এর পালা বদল। চোখ তুললেই পাহাড়, পাহাড় আর পাহাড়। আরও দূরে ফিরোজা নীল আকাশ। যেন মনে হচ্ছে মহাপ্রস্থানের পথে চলেছি। সাড়ে পাঁচ কিমি পথ চলার পর দেখা মিলল শীর্ষে গড়া পরেশনাথ মন্দিরের। দূর থেকে মনে হচ্ছে নীল আকাশের গায়ে সাদা রঙের একটা স্টিকার সেঁটে দিয়েছে কেউ। অপূর্ব লাগছিল সে দৃশ্য দেখতে। সেই সাথে মনে মনে ভাবছিলাম, শেষ চড়াইটা ভাঙতে পারব তো!

পায়ে চলা কংক্রিটের পথটা কিন্তু যথেষ্ট চওড়া। পদযুগলের উপর বিশ্বাস যারা হারিয়েছেন, তারা চলেছেন ডুলিতে চড়ে। তবে যাঁরা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অশক্ত, অসমর্থ, ডুলিযাত্রির দলে তাঁরাই বেশি। ডুলি আবার দু’ধরনের। অপেক্ষাকৃত হালকাযাত্রীদের দু’জনের ডুলি। আর ভুঁড়িসর্বস্ব মানুষদের চারজনের ডুলি। কেদার বা যমুনোত্রীর মতো এখানেও মাঝপথে ডুলিওয়ালারা পীড়াপীড়ি করছেন যাত্রীদের। এপথে অবশ্য ঘোড়া বা খচ্চরের ব্যাবসা জাঁকিয়ে বসেনি। তাই রাস্তাঘাটও অপরিচ্ছন্ন নয়।

মিশ্র প্রকৃতির জঙ্গল রাস্তার দু’পাশ জুড়ে। নিঝুম জংলি পথ।

চেনা-অচেনা পাখির দেখা মিলছে পথ চলতি প্রকৃতিতে। রঙের ফুলঝুরি ওড়ানো অজস্র প্রজাপতিও চোখকে দিচ্ছে আরাম। পথপার্শ্বে অযত্নে বেড়ে ওঠা, প্রস্ফুটিত কাঞ্চন, শিমুল ও পলাশের যে কী রূপ! তা তো ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। অরণ্যপ্রকৃতির রূপে আমরা তখন পাগল। এই রূপের পরশ পেতেই চলার পথে ছেদ পড়ছিল বারে বারে।

চলার পথে এক জায়গায় দেখলাম, একদল হনুমান সংসার পেতেছে এ-গাছ ও-গাছ মিলিয়ে। সঙ্গে তাদের খুদে চ্যাম্পিয়নরাও। আমাদের উপস্থিতি তাদের পারিবারিক নিরাপত্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করল। রাস্তায় অনেক ভিখারি দেখলাম। স্থানীয় মানুষজন অভাবের তাড়নায় তীর্থযাত্রীদের কাছে ভিক্ষার পাত্র পেতে বসে আছে। কিলোমিটার দুয়েক যাওয়ার পর আর একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম।

ঘড়িতে এখন বেলা দশটা। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে চোপতাকুণ্ড নদীর সন্নিকটে উপস্থিত হলাম। পেটে সলিড ফুড কিছু এখনও পড়েনি। ঝোলায় সঙ্গে আনা মুড়ির কথা মনে পড়ে গেল। শসা, বাদাম, চানাচুর-সহ যথেষ্ট রেলিশ করেই মাখা হল মুড়ি। ঘাস জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়লাম প্রত্যেকে। খুচরো কথাবার্তার ফাঁকে চলল টিফিনপর্ব। এখানকার জলও কী মিষ্টি। একপেট খেয়েও নিলাম ঢকঢক করে। তীর্থযাত্রীদের অনেকেই পরিশ্রান্ত হয়ে এখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিশ্রামের পর, আবার পথে নামা।

এখন আমরা অনেক ওপরে উঠে এসেছি। যেন এই মুহূর্তে আমরা পাহাড়ি গ্যালারির দর্শক। সামনে সবুজে জড়ানো নাতিদীর্ঘ একাধিক পাহাড়শ্রেণি। আর নিখুঁত নীল আকাশ নিয়ে প্রকৃতির এক রঙিন ক্যানভাস। বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু গন্তব্য এখনও অনেকটাই। প্রায় দুই কিমি মতো পথ বাকি। আমার পথ চলাতেই আনন্দ।

দলের একজন বেশ ক্লান্ত। এখান থেকেই তিনি ডুলি ধরে নেমে যাবেন।কিন্তু এতদুর এসে, তাঁকে ছাড়া আমরা শেষ ডেস্টিনেশনে যেতে আদৗ রাজি ছিলাম না। ফলে নানান ভাবে বোঝাতে হল। নগ্নপদের অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হল, খালি পায়ে ওরা যাচ্ছে কীভাবে?

চলতি পথে কয়েকজন ভিন রাজ্যের যুবক-যুবতির দেখে অযাচিত ভাবে প্রশ্ন করলাম, কোথা থেকে এসেছেন? তার উত্তরে জানা গেল, তারা কেউ এসেছেন কর্ণাটকের প্রত্যন্ত কোনও গ্রাম থেকে। কেউবা এসেছেন গুজরাতের ভেটদ্বারকার মাটি থেকে। তাদের সঙ্গে আলাপ মনে এনে দিল, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এক সুন্দর বাতাবরণ। তাদের দেখে আমরা সবাই আবার মনের জোরে হাঁটা শুরু করলাম।

চলার বিরতি টেনে এবার যেখানে পৌঁছোলাম, সেটা একটা বড়ো পাহাড়ি ঝুল বারান্দা বলা যায়। আবার এখান থেকে একাধিক তীর্থঙ্করদের মন্দির যাওয়ার জংশন পথ বললেও, ভুল বলা হবে না। এখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে ছোটো বড়ো মিলিয়ে বেশ কয়েকটা মন্দির। হাতের নাগালের মধ্যে অবশ্য নেই জলমন্দির। তা দেখতে নামতে হবে উতরাই-এর সিঁড়ি পথে। একাধিক তীর্থঙ্কর মুর্তি নিয়েই জলমন্দির।

এখানে উল্লেখ্য, পরেশনাথ পাহাড়ে অন্যান্য ২৪টি মন্দিরই বিগ্রহহীন। সেসব মন্দিরে মেলে, তীর্থঙ্করদের পাথর খোদিত পদচিহ্ন। আরও দুই তীর্থঙ্করের নামাঙ্কিত মন্দির দেখতে এক কিলোমিটার করে দু’দুবার চড়াই ভাঙলাম। রাস্তায় দেখলাম, বেশ কিছু জৈন তীর্থঙ্কর সমিতির স্বেচ্ছাসেবী। ‘প্রকৃতি সুরক্ষা সচেতন’-এর অঙ্গ হিসাবে এই সদস্যরা প্লাস্টিক কুড়োনোর কাজে ব্যস্ত। এপথে পর্যটক বা পুণ্যার্থীরা যাতায়াতের সময় বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে যত্রতত্র প্লাস্টিক প্যাকেট ফেলেন। অবশ্যই তীর্থযাত্রীদের এ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করা দরকার।

Destination Pareshnath

এবার শেষ প্রাণান্তকর ট্রেকপথ। এই যাত্রাপথের শেষ বিন্দু অথবা বলা যায় সর্বোচ্চ চুড়াতেই পরেশনাথের মেন মন্দির। এই পথ দ্বিমুখী। এক এবড়ো খেবড়ো পাথুরে পথ। অন্যটা তুলনামূলক মসৃণ ও চওড়া। কিন্তু অনেকটাই ঘুরপথে। বীরবিক্রমে আমরা বেছে নিলাম দুর্গম পথই। কিছুটা চলার পর অবশ্য বুঝলাম দুটো পথই মিশেছে একই পথে। চলতি পথে গাছপালার ফাঁক ফোকরে ধরা দিচ্ছে শীর্ষ মন্দির। যত কাছাকাছি আসছি, মন্দিরের ব্যাপ্তি ধরা পড়ছে সুন্দর ভাবে।

নীল আকাশের বুকে শ্বেতশুভ্র মন্দির। যেন মেঘের মতো ভাসছে। এই দৃশ্য দেখে আমরা অভিভূত। আনন্দে কথাই সরছে না মুখ দিয়ে। আর তো সামান্য পথ। শেষ চড়াইটা ভাঙতে আমরা সময় নিলাম। পড়ে থাকা এক পাথরের চাতালে অগোছালো ভাবে বসেও পড়লাম প্রত্যেকে। রোদের তাপে বেলা বাড়ার ইঙ্গিত। বিরতি শেষে পুনরায় চড়াই ভাঙতে থাকি।

শেষপর্যন্ত চলে এসেছি পরেশনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। মন্দিরাভিমুখী পাহাড়ি পথ। সিঁড়ির দুদিকে বহু দোকানপাট। বিকিকিনির তালিকায় পুজোর ডালা থেকে খাদ্যসামগ্রী– বাদ নেই কিছুই। দোকানের সারি শেষ হয়েছে খাড়াই সিঁড়ির সামনে। সাজানো

কংক্রিটের ধাপ শেষে ২৩তম তীর্থঙ্করের মন্দির। না আর কোনও কষ্ট নেই। সিঁড়ি ভাঙছি আর ভাবছি এইসব দু’চোখ ভরে দেখতেই তো এত কষ্ট করে আসা।মন্দিরকে ভিউ পয়েন্টে রেখে ফটো সেশন পর্ব চলল কিছু সময়। মন্দির চত্বর থেকে দু’চোখ ভরে দেখলাম পাহাড়ি প্রকৃতি। শেষে প্রবেশ করলাম মন্দিরে।

মন্দির অভ্যন্তরে ফুল ও ধূপের সৌরভ মনে এনে দিল এক পরম শান্তি। এ মন্দিরও বিগ্রহহীন। বদলে পাথরের বেদিতে বিরাজমান কষ্টি পাথরে খোদিত পরেশনাথ স্বামীর চরণচিহ্ন।মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় প্রায় অন্ধকার পরিবেশটা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বসে রইলাম বেশ কিছুটা সময়। এই ভাবগম্ভীর পরিবেশ ছেড়ে আসতেই ইচ্ছা করছিল না। এই মুহূর্তে কী পেয়েছি, আর কী পাইনি– তার হিসাব মেলাতে মন চাইছিল না একদমই। বরং এক শাশ্বত তীর্থক্ষেত্রে পৗঁছোনোর পরিতৃপ্তি তখন প্রত্যেকের চোখেমুখে পরিস্ফুট।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...